আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিশ্ব বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করল জাতিসংঘ। দুর্ভিক্ষ এড়াতে সদস্য দেশগুলোকে সম্মিলিতভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।
ডব্লিউএফপির বরাতে সিএনএন জানায়, বিশ্বের প্রায় ৩৬টি দেশ দুর্ভিক্ষে সবচেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। এর মধ্যে ১০টি দেশের প্রায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষ এখনই অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।
মঙ্গলবার, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ডাব্লিউএফপি এর নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বেসলি বলেন, ‘কোভিড-১৯ দুর্ভোগের পাশাপাশি বিশ্ব এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। কঠিন বাস্তবতা হলো, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর চাইতেও বেশি মানুষ খাদ্যের অভাবে মারা যেতে পারে।’
দুর্ভিক্ষ এড়াতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরোধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, তেল বাজারে দরপতনসহ বিভিন্ন কারণে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
মঙ্গলবার, সংস্থাটি জানায়, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৮২ কোটি ১০ লাখ মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণায় রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারে।
সংস্থাটি এই সপ্তাহে প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্টে বিশ্বের ৫৫ দেশ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছে বলে চিহ্নিত করেছে। দুর্বল জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য দেশগুলো করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতেও অক্ষম বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘এই দেশগুলো “জীবন না জীবিকা”- এই দুইয়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়বে। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে গিয়ে ঘরবন্দি করে রাখা জনগণ খাদ্যাভাবে মারা যেতে পারে।’
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১০টি দেশকে চিহ্নিত করেছে ডাব্লিউএফপি। দেশগুলো হলো—ইয়েমেন, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, আফগানিস্তান, ভেনেজুয়েলা, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সিরিয়া, নাইজেরিয়া এবং হাইতি। দুর্বল জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে করোনাভাইরাসের কম প্রার্দুভাব হলেও তা সামাল দিতে হিমশিম খাবে এই দেশগুলো।
বেসলি বলেন, ‘জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে এখনই দুর্ভিক্ষ এড়ানোর পরিকল্পনা করতে হবে। দুর্ভিক্ষ এখনো শুরু হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতের ব্যাপারে আমরা সবাইকে সতর্ক করতে চাই। যদি এখনই আমরা ব্যবস্থা না নেই, তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সত্য কথা বলতে, আমাদের হাতে সময় নেই। তাই বিশ্বকে বুদ্ধি ও কৌশলের সঙ্গে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় করোনা মহামারির কারণে খাদ্য ও মানবিক সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।’