চীন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করার প্রতিযোগিতায় বিশ্বকে পরাস্ত করতে চায়। এবং কিছু পদক্ষেপের কারণে, তারা ইতিমধ্যেই সবার থেকে এগিয়ে গিয়েছে। এদিকে, কোভিড-১৯ রোগীদের উপরে পরীক্ষামূলকভাবে রেমডেসিভির প্রয়োগ করছে সিঙ্গাপুর।
ভ্যাকসিন তৈরির মাধ্যমে চীন জনগণকে রক্ষা করতে এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক সমালোচনা প্রতিহত করতে মরিয়া চেষ্টা করছে। এ জন্য ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোকে সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার। ইতিমধ্যে চারটি চীনা সংস্থা তাদের ভ্যাকসিন মানুষের উপরে পরীক্ষা করতে শুরু করেছে যা যৌথভাবে আমেরিকা ও ব্রিটেনের থেকেও বেশি। তবে চীনের নেতারা এমন একটি ভ্যাকসিন শিল্পকে শক্তিশালী করেছেন যা দীর্ঘদিন ধরে মানসম্পন্ন সমস্যা এবং কেলেঙ্কারীতে জড়িত। মাত্র দু’বছর আগেও, চঅনে বাচ্চাদেরকে অকার্যকর ভ্যাকসিন দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ কারণে শুধু একটি ভ্যাকসিন সন্ধান করা যথেষ্ট নয়, চীনের সংস্থাগুলোকে অবশ্যই জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে, যাতে তারা বিদেশী ভ্যাকসিনের প্রতি আগ্রহী না হয়।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে ইতিমধ্যে এগিয়ে আছে চীন ও আমেরিকা । তাই বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা- টিকা আবিষ্কার করতে পারলেই দেশ দু’টি অর্থনৈতিক তো বটেই ক‚টনৈতিকভাবেও তার ফায়দা আদায় করে নেয়ার চেষ্টা করবে। ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন- দেশ দু’টি জানে যে দেশই করোনাভাইরাসের টিকা প্রথমে আবিষ্কার করতে পারবে, সে দেশই বিশ্বে ছড়ি ঘোরাবে। তবে চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিজ্ঞানিরা মনে করছেন, এই দৌড়ে আমেরিকার চেয়ে চীন অনেকটাই এগিয়ে। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করছেন, চীনই প্রথম করোনাভাইরাস জানতে শুরু করেছে। সে দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সবার আগে এবং তারা এটি নিয়ন্ত্রণেও নিয়ে এসেছে।
পেন্টাগন ও সিআইএ’র প্রাক্তন কর্মকর্তা ম্যাট ক্রয়েনিগ বলেছেন, চীন কোনো ধরনের সহায়তা দিলেও বিভিন্ন সময় তার পেছনে শর্ত থাকে। সে কারণে তারা টিকা আবিষ্কার করলেও তাদের প্রভাব বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলার চেষ্টা চালাতে পারে। তিনি আরো বলেন, চীন নিজেদের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার জন্য মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে করোনাভাইরাসের টিকা ব্যবহারের জোর চেষ্টা চালাতে পারে। করোনার কারণে তারা যে ধরনের বিপাকে পড়েছে, তা উত্তোরণের জন্য সহায়ক হতে পারে এই ভাইরাসেরই টিকা।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বহু কর্মকর্তা মনে করেন, চীন সবার আগে এই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা শুরু করেছে। অন্য দেশগুলো টিকা আবিষ্কারের পথে যতদূর এগিয়ে গেছে, সেই তথ্যও চীন চুরি করার চেষ্টা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা সে দেশের চিকিৎসক থেকে শুরু করে গবেষকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তাদের গবেষণার তথ্য চুরি করার জন্য কম্পিউটার হ্যাক করার চেষ্টা করতে পারে চীনের হ্যাকাররা। সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার কথাও বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যে দেশ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রথম আবিষ্কার করবে, তারা এটি চড়া দামে বিক্রি করবে। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকান মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর রোজ ম্যাককিনির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেছেন, টিকা আবিষ্কার করতে পারলে অন্য দেশ থেকে আর অর্থ খরচ করে সেসব আমদানি করতে হবে না চীনকে। এছাড়া তারা বৈশ্বিক সংস্থাগুলির কাছে তারা বিপুল সংখ্যক টিকা বিক্রি করতে পারবে।
এদিকে, সিঙ্গাপুরে রেমডেসিভিরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এটি মূলত ইবোলা ভাইরাসের প্রতিষেধক। এ বিষয়ে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশিয়াস ডিজিজেসের (এনসিআইডি) ক্লিনিকাল ডিরেক্টর ডক্টর শন ভাসু চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে বলেছেন, কোভিড -১৯ এর জন্য ‘কোনও প্রমাণিত থেরাপি’ নেই, তবে এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের একটি সিরিজে রেমডেসিভির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় দ্বারা প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনসিআইডি যদি সম্ভব হয় তবে ট্রায়াল সেটিংয়ের আওতায় রেমডেসিভির ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে। এর পরে এই ওষুধটি প্রয়োজনে আরও ব্যপকভাবে ব্যবহার করা হবে।