করোনা মোকাবিলায় প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আর্থিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে করোনা পজিটিভের প্রমাণ বা মেডিক্যাল রিপোর্টসহ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট ফরমে ক্ষতিপূরণের দাবিনামা পেশ করতে হবে। তবেই তিনি আর্থিক সুবিধা পাবেন। কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসাসেবা নেন তা হলে তিনি এ সুবিধা পাবেন না।
অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফরমে মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রী/স্বামী/সন্তান এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে বাবা/মা ক্ষতিপূরণের দাবি সংবলিত আবেদন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করতে হবে। আবেদনকারীর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্রসমূহ যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবে। এরপর তার পরিবার আর্থিক সুবিধা পাবেন।
করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন তাদের কেউ আক্রান্ত হলে গ্রেড ভেদে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, যদি সরকারি কোনো কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তা হলে এর পাঁচগুণ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর।
ক্ষতিপূরণের আওতায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ও সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিযোজিত মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
আবেদনকারীর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্রসমূহ যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত কর্মচারীগণ কেবল এ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য হবে।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সৃজনকৃত খাতে করোনা (কোভিড-১৯) সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণ বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে নির্বাহ করা হবে। অর্থ বিভাগ ক্ষতিপূরণের আবেদন প্রাপ্তির পর ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের সরকারি আদেশ জারি করবে।
এ ক্ষতিপূরণ বর্তমান প্রচলিত অন্য যে কোন প্রজ্ঞাপন/আদেশে বর্ণিত কর্মকালীন মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর্থিক সহায়তা বা অনুদানের অতিরিক্ত হিসেবে প্রদেয় হবে।
জানা গেছে, ইতিমধ্যে যারা আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা মারা গেছেন তারাও এ সুবিধা পাবেন।
প্রসঙ্গত, করোনাবিরোধী লড়াইয়ে গত ১৫ এপ্রিল শাহাদাতবরণ করেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। এ ছাড়াও ৭ জন পুলিশ আত্মত্যাগ করেছেন। আর করোনা যুদ্ধে আক্রান্ত হয়েছেন প্রজাতন্ত্রের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তারা নিয়ম অনুসারে আবেদন করলেই এ আর্থিক সুবিধা পাবেন বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রধান বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য চিকিৎসা সেবা ও মারা গেলে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা করেছে। এ সুবিধা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা- কর্মচারীদের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা যাচাই করে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, কর্মরত অবস্থায় কোন সরকারি কর্মকর্তা মারা গেলে ৮ লাখ টাকা পান তার পরিবার। আর করোনার ক্ষেত্রে সেটি ২৫-৫০ লাখ টাকা পাবেন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।