গবেষণাগারে দিনরাত এক করে খোঁজ চলছে প্রাণঘাতী করোনার ভ্যাকসিনের। আমেরিকা থেকে ব্রিটেন, চীন থেকে ভারত কমপক্ষে ৮০টি গবেষণাগারে স্বতন্ত্রভাবে চলছে অনুসন্ধান। এরই মধ্যেই চীনা সংস্থা সিনোভাক দাবি করল, করোনার ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে গেছে। এখন ছাড়পত্রের অপেক্ষায় তারা। ছাড়পত্র পেয়ে গেলেই গণহারে ভ্যাকসিনের উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। সিনোভাকের আরও দাবি, তাদের গবেষণাগারে প্রস্তুত ভ্যাকসিনই করোনা ঠেকাতে কার্যকর হবে।
এই মুহূর্তে (শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত) বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ লাখ ৮ হাজার ২৩৩ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ১০৫ জনের। তাই দেরি না করে গণহারে উৎপাদন শুরু করতে চায় চীনা এই প্রতিষ্ঠান। সিনোভাকের দাবি, বানরের শরীরে অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে এই ভ্যাকসিনের। তবে, গণহারে উৎপাদন শুরুর আগ তাদের আরও কয়েকটি ধাপ পেরোতে হবে।
করোনা বিপর্যয়ে চারটি সংস্থার তৈরি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে চীন। তার একটি সিনোভ্যাক বায়োটেকের। বানরের পর মানব শরীরেও পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। সিনোভ্যাক জানিয়েছে, করোনা প্রতিরোধে বছরে ১০ কোটি ডোজ উৎপাদন করতে তারা প্রস্তুত। একটি নিষ্ক্রিয় প্যাথোজেনের ওপর ভিত্তি করে, এই ভ্যাকসিনের হাজারো শট সাদা-কমলা রঙের একটি প্যাকেজে সজ্জিত করা হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে করোনাভ্যাক। সংস্থার দাবি, ভ্যাকসিনটি তৈরির কাজ প্রায় শেষ। বৃহৎ পরিসরে ভ্যাকসিনটি উৎপাদন করতে তারা সক্ষম কি না, ছাড়পত্র পাওয়ার আগে সে প্রমাণও দিতে হবে সংস্থাটিকে। এর আগে এই সিনোভাকই সোয়াইন ফ্লু’র ভ্যাকসিন গণহারে উৎপাদন করেছিল । তাই অনেকেরই আশা, চীনের এই সংস্থাটি করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদনে সক্ষম হবে।
সূত্রের খবর, সিনোভ্যাক গত এপ্রিল মাসেই চীনের পূর্ব জিয়াংসু প্রদেশে ১৪৪ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালিয়েছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলোর প্রথম দু’টি পর্যায়ের পরে, জুনের শেষে ভ্যাকসিনটির আশাব্যাঞ্জক ফল পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী সংস্থাটি।
পরীক্ষার তৃতীয় ধাপ শেষ হলেই বোঝা যাবে ভাইরাসের বাহকের মধ্যে ভ্যাকসিনটি কার্যকর কি না। তবে সিনোভাক তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ, চীনে ভাইরাসটির সংক্রমণ কমে যাওয়ায়, ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক তারা পাচ্ছে না।
সিনোভ্যাকের আন্তর্জাতিকবিষয়ক ডিরেক্টর মেং উইং বলেন, বর্তমানে আমরা ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে কথা বলছি। তৃতীয় ধাপের জন্য কয়েক হাজার লোকের প্রয়োজন হবে। তবে ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য কোনও দেশ থেকে এই পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবী পাওয়া সহজ হবে না বলেই তারা মনে করছেন। এই ধাপে সাফল্য পেলে পর্যাপ্ত টিকা তৈরির অনুমোদন আদায়ে সময় লাগবে না।