মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে জামায়াতে ইসলামী থেকে বেরিয়ে আসা অংশটি নতুন দল নিয়ে রাজনীতিতে আসছে। আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবিপি) নামে দলের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন এর আয়োজকরা।
দলটির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য নতুন ধারার দল গঠন করে ভিন্নধারার রাজনীতি উপহার দেওয়া। আগামীতে তারা চমক দেবেন। জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীসহ অনেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, পরামর্শও দিচ্ছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রগতিশীল চিন্তাধারার ডান-বাম ঘরানার মানুষরাও সঙ্গে রয়েছেন। জামায়াতের বর্তমান নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ বড় একটি অংশকে নতুন দলে দেখা যেতে পারে। ফলে জামায়াত বড় ধরনের ভাঙনের কবলে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নতুন দলটির মুখ্য নেতৃত্বে কে থাকছেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদিও জামায়াত থেকে পদত্যাগী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের নাম আলোচনায় আছে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত আবদুর রাজ্জাক গতকাল মঙ্গলবার টেলিফোনে বলেন, আমি বিভিন্নভাবে তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি। নতুন দলে আমি থাকছি কিনা- নতুন দল ও কমিটি ঘোষণা হলেই দেখতে পাবেন। অপেক্ষায় থাকুন।
গত বছরের এপ্রিলে জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসা নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ‘জনআকাক্সক্ষার বাংলাদেশ’ নামের নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠন করেছিলেন। এ মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক মজিবুর রহমান মঞ্জু গতকাল বলেন, শনিবার সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হবে নতুন দলের নাম। সেখানে দলের কর্মসূচি ও আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করা হবে। আহ্বায়ক কমিটি ১৩০ সদস্যের হতে পারে। এই কমিটি দলের গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করবে এবং আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের সব জেলা কমিটি গঠন করবে। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের নতুন নেতৃত্ব আসবে।
নতুন দলের নাম ও অন্য কোনো দলের নেতাকর্মীরা যোগ দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন দলের নামটা চমক হিসেবে থাক। তবে আপনাদের বলে রাখি জামায়াতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, পরামর্শও দিচ্ছেন। বিএনপি-বাম এবং সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দল ঘোষণা হলে, করোনা পরিস্থিতি ঠিক হলে অনেককেই আমাদের দলে দেখতে পাবেন।
গত সোমবার নতুন দলের নাম ঘোষণা উপলক্ষে জনআকাক্সক্ষার সেগুনবাগিচার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেন নেতারা। এই বৈঠকেই শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে দলের নাম ঘোষণার কথা চূড়ান্ত করা হয়।
সাবেক সচিব এএফএম সোলাইমান চৌধূরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জনআকাক্সক্ষার প্রধান সমন্বয়ক মজিবুর রহমান মন্জু, কেন্দ্রীয় সংগঠক অধ্যাপক ডা. মেজর (অব) ওহাব মিনার, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, ব্যারিস্টার যুবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া, যুবনেতা সাজ্জাদ হোসাইন, খালিদ হাসান, আনোয়ার সাদাত টুটুল, আমিনুল ইসলাম এফসিএ, এসএম আব্দুর রহমান, ডিএইচ মারুফ, ওবায়দুল্লাহ মামুন, সাঈদ নোমান, আমজাদ হুসেইন, আব্দুল্লাহ আল হাসান প্রমুখ।
দলে সংস্কার এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা না চাওয়ায় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রাজ্জাক জামায়াতে ইসলামী থকে পদত্যাগ করেন। তখন তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকার কথা বলেছিলেন। যদিও শুভাকাক্সক্ষী ও সমর্থকদের অনুরোধে তিনি মত পাল্টেছেন বলে জানা গেছে। ওই সময় রাজ্জাকের অবস্থানকে সমর্থন করে জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন শিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান। পরে তাকে সমন্বয়ক করে ‘জনআকাক্সক্ষার বাংলাদেশ’ গঠন করা হয়।
রাজ্জাকের পদত্যাগ এবং মুজিবুরকে বহিষ্কারের প্রেক্ষাপটে জামায়াত ঘোষণা দিয়েছিল নতুন নামে দল করার। এ লক্ষ্যে জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটিও করা হয়েছে বলে তখন এক সাংগঠনিক নির্দেশনায় নেতাকর্মীদের জানিয়েছিল জামায়াত।
কিন্তু এক বছর পার হলেও নতুন নামে দল হয়নি। এর মধ্যে গত বছর শফিকুর রহমান লন্ডন সফর করেন, সেখানে দলীয় সংহতি রক্ষায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পাশাপাশি আবদুর রাজ্জাক যাতে নতুন উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হন, সে জন্য তাকে অনুরোধ করেন। শফিকুর এখন জামায়াতের আমির।
জনআকাক্সক্ষার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, শফিকুরের সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। রাজ্জাক যুক্তরাজ্য ও ইউরোপসহ যেসব দেশে জামায়াতের ভালো সংগঠন আছে, সেখানে জনআকাক্সক্ষাকে সংগঠিত করতে সহায়তা করছেন। ইতোমধ্যে নতুন দলের জন্য লন্ডনে জামায়াত ঘরানার তিনজনকে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, জনআকাক্সক্ষার নেতাদের লক্ষ্য জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বশীলদের নতুন দলে যুক্ত করা। ইতোমধ্যে নতুন দলের উদ্যোক্তারা দেশের ৪৫ জেলা সফর করেছেন। ১৫০টি সভা-সেমিনার করেছেন।