দেশে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। আক্রান্ত ও মৃতের অর্ধেকেরও বেশি রোগী ঢাকার বাসিন্দা। গত দুই দিনে মারা যাওয়া ১২ জনের ৯ জনই ঢাকার। সারাদেশের হিসেবে ঢাকা শহর ও ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলাতেও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। ঢাকা শহর ও ঢাকা বিভাগে আক্রান্ত মোট রোগীর ৮৫ শতাংশেরও বেশি। অথচ সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের ঢাকা শহর বা বিভাগের জেলাগুলোর মানুষ অনেকটাই বেপরোয়া। তারা মানছে না কোনো নিয়ম বিধিবিধান। নানা অজুহাতে দিনভর বের হচ্ছেন ঘর থেকে। পাড়া মহল্লায় চলছে জমিয়ে আড্ডা। ঢাকার মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডাসহ বেশ কিছু গার্মেন্টস অধ্যূষিত এলাকায় বেপরোয়া গার্মেন্টস শ্রমিকরা। ঢাকার বাইরে গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীতে গার্মেন্টস শ্রমিকরাই কোনো বিধিবিধান মানছে না। নারায়ণগঞ্জে লকডাউন পরিস্থিতিতেও ফতুল্লার বিসিক ও সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডেসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে অধিকাংশ গার্মেন্টস কারখানা চালু করা হয়েছে। শারীরিক দূরত্ব না মেনেই সকাল থেকেই নিজ নিজ কর্মস্থলে দলে দলে যোগ দেন শ্রমিকরা। নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গার্মেন্টস খোলার একদিনেই সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৮৪জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রাজধানীর কমবেশি সব এলাকাতেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। তবে আক্রান্ত রোগীর হিসাবে রাজধানীতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে রাজারবাগ, যাত্রাবাড়ী, লালবাগ, মোহাম্মদপুর, বংশাল, মহাখালী, মিটফোর্ড, মিরপুর-১৪, তেজগাঁও, ওয়ারী, শাহবাগ ও কাকরাইল। এসব এলাকাতেই সামাজিক দূরত্বের বিধির তোয়াক্কা করছে না অনেকেই। সকাল থেকে কাঁচাবাজারে থাকছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ীর পাইকারী মার্কেট, শনিরআখড়ার বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন মার্কেট, কৃষি মার্কেট, কাওরানবাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, কল্যাণপুর বাজার, রামপুরা কাঁচাবাজারে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। কোনো কোনো এলাকায় কাঁচাবাজারকে রাস্তার উপর বসানো হয়েছে। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। রাস্তার উপরও গাদাগাদি করে মানুষ বাজারে ঘোরাফেরা করছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগ, লালবাগ, শাহবাগ, কাকরাইল, মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের চেয়ে রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি অনেক বেশি। রোজার অজুহাতে ফুটপাতসহ বিভিন্ন স্থানে খাবারসহ বিভিন্ন দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। পুরান ঢাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাটে বাজার ও ওষুধ কেনার অজুহাতে অপেক্ষাকৃত তরুণরা অবাধে ঘোরাফেরা করছেন। কোথাও কোথাও শারিরিক দূরত্ব তো অনেক দূরের কথা গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছেন। অবস্থা দৃষ্টে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা।
আজিমপুর সরকারি স্টাফ কোয়াটারের একজন বাসিন্দা বলেন, প্রায় এক মাস ঘরবন্দি থেকে আজ রাস্তায় বেরিয়ে এত মানুষ দেখে হতবাকই হলাম। এভাবে মানুষ ঘোরাফেরা করলে সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানীর কাকরাইল এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, কিছুদিন আগে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যেদের জোরদার টহল দেখলেও এখন আর তাদের দেখা যাচ্ছে না। সরকারিভাবেও তো কোনো ঘোষণা আসেনি। এতে রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বেড়েছে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে বের হতে দিলেও একটা নিয়ম ও কঠোর নজরদারির মধ্যে চলাফেরার সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় রাজধানীতে করোনার সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে সারাদেশে প্রায় সাতশ চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্টসহ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত। এ অবস্থা চলতে থাকলে হাসপাতালে রোগীর সেবা দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, মানুষ সচেতন না হলে সংক্রমণ কমানো যাবে না। মানুষ সচেতন হলে সারাদেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় যে প্রস্তুতি রয়েছে তাই যথেষ্ট। আর মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আক্রান্ত আশঙ্কাজনক হারে বাড়লে সারাদেশের সব হাসপাতাল মিলিয়েও চিকিৎসা দেয়া অসম্ভব হতে পারে।