বাংলাদেশের মন্ত্রী-এমপিসহ মোট ছয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। আর ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় দুই নেতা, এমপিদের ঘনিষ্ট কয়েকজন আত্মীয়স্বজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন একজন এমপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা। মারা গেছেন দলের সাবেক দুই সংসদ সদস্য।
করোনায় আক্রান্ত সংসদ সদস্যরা হলেন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিরাজগঞ্জ-১ আসনের মোহাম্মদ নাসিম, বান্দরবানের এমপি ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ এর এবাদুল করিম বুলবুল, জামালপুর-২ এর ফরিদুল হক খান, চট্টগ্রাম-১৬ এর মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং নওগাঁ-২ এর এমপি শহীদুজ্জমান সরকার।
এছাড়া দলীয় নেতাদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও তার স্ত্রী আসমা কামরান, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মা হাসিনা মহিউদ্দিন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাবেক এমপি হাজী মকবুল হোসেন করোনায় মারা গেছেন এবং বগুড়ার সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নারী বিষয়ক সম্পাদক কামরুন্নাহার পুতুল করোনা উপসর্গে মারা গেছেন।
নওগাঁ-২ এর এমপি শহীদুজ্জমান সরকার এবং শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বর্তমানে সুস্থ। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে ‘আশঙ্কাজনক’ অবস্থায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি এখনো ‘ডিপ কোমায়’ রয়েছেন। অস্ত্রোপচারের পর নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা নাসিমের শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে গেলে ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ভেন্টিলেশন সাপোর্টে প্রথমে ৪৮ ঘণ্টা এবং পরে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া গতকাল জানিয়েছেন, করোনা রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসলে মোহাম্মদ নাসিমকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে।
করোনা আক্রান্ত হয়ে অবনতির দিকে গেলে গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে বিমান বাহিনীর একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার নিয়ে আসা হয়।
প্রথম করোনা আক্রান্ত হন নওগাঁর শহীদুজ্জামান সরকার। গত ১ মে সাবেক হুইপ শহীদুজ্জামান সরকারের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। শুরু থেকেই ন্যাম ভবনে নিজের ফ্ল্যাটে ‘আইসোলেশনে’ ছিলেন তিনি। দুই দফা পরীক্ষার পর রিপোর্ট আসে তিনি সংক্রমণমুক্ত। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, আমি করোনাভাইরাস থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে এখন স্বাভাবিক কাজ করছি।
সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম আক্রান্ত বীর বাহাদুর উশৈসিং। ৬০ বছর বয়সী বীর বাহাদুর আগে থেকেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার ডায়াবেটিসও রয়েছে। সংসদ সদস্যদের মধ্যে পুরো পরিবারসহ আক্রান্ত হয়েছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তার পরিবারের ছয় সদস্যসহ তার বাড়ির মোট ১১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তারা চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদ রহমান নগর এলাকার বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল জানিয়েছেন। এমপি মোস্তাফিজুর, তার স্ত্রী, তিন মেয়ে, এক নাতনি ও এক জামাতা, তিন গৃহপরিচারিকা ও তার নিজের কভিড-১৯ পরীক্ষার ফল ‘পজিটিভ’ এসেছে।
জামালপুরের এমপি ফরিদুল হক খানের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় ৪ জুন। ৬৭ বছর বয়সী ফরিদুল আপাতত জামালপুরে নিজের বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুলের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসার পর তার বড় ভাই ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম জানিয়েছেন, নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসার পর থেকে বাসাতেই তার ভাইয়ের চিকিৎসা চলছে।
এর বাইরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাসার চারজন কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এদিকে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে চট্টগ্রামের আরেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর আক্রান্তের খবর এলেও তিনি জানিয়েছেন, তিনি নমুনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন। তিনি সুস্থ আছেন। করোনা আক্রান্ত হবার পর সুস্থ হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। কয়েকদিন আগে তার করোনা নেগেটিভ এসেছে। বর্তমানে তিনি নিজ বাসায় আইসোলেসনে রয়েছেন।