স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে করোনা সংকটের শুরু থেকেই সমন্বয়হীনতা ছিলো। করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে একের পর এক কেলেঙ্কারির ঘটনা বেরিয়ে আসার পর সেই সমন্বয়হীনতা আরো বেশি প্রকাশ্যে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চলছে দোষারোপের খেলা। পরস্পর মুখোমুখি হয়ে ‘ব্লেইম গেম’ খেলছে মন্ত্রণালয়-অধিদফতর।
করোনাকালীন স্বাস্থ্যখাতের নানা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর এর জন্য মন্ত্রণালয় দুষছে অধিদফতরকে। অন্যদিকে অধিদফতর বলছে, মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতেই হচ্ছে সব কাজ। করোনা মহামারির এই দুর্যোগ মোকাবেলায় স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় যেখানে সবচেয়ে বেশি জরুরি, সেখানে সমন্বয়হীনতা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় দেশের স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা কতোটা নড়বড়ে এবং বিপর্যস্ত।
করোনার নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার নামে জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের নজিরবিহীন প্রতারণা বাণিজ্যের ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর এখন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা কার্যক্রমে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা নিয়ে দু’পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করেছে। সাইনবোর্ডসর্বস্ব হাসপাতাল ও বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে করোনা চিকিৎসা ও নমুনা পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হলেও এর দায় কেউ নিচ্ছে না। অথচ এ অনিয়মের শিকার হয়ে ভুগছেন সাধারণ মানুষ। বিশ্লেষকরা বলছেন, জেকেজি, রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের অদক্ষতা ও ব্যর্থতাকে স্পষ্ট করেছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের আগ্রহেই বিতর্কিত ওই দুটি প্রতিষ্ঠানকে এ কাজে যুক্ত করা হয়েছে।
লাইসেন্সবিহীন রিজেন্ট হাসপাতালের অপকর্ম প্রকাশ হওয়ার পর প্রশ্ন ওঠে, করোনা চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর দায়িত্ব এই প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে দেওয়া হলো। এর দায় কার? লাইসেন্সবিহীন রিজেন্ট হাসপাতাল কীভাবে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সনদ পেলো গত ৯ জুলাই অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে সেই ব্যাখ্যা তলব করে চিঠিও দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জুলাই গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এতে দাবি করা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। এই চুক্তির আগে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিমের সঙ্গে পরিচয় থাকা তো দূরের কথা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ তাকে চিনতেনও না।
অধিদফতরের এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১২ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে শোকজ করেছে। মন্ত্রণালয়ের ওই শোকজ নোটিশে স্বাস্থ্য অধিদফতর ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে কী বেঝাতে চেয়েছে এবং রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের আগে কী কী বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তিন দিনের মধ্যে তf জানতো চাওয়া হয়েছে। যদিও রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসচিব উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে করোনা মহামারির এই সংকটকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের এমন মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষের পরস্পরবিরোধী এই অবস্থানের মধ্য দিয়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সমন্বয়হীনতার চিত্রই ফুটে উঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি পাঠাতে পারেন না। কারণ তিনি মন্ত্রণালয়ের অধীনেই কাজ করেন। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকলে সেটি তারা নিজেদের ফোরামে আলোচনা করে নিতে পারত। গণমাধ্যমে ওই বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর অর্থ হলো- মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর কর্তৃপক্ষের মধ্যে ন্যূনতম সৌজন্য বিনিময় কিংবা কথাবার্তাও হয়তো হয় না। সে জন্যই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে ডিজি গণমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরস্পরবিরোধী এমন অবস্থান দুর্যোগময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার বিষয়টিকে আরও কঠিন করে তুলবে বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কেউই জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নন। আমি ব্যাখ্যা দেবো, তবে লিখিত নির্দেশনাই যে সবসময় হয় তা নয়। মৌখিকভাবেও অনেক সময় অনেক নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর আমি আমার পরিচালককে বিশ্বাস করবো। আমার কথার পক্ষে যে প্রমাণ রয়েছে, সেটা দেবো।’
গণমাধ্যমে পাঠানো ডিজির বক্তব্যের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে এ ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে শোকজ করা হয়েছে। এ ধরনের ব্যাখ্যার বিষয়ে তিনি আমাদের কিছুই জানাননি। তাঁরা বাঁচার জন্য তাৎক্ষণিক এ চিঠি দিয়েছেন।’ রিজেন্ট হাসপাতালের বিষয়ে সচিব বলেন, ‘মন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কিছুই জানে না। মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করা হয়নি, মন্ত্রণালয়ে কোনো চিঠিও দেওয়া হয়নি।’ মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে খবর এসেছে, বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার কোনো নির্দেশনা বা সম্মতিপত্র মন্ত্রণালয় দেয়নি।
মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে যা আছে : ১১ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, মার্চ মাসে করোনা আক্রান্ত রোগী যখন কোনো হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছিল না, তখন রিজেন্ট হাসপাতাল কভিড ডেডিকেটেড হিসেবে চুক্তি করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে। এই চুক্তির আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ তাকে (রিজেন্টে মালিক মো. সাহেদ) চিনতেন না, পরিচয় থাকা তো দূরের কথা।
একই বিজ্ঞপ্তিতে জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিষয়েও নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এতে দাবি করা হয়, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সমন্বয়ক আরিফুল চৌধুরী ওভাল গ্রুপ লিমিটেড নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রæপের স্বত্বাধিকারী। ওই গ্রুপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ ২০১৮-এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে। কভিড সংকট শুরুর পর আরিফুল হক চৌধুরী অধিদফতরে এসে জানান, জেকেজি দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলে বাংলাদেশে কিছু বুথ স্থাপন করতে চায়। ওভাল গ্রæপের সঙ্গে আগে থেকেই কাজের অভিজ্ঞতা থাকার কারণে তাদের অনুমতি দেওয়া যায় বলে মনে করে স্বাস্থ্য অধিদফতর বা মন্ত্রণালয়। কিন্তু পরে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য অধিদফতর জেকেজি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।
স্বাস্থ্যের ডিজিকে শোকজ নোটিশে যা আছে : ১২ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে শোকজ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তার ব্যাখ্যা চেয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব (পার-২) শারমিন আক্তার জাহান স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছে। কোনো হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির পূর্বে তা সরেজমিন পরিদর্শন, হাসপাতাল পরিচালনার অনুমতি, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জনবল, ল্যাব ফ্যাসিলিটিজ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে উপযুক্ততা বিবেচিত হলেই কভিড পরীক্ষা/চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চুক্তি সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির পূর্বে কী কী বিষয় বিবেচনা করা হয়েছিল, চুক্তি করার পর ওই শর্তগুলো প্রতিপালনে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল এবং মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
প্রতারণার সব জেনেও নীরব ছিল অধিদফতর : রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজির প্রতারণার বিষয়টি জানার পরও নীরব ছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর মহাপরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে রিজেন্ট হাসপাতাল ও নমুনা সংগ্রহকারী আরও কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিষয়ে গত ৭ জুন অভিযোগ করেছিলেন নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশিদ রিয়াজ। কিন্তু অধিদফতর থেকে ৯ জুন পাল্টা চিঠি দিয়ে তাকে ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়। এতেই প্রমাণ হয় সবকিছু জেনেও নীরব থেকেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সব দায় এড়িয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী যা বলছেন: এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করা আছে কিনা, প্রতিষ্ঠানটি করোনা চিকিৎসার উপযোগী কিনা, তা যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব তো স্বাস্থ্য অধিদফতরের। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার পর মন্ত্রণালয় ও তাকে অবহিত করা হয়। এরপর দিনক্ষণ নির্ধারণ করে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তাকে এবং স্বাস্থ্যসেবা সচিবসহ আরও দুটি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি মন্ত্রী হিসেবে উপস্থিত থেকেছেন। সুতরাং মন্ত্রণালয়ের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে (স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক) নির্দেশ দিয়েছে এবং সে অনুযায়ী রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে, সেটি জানতে চাওয়া হয়েছে।
জেকেজি সম্পর্কে অধিদফতরের বক্তব্যের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর জেকেজি নামে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ দেওয়ার জন্য তিনি কখনও সুপারিশ করেননি। এমনকি অভিযুক্তদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত পরিচয় দূরের কথা, প্রতারণার ঘটনা প্রকাশের আগে তাদের চিনতেনও না।
বিশ্লেষকরা যা বলছেন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী মনে করেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া অধিদফতর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সে ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের সচিব পদমর্যাদার কেউ এর সঙ্গে জড়িত, তার সঙ্গে জড়িত অন্য কেউ। নয়তো যে হাসপাতালের নাম সেভাবে কেউ জানে না, উপর লেভেলের কারও ইঙ্গিত ছাড়া ডিজি এতে রাজি হয়ে যাবেন, সচিব-মন্ত্রী সবাই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে থাকবেন-এটা হতে পারে না।’
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর আগে কখনও এ ধরনের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দিয়েছে কিনা জানা নেই। তবে ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। তারা এখন একে অপরকে ব্লেইম দিচ্ছে-সেটা সত্য-মিথ্যা যাই হোক না কেন, এই ব্লেইম গেম থেকে বের হয়ে আসা উচিত। তাদের এই আচরণের কারণে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে, যেটা করোনার সময়ে হওয়া উচিত নয়। তাদের এখন সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার, নয়তো মানুষের জন্য সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো ব্যর্থ হয়ে যাবে।’
অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের এই সমন্বয়হীনতা সেই প্রথম থেকে। তারা যেভাবে একে অপরের মুখোমুখি হয়ে ‘ব্লেইম গেম’ খেলছে, তাতে করে ‘টিমওয়ার্ক’ থাকল না, ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। তিনি বলেন, ‘আমি তো মনে করি স্বাস্থ্য অধিদফতর কোনো বড় কাজই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া করতে পারবে না। করা সম্ভব নয়।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা একেবারেই কাম্য নয়, স্বাস্থ্যের দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কেন সমন্বয় থাকবে না, সেটাই বিস্ময়কর। কিন্তু যাই হোক না কেন, এটা সাধারণ মানুষের জন্য ভালো কিছু হচ্ছে না। এই সময়ের মতো পরিস্থিতিতে এ থেকে বের হয়ে আসা উচিত।’ আর মন্ত্রণালয় জানে না, এমন কিছু নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই ক্রান্তিলগ্নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আগের সচিব, অতিরিক্ত সচিবকে কেন বদলি করা হলো? যারা আগে থেকে কাজ করছেন তাদের বদলি করতে হচ্ছে, অবস্থাটা কত খারাপ হয়েছে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রিদওয়ান উর রহমান বলেন, ‘সমন্বয়হীনতার অভিযোগ দেশে প্রথম থেকেই ছিল। এখন মনে হচ্ছে এটা প্রকাশ্যে এসে গেছে। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের পরস্পরের দোষারোপের এ খেলা দুটি প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় অব্যবস্থাপনাকে আরও দৃশ্যমান করে তুলছে।’
করোনা মহামারির এ সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের এমন মুখোমুখি অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর তো প্রতিপক্ষ নয়। মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হলো অধিদফতর। কাকে কীভাবে যুক্ত করা হয়েছে, সেটি তো দুই বিভাগের সবার জানার কথা। গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার অর্থ হলো- মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় নেই। হয়তো কথাবার্তাও বন্ধ আছে। না হলে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি আসবে কেন? এ ধরনের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সমন্বয় না থাকলে করোনার মতো মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের পরিবর্তে আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে।