মিল মালিকরা চুক্তিমূল্যে সরকারকে চাল সরবরাহ না করে বাজার অস্থিতিশীল করলে প্রয়োজনে সরকারিভাবে এই খাদ্যশস্য আমদানি করা হবে বলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন।
তিনি বলছেন, এবার বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, এই ভরা মৌসুমে চালের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বাজারে চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখা নিয়ে বুধবার এক সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে খাদ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
চালকল মালিকদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “চালের বাজার স্থিতিশীল রাখেন, সরকারের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করেন। যদি তা না করেন তবে সরকার চাল আমদানিতে যেতে বাধ্য হবে।”
সরকার চাল আমদানিতে যেতে চায় না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “এতে মিলারদের লস হবে এবং যে সমস্ত কৃষক ধান ধরে রেখেছে তারাও লোকসান করবে।”
চলতি বছর সাড়ে ১৯ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান-চাল কিনবে সরকার। ৩৬ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা কেজিতে দেড় লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল এবং সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজিতে আট লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান কেনা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কিছু মিল মালিক ৩৬ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করতে গরিমসি করে সরকারের কাছে চালের দাম বাড়ানোর দাবি করেছেন। অনেক মিল মালিক এখন চুক্তিমূল্যে চাল না দেওয়ায় মজুদের লক্ষ্য পূরণ করা নিয়ে বিপাকে পড়েছে সরকার।
মিলারদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “এই করোনাকালীন সবাই বিপদগ্রস্ত। এবার না হয় লাভ একটু কম করলেন। প্রত্যেক বার লাভ সমান হয় না। এবার মানুষকে সেবা করার সুযোগ রয়েছে, সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসুন।
“যেহেতু খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে আপনাদের ব্যবসা সবসময় করতে হবে, তাই লাভ বেশি হলে চাল সরবরাহ করবেন, লাভ কম হলে চাল সরবরাহ করবেন না, এটা হতে পারে না।”
মন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে হাওরে বন্যার সময় সরকারিভাবে চালের সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হলে সরকার চাল আমদানির উপর ট্যাক্স মওকুফ করে দেয়, ফলে বিভিন্নভাবে ৪০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়। এতে মিল মালিক এবং কৃষক উভয়েই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
“কৃষক বাঁচলে ধান উৎপাদিত হবে এবং আপনারা চালকল মালিকরা বেঁচে থাকবেন। কৃষক যাতে বিপাকে না পড়ে, বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষক যেন ধানের ন্যায্য মূল্য পায় সেজন্য এবার আট লাখ মেট্রিক টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই কৃষক তার ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে।”
মিলগেট থেকে কোন ধান কত দামে বিক্রি হচ্ছে তা যাচাইয়ের পাশাপাশি তদারকির ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশ দেন খাদ্যমন্ত্রী।
মিলগুলোর কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে সেগুলোকে ‘এ’, ‘বি’, ও ‘সি’ শ্রেণিতে চিহ্নিত করতে ইতোমধ্যে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এসব শ্রেণির ভিত্তিতে মিলগুলোকে পরবর্তীতে মূল্যায়ন করা হবে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকার সকল ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিচ্ছে, সেই প্রণোদনার অংশীদারিত্বের সুযোগ আপনারাও নিতে পারবেন। কোনোভাবেই সরকারিভাবে সংগ্রহের চালের মূল্য বৃদ্ধি করা হবে না।”
খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম ছাড়াও আট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, আট বিভাগের বিভাগীয় চালকল মালিক সমিতির দু'জন করে প্রতিনিধি, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় যুক্ত ছিলেন।