বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, সরকার যেভাবে চলছে তাতে ৬ মাস পর টাকা ছাপিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে। গতকাল শনিবার ‘সিপিডির বাজেট সংলাপ ২০২০’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এসব কথা বলা হয়।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ভালো এবং কিছু খারাপ দিক রয়েছে। বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি ধরা হয়েছে। করোনা মহামারী এখনও চলমান। সুতরাং এই অনুমতি সঠিক মনে হয়নি। রফতনি প্রবৃদ্ধির টার্গেট করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। এ বছর হয়তো ১৮ শতাংশ নেগেটিভ গ্রোথ হবে। তারপরও লো-লেবেল থেকে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করা চ্যালেঞ্জিং হবে। ম্যাক্রো ইকোনমিকটা এমনভাবে করা হয়েছে যেন আমরা খুব দ্রুত রিকভারি করব।
ভার্চুয়াল সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নাইম রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহেমদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট ব্যরিস্টার নিহাদ কবীর প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তফিজুর রহমান।
মূল প্রবন্ধে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেসরকারি-সরকারি ইনভেস্টমেন্টের যে ধরনের প্রবণতা বা ধারাবাহিকতা সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট ও রফতানির ক্ষেত্রে যে অনুমতি করা হয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। রাজস্বের ক্ষেত্রে প্রায় ৫০ শতাংশের মতো গ্রোথ ধরা হয়েছে। সেখানে বড় অংশই আসবে অপ্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইলের সিমের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো উচিত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোবাইলের সিমের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় ইন্টারনেটের ব্যবহার কমবে। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা খুব ভালো অবস্থানে আছি। এখানে ইন্টারনেট বড় ভূমিকা রেখেছে। এ কর বাতিল করা উচিত। ব্যাংকের আবগারি শুল্ক নিয়ে আগেও সমালোচনা হয়েছে। এটা না বাড়লে ভালো হতো। স্বাস্থ্যখাতে যেভাবে অগ্রাধিকার দেয়ার দরকার ছিল। বাজেটে হেলথ সেক্টরে কোভিড রিলেটেড প্রজেক্ট কেবলমাত্র একটা। এগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করে দেখা উচিত।
আলোচনায় অংশ নিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর বলেন, সরকার যেভাবে চলছে তাতে ৬ মাস পর টাকা ছাপিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হবে। ধারাবাহিকভাবে এই সময়ে ১ বছরের বাজেট করা উচিত হয়নি। বরং ৬ মাস অন্তর অন্তর দুটি বাজেট করা উচিত ছিলো। এর মধ্যে প্রথম ৬ মাস করোনা মোকাবিলায়। পরের ৬ মাস করোনা পরবর্তী করণীয় কেন্দ্রীয় করা উচিত ছিলো।
তিনি বলেন, সরকার গতানুগতিকভাবে কেবল জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়েছে বাজেটে। কিন্তু কারোনা ইস্যুকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। এই বাজেটে দিয়ে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ দূরের কথা পজিটিভ প্রবৃদ্ধিও হবে না। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। কর পরিধি বাড়ানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়নি। এনবিআরের কাঠামোকে সংস্কার করা হয়নি। এ কারণে সরকার এখনই ধার-দেনা করে চলছে। এভাবে চললে আগামী ৬ মাস পর টাকা ছাপিয়ে বেতন দিতে হবে। এটা হবে দুর্ভাগ্যজনক।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, করোনাকাল চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক যে কোনো নীতি গ্রহণে প্রবৃদ্ধি কী হবে তা ভাবা উচিত হবে না। বরং দেশের মানুষের জীবন রক্ষা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কষ্ট লাঘবই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। অথচ এ বাজেটেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রিক মনোভাব থেকে বের হতে পারেনি সরকার।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাজেটে মোবাইলফোন ও ইন্টারনেট সেবার ওপর বাড়তি কর প্রত্যাহারের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে। দেশে এখন রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা আছে। সরবরাহ পরিস্থিতি ভালো। কৃষিতেক ভালো ফলন হয়েছে। প্রবাসী আয় বাড়তে শুরু করেছে। রিজার্ভে একটা সন্তোষজনক অবস্থা রয়েছে। সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী। এখানে বিদ্যুতের ছোঁয়ায় সব কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব।