বিশ্বব্যাপী মহাবিপর্যয়ে নেমেছে করোনা ভাইরাস। চীনকে মৃত্যুপুরী বানিয়েছে। এবার ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে । এরইমধ্যে ইতালিতে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ভাইরাসটি। অথচ, এখনও এর নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক বের করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। ঠিক এই মুহূর্তে ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সফল’ চীনা মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে আশা জাগানিয়া তথ্য।
চীন বলছে, জাপানের একটি ওষুধ আছে। নাম ‘ফাবিপিরাভির’। উদ্ভাবন হয়েছিল ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য। সেটি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কার্যকর। এর আগে গত ১৮ মার্চ জাপানি সংবাদমাধ্যম বিষয়টি সামনে আনে। একইসঙ্গে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানও এ বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করেছে।
এদিকে সবথেকে আশার খবর এই যে ,এই ‘ফাবিপিরাভির’ ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন ।ভেরিটাস ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি থেকে উৎপাদনের অনুমোদন পাওয়া এই প্রাণরক্ষাকারি ওষুধের বাণিজ্যিক নাম দেওয়া হয়েছে ভেরিগান ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভেরিটাস ফার্মাসিটিক্যাল এর পরিচালক প্রফেসর ডাঃ হাবিব মিল্লাত জানান, জাপানি এন্টি-ভাইরাল এই ওষুধ মরনঘাতি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সমপূর্ন কার্যকর তা ইতিমধ্যে প্রমানিত হয়েছে । ওষুধ প্রশাসন এই ওধধ উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে এবং শিগ্রহী এই ওষুধ বাজারে আসবে এবং এর মূল্য নাগালের মধ্যেই থাকবে।
উল্লেখ্য যে, ফুজিফিল্ম তোয়ামা ২০১৪ সালে ফাবিপিরাভির নামের ওষুধটি প্রস্তুত করে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে করোনা আক্রান্তদের ওপর এটি প্রয়োগ করছে জাপান। মঙ্গলবার চীনের ঘোষণার পর বুধবার টোকিওতে ফুজিফিল্মের শেয়ারের দাম ১৫ দশমিক চার শতাংশ বেড়েছে।
চীনের উহান ও শেনজেন হাসপাতালের দুইশ’ রোগীর ওপর ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, যেসব রোগী ওষুধটি গ্রহণ করেছেন তারা তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে ভাইরাসমুক্ত হয়েছেন। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণগুলোও কমতে দেখা গেছে তাদের মধ্যে।
এর আগে চীনের জাতীয় বায়োটেকনোলজি উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক ঝান জিনমিং বলেন, ফাবিপিরাভির গ্রহণ করা রোগীরা চারদিনের মধ্যে ভাইরাসমুক্ত হয়েছেন। ওষুধটিতে তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
উহানের আরেকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে ফাবিপিরাভির নিয়ে চিকিৎসা পাওয়া রোগীরা গড়ে আড়াই দিনের মধ্যে জ্বর থেকে মুক্তি পেয়েছেন। অন্য রোগীদের ক্ষেত্রে তাতে সময় লেগেছে চার দশমিক দুই দিন। এছাড়া চার দশমিক ছয় দিনের মধ্যে কাশির লক্ষণের উন্নতি ঘটেছে ফাবিপিরাভির নেওয়া রোগীদের। অন্য রোগীদের সেখানে সময় লেগেছে আরও এক দশমিক চার দিন বেশি।
ফাবিপিরাভির নেওয়া রোগীদের মধ্যে আট দশমিক দুই শতাংশের শ্বাসপ্রশ্বাসে সহায়তার দরকার পড়েছে। যেখানে অন্য রোগীদের মধ্যে ১৭ দশমিক এক শতাংশকে বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে এই সহায়তা দিতে হয়েছে।
ওষুধটি কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ ক্লিনিক্যাল পরিসংখ্যান না পাওয়ায় তা আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ কোরিয়ার খাদ্য ও ওষুধ নিরাপত্তা মন্ত্রণলায়। এই সপ্তাহে দেশটির বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ জানায়, সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চীনা কোম্পানিগুলো যদি ব্যাপকভাবে ফাবিপিরাভির উৎপাদন শুরু করে তাহলে ফুজিফিল্ম কিভাবে লাভবান হবে তা এখনও পরিস্কার নয়। তারপরও বাড়ছে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম। কোম্পানিটির এক মুখপাত্র বলেন, চীনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সঙ্গে তাদের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। বর্তমানে তারা চীনা দাবি পর্যালোচনা করছেন। ফাবিপিরাভির নিয়ে ২০১৬ সালে চীনের ঝেজিয়াং হিউস্যান ফার্মাসিউটিক্যালের সঙ্গে পেটেন্ট লাইসেন্স চুক্তি করে ফুজিফিল্ম। তবে ওই মুখপাত্র জানান, গত বছর ওই চুক্তি বাতিল হয়েছে। তবে উভয়পক্ষ এখনও ‘সহযোগিতামূলক সম্পর্ক’ বজায় রেখেছে বলে জানান তিনি।
তবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে ওষুধটি তৈরির আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাওয়ার দাবি করেছে চীনা কোম্পানিটি। তারা বলছে, ওষুধটির একটি জেনেরিক ভার্সন ব্যাপক পরিমাণে উৎপাদনে প্রস্তুত তারা।
জাপানে ফুজিফিল্মের ফাবিপিরাভির-এর পেটেন্ট এখনও বৈধ রয়েছে। তবে চীনের বস্তুগত প্যাটেন্ট গত বছর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বলে জানান ফুজিফিল্মের ওই মুখপাত্র। আর এর মধ্য দিয়ে ওষুধটির জেনেরিক ভার্সন তৈরির সুযোগ পাবে চীনা কোম্পানি ঝেজিয়াং হিউসান।
ক্লিনিক্যাল গবেষণার জন্য জাপানের বিভিন্ন হাসপাতালে ওষুধটি সরবরাহ করছে ফুজিফিল্ম। এছাড়া জাপানে নিজেরাও ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে কোম্পানিটি। মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এই গবেষণা। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এর ফলাফল পাওয়া যাবে।