করোনা সঙ্কটকালে প্রশাসনে পদোন্নতি ও রদবদলের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশে এখন এই দুর্যোগ তথা করোনাকালেও চলছে মহাসমারোহে একদলীয় শাসনকে চূড়ান্ত রূপ দেয়ার আয়োজন। সরকার মনে হয়, এক মহা অস্থিরতায় ভুগছে। তাই নিজেদের পছন্দের লোকদেরকে পদোন্নতি দেয়ার হিড়িক চালাচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে দলীয় বিবেচনায় পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, গত কয়েকদিন আগে ১২৩ জন উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে এই আদেশ দেয়াটাও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পদ নেই তবুও পদোন্নতি চলছে আলোকের গতিতে। পর্যাপ্ত পদ না থাকায় বেশিরভাগ কর্মকর্তাকেই আগের পদে থাকতে হবে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের এই সুপারনিউমারি পদোন্নতি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে আছেন চারজন মন্ত্রীর একান্ত সচিব ও ছয়জন জেলা প্রশাসকসহ আওয়ামী ঘনিষ্ঠরা। এই ঘোর দুর্দিনে পদ না থাকা সত্বেও এতগুলো পদোন্নতি দেয়ায় এটা সুপ্রমাণিত যে, সরকার জনগণের বাঁচা-মরাকে তোয়াক্কা করে না, শুধু ক্ষমতাকে অনিশ্চয়তার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য যত ধরণের স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার তারা সেটিই করছে।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস যখন ঝড়ের বেগে বাংলাদেশের মানুষকে আক্রান্ত করছে, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে, যে মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন অক্সিজেন সিলিন্ডার, বেড, আইসিইউ বেড, মাস্ক, গ্লাভস, ফেসশিল্ড, স্যানিটাইজারের, সেই মুহূর্তে পদ না থাকার পরেও এই বিশাল পদোন্নতি করোনায় উদ্বিগ্ন জনগণের প্রতি মস্তবড় তামাশা। দেশে লাশের সারি দীর্ঘ হলেও, হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মানুষ আহাজারী করলেও সরকারের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সরকারের গদি কিভাবে রক্ষা হবে সেদিকেই তারা এগিয়ে যাচ্ছে।
রিজভী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই দলীয় বিবেচনায় ঢালাও নিয়োগ ও পদোন্নতি চলছে। অনেক মেধাবী কর্মকর্তা যোগ্যতা থাকার পরও তাদের পদোন্নতি হয়নি। কুষ্ঠিনামা যাচাই করে শুধু তাদেরকেই পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে যারা ক্ষমতাসীন দলের সাথে নানাভাবে যুক্ত। এই সরকারের পুরোটা সময় জুড়ে বঞ্চিত করা হয়েছে সৎ, যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তাদের। তবে এই মুহূর্তে প্রশাসন ক্যাডারে এতগুলো কর্মকর্তার পদোন্নতি জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও বলেন, যে মুহূর্তে একটি ভেন্টিলেটর, একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার, একটি পিপিই সোনার হরিণের ন্যায়, সেই মুহূর্তে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পদোন্নতি পাওয়া এতজন কর্মকর্তার জন্য সরকারীভাবে যে ব্যয় হবে সেই অর্থ দিয়ে করোনার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার সরঞ্জাম ক্রয়ে সহায়ক হতো। এই সরকার নিজেদেরকে জনগণের শত্রু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, এখন জনপ্রশাসনকেও জনগণের বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে।