পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে ট্রেন চালু করেছে ভারতের রেল মন্ত্রণালয়। সেই ট্রেনে করে নিজেদের রাজ্যে ফিরছেন অনেকেই। কিন্তু এখনো কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে অনেককে।
তেমন একটি ঘটনা ঘটে মধ্যপ্রদেশের সাতনায়। লকডাউনের মধ্যেই মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে সাতনায় নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন এক শ্রমিক দম্পতি। পথেই সন্তানের জন্ম দেন ওই নারী। তাতে অবশ্য হাঁটায় ছেদ পড়েনি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ফের হাঁটতে শুরু করেন দুজনে। পরে খবর পেয়ে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে সাতনা প্রশাসন।
মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার উচেহারা গ্রাম। পশ্চিম ভারত থেকে মধ্য ভারত। দেশের এই দুই প্রান্ত হেঁটেছেন শ্রমিক দম্পতি রাকেশ কল ও শকুন্তলা কল।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইর প্রতিবেদনে বলা হয়, মহারাষ্ট্রের নাসিকে শ্রমিকের কাজ করতেন উচেহারার ওই দম্পতি। সেই সময়েই সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন শকুন্তলা। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে তারা বাড়ি ফেরার সুবিধাজনক কোনো পথ খুঁজে পাননি। ওই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই অন্তত হাজার কিলোমিটার রাস্তা হেঁটেই পাড়ি দেওয়ার ঝুঁকি নেন তিনি। অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে দল বেঁধে সাতনার উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেন তারা। সঙ্গে ছিল তাদের তিন সন্তানও।
মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে ধুলের মাঝে একটি গ্রামে থামেন ওই দম্পতি। রাস্তার ধারেই চতুর্থ সন্তানের জন্ম দেন শকুন্তলা। তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন দলের অন্য সদস্যরাও।
শকুন্তলার স্বামী রাকেশ বলেন, ‘এক শিখ দম্পতি জামাকাপড় ও অন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমাদের দেন।’
এরপরও তাদের হাঁটায় ছেদ পড়েনি। রাকেশ বলেন, ‘এরপর আমরা ঘণ্টা দুয়েক বিশ্রাম নিয়েছিলাম। তারপর অন্তত ১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিই।’
এ বিষয়ে মধ্যপ্রদেশের সেনধাওয়া থানার পরিদর্শক ভিএস পারিহার বলেন, ‘বিজাসন চেকপোস্ট থেকে শকুন্তলাকে উদ্ধার করা হয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের ওই দলটিকে শেষ পর্যন্ত বাসে চাপিয়ে উচেহারা গ্রামে পাঠায় প্রশাসন।’
শকুন্তলা ও সদ্যোজাতকে পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। সাতনা ব্লক মেডিকেল অফিসার এ কে রায় বলেন, ‘আমরা জানতে পারি প্রশাসন তাদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করেছে। তারা গ্রামে পৌঁছতেই চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়। মা ও সদ্যোজাতকে পরীক্ষা করা হয়েছে। দুজনেই সুস্থ রয়েছেন।’
মে মাসের শুরুতে শকুন্তলার মতো এমনই এক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল গোটা ভারত। তেলঙ্গানার সঙ্গারেড্ডিতে শ্রমিকের কাজ করতেন ছত্তীসগঢ়ের রাজনন্দগাঁওয়ের এক নারী। লকডাউনের জেরে সপরিবারে হেঁটেই বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। পথেই জন্ম দেন সন্তানের।