গাজীপুরের শ্রীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের বিন্দুবাড়ি (জিওসী) এলাকা থেকে গত ৮ জুলাই তাইজুদ্দিন (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের ঝুলন্ত অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছিলো পুলিশ। ঘটনাটি কয়েকটি গনমাধ্যমে প্রচার করা হয়। এর মধ্যে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে (শ্রীপুর গ্রাম্য বিচারকের চাপে বৃদ্ধ বাবার আত্মহত্যার দাবি মেয়ের) ইসলাম উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে মিথ্যা বক্তব্য নিয়ে বানোয়াট, ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাযায়, তাজউদ্দীন পাশের বাড়ির বাচ্চু মিয়ার বাড়িতে যাতায়াত করতো। বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী প্রবাসে থাকার সুযোগে তার মেয়ে লিমা (১৮) সাথে তাইজুদ্দিন অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেন।
লিমা গর্ভবতী হওয়ার ৬ মাস পরে ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে লিমাকে তার পরিবার ও আশেপাশের লোকজন জিজ্ঞেস করলে লিমা তাজউদ্দীনের কথা বলেন।
পরে লিমার বাবা এলাকার ইসলাম উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন সহ গন্যমাণ্য ব্যক্তিদেরকে জানালে তারা সহ এলাকার লোকজন তাইজউদ্দিনকে লিমার গর্ভবতী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার স্বজনদের উপস্থিতিতে বিষয়টি স্বীকার করে নেন তাজউদ্দীন।
পরে ইসলাম উদ্দিন সহ এলাকার গণ্যমান্য কয়েকজন গর্ভবতী হওয়ার ৬ মাস হয়েছে ভেবে লিমার বাবাকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে যায়।
পরে তাইজউদ্দিনের পরিবারের লোকজন সাথে এলাকার আরও কয়েকজনকে নিয়ে ইসলাম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার জন্য অনুরোধ করেন। ইসলাম উদ্দিন তাদেরকে বাচ্চুর সাথে কথা বলে সমাধান করার পরামর্শ দেন।
পরে বাচ্চু তার মেয়ের ভবিষ্যৎের কথা চিন্তা করে ১ লাখ টাকা ও বাড়ি করার কথা ও বললে তাজউদ্দিনের পরিবারের লোকজন ৮০ হাজার টাকা ও বাড়ি করে দেওয়ার শর্তে রাজি হয়ে খোলা স্ট্যাম্পে ৮. ২৫ শতাংশ জমি লিখে দেন। এবং বলেন, বাড়ি করার আগ পর্যন্ত লিমাকে তিন মাস তার বাবার বাড়িতে থাকতে হবে, এবং তিন মাসের ভরণপোষণের জন্য লিমাকে মাসে ৪ হাজার টাকা করে দেওয়ার শর্তে রাজি হয়ে ২ লাখ টাকা কাবিনে নগদ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বিয়ে পড়ানো হয়।
বিয়ের পর থেকে বড় স্ত্রী তাজউদ্দীনের সাথে খারাপ ব্যবহার এমনকি মারধর করার কথাও শুনা গেছে। ঠিকমতো খাবার না দেওয়া, স্বজনদের কাছে অপরাধী মনে হওয়া তাজউদ্দীন আত্মহত্যা করেছে বলে স্থানীয় লোকজনের ধারণা।
অথচ অনলাইন পৌর্টালটিতে ইসলমা উদ্দিন সহ এলাকার লোকজন তাজউদ্দিনকে জোরপূর্বক বিবাহ করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।বরং তাজউদ্দীনের স্ত্রীসহ পরিারের লোকজন মামলার ভয়ে গ্রাম্য মাতব্বরদের কাছে গিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য অনুরোধ করেন জানা গেছে। আরও লেখা হয়েছে, ইসলাম উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন মেয়েকে এক লাখ টাকা দিতে বাধ্য করেন, এবং মাসে সারে ৪ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জবানবন্দি নেন। যা সঠিক নয় বলে জানা গেছে।
মেয়ের বাবার দাবিকৃত ১ লাখ টাকার মধ্যে ৮০ হাজার টাকা ও মেয়ে যেহেতু বাড়ি করার পূ্র্ব পর্যন্ত বাবার বাড়িতে থাকবে এজন্য তাজউদ্দিনের লোকজন মাসে ৪ হাজার টাকা ভরণপোষণের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে দেওয়ার কথা বলে।
এবিষয়ে তাজউদ্দীনের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে ছাড়া অন্য কাওকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি, প্রথম স্ত্রী নাজমা বেগম জানান, তার স্বামী বাচ্চুদের বাড়িতে যাতায়াত করতো,তবে কোনদিন তাদের এমন সম্পর্কের কথা শুনেনি।
গর্ভবতী হওয়ার পর জানতে পারে।প্রথমে স্বামী জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও পরে লিমার বাবাকে দোষারোপ করে বলেন,মেয়ের বাবা যদি ঠিকমতো সন্তানদের খেয়াল রাখতো বাড়ির বাহিরে সময় না দিতেন,আর আমার স্বামীকে তাদের বাড়িতে অবাধে যাতায়াতে বাধা দিতো তাহলে হয়তো এমন কিছু হতোনা।
আরও জানা হয়েছে, গ্রামের কোন মাতব্বর কি আপনার স্বামীকে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিয়েছে, নাকি আপনারাই ইসলাম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য অনুরোধ করেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি যাইনি আমার ছেলে এবং মেয়ের জামাই তারা গিয়েছে৷ তারা গিয়ে শর্ত মেনে বিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মেয়ের বাবা শর্তের বাকি টাকা ও বাড়ি করার জন্য চাপ দিচ্ছিলো।
এনিয়ে তার স্বামী খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন। লিমাকে বিয়ের পর আপনি স্বামীকে মারধর করেছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাওয়া খাদ্য ঠিকমতো করেনা তাই ভয় দেখাইতাম।
এবিষয়ে লিমার বাবা বাচ্চু মিয়া জানান, প্রতিবেশী হওয়ার সুবাধে তাজউদ্দীন আমার বন্ধু হিসেবে বাড়িতে যাতায়াত করতো,কিন্তু বয়স্ক মানুষ হওয়ায় আমি কখনও কোন সন্দেহ করেনি।আমার মেয়ের জীবনটা সে নষ্ট করে দিয়েছে।
বাচ্চু মিয়া বলেন,বিষয়টি আমার মেয়ে গর্ভবতী হওয়ার ৬ মাস পর তাজউদ্দীনের স্ত্রী ও শালিকার কাছে জানতে পারি।পরে আমি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদেরকে জানালে তারা আমাকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
পরে এলাকার লোকজন ও তাজউদ্দীনের পরিবারের লোকজনের অনুরোধে যা হওয়ার তা ত হয়েই গেছে।তাই আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে ১ লাখ টাকা ও মেয়েকে বাড়ি নির্মান করার কথা বললে তারা।পারে এসব মেনে নিয়ে আমার মেয়েকে তাজউদ্দীনের সাথে বিবাহ দেন।
যেহেতু তাজউদ্দীনের বাড়িতে তার প্রথম স্ত্রী বসবাস করে এজন্য তারা লিমার জন্য বাড়ি নির্মান করার আগ পর্যন্ত লিমাকে ৩ মাস আমার বাড়িতে রাখতে বলে। এবং তারা তিন মাস ভরণপোষণের জন্য প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে দিবে বলে জানায়।
ইসলাম উদ্দিন জানান, লিমার গর্ভবতী হওয়া ও তাজউদ্দীনের বিষয়ে আমাকে জানালে আমরা এলাকার লোকজন বসে তাদের উভয়ের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে লিমা ৬ মাসের গর্ভবতী ও তাজউদ্দিন এঘটনা ঘটিয়েছে বলে সকলের সামনে স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়।পরে আমি সহ কয়েকজন মেয়ের বাবাকে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে যাই।
পরে তাজউদ্দীনের স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই সহ কয়েকজন লোক আমার বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য অনুরোধ করেন। আমি তাদেরকে মেয়ের বাবা বাচ্চু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে চেষ্টা করে দেখার কথা বলি৷
পরে তারা বাচ্চু মিয়ার সাথে টাকা ও বাড়ি করে দেওয়ার কথা বলে লিমাকে বিয়ে করান।
ইসলাম উদ্দিন বলেন,আমি এলাকায় ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচন করার প্রচার দেওয়ার পর থেকে একটি চক্র আমার সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করেছে।