পেটে ব্যথা নিয়ে এক রোগী ভর্তি হলে তাকে কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অ্যাপেন্ডিসাইটের সমস্যা মনে করে অপারেশন করেন চিকিৎসক। শুধু তাই নয়, অপারেশনের পর ওই রোগীর পেটের মধ্যে গজ রেখেই সেলাই করে দেন। পরে পুনরায় অপারেশন করে রোগীর পেট থেকে তুলা ও গজ বের করা হয়েছে। এ ঘটনায় রোগীর স্বজনরা গতকাল রোববার দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত দুই চিকিৎসক হলেন, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার ফেয়ার হসপিটালের ডা. মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ও ডা. রাশেদ-উজ-জামান রাজিব। রোগীর ভাই তানজিদ সাফি অন্তর বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১২ এপ্রিল রাতে বরুড়ার রাজাপুর গ্রামের কাশেম শফি উল্লার মেয়ের পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। তাকে ওই দিন রাতে বরুড়া ফেয়ার হসপিটালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৩ এপ্রিল ডা. মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের তত্ত্বাবধানে ডা. রাশেদ-উজ-জামান রাজিব তার অপারেশন করেন। অপারেশনের পর পেটে গজ রেখেই সেলাই করেন ডা. রাজিব।
অপারেশন হওয়ার পরেও রোগীর পেটে ব্যথা অনুভব হয়। ব্যথা কমাতে রোগী ফের ডা. ইকবালের কাছে যান। ডা. ইকবাল তাকে হাইপাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ লিখে দেন। এভাবে ৩ মাস চলার পরেও রোগীর ব্যথা কমেনি। পরে রোগীর ভাই তানজিদ সাফি অন্তর তার বোনকে আলট্রাসনোগ্রাফি করান। এতে রোগীর পেটে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেন। গত ১৮ জুলাই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. আজিজ উল্লাহ ও ডা. মাহমুদ ওই রোগীকে পুনরায় অপারেশন করে গজ বের করেন।
রোগীর ভাই তানজিদ সাফি অন্তর বলেন, ‘ডা. ইকবাল ও রাজিব আমার বোনের রোগ নির্ণয় ছাড়া অপরারেশন করেন। পরে পেটে গজ রেখেই সেলাই করেন। আবার ব্যথা হলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করেন। ৩ মাস এমন ওষুধ খাওয়ায় আমার বোনের অবস্থা আরও খারাপ হয়। আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই, তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’
ডা. মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন অভিযোগের বিষয়ে জানান, তিনি অপারেশনের দিন ছিলেন না। রোগীর ছাড়পত্র দেওয়ার দিনও তিনি ছিলেন না। তবে তিনি রোগীকে ওষুধ দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
রোগীর অবস্থা না বুঝে কীভাবে ওষুধ দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ইকবাল বলেন, ‘ওই সময় রোগীর পিরিয়ডের সময় ছিল। পিরিয়ড হবে মনে করে ওষুধ দিয়েছি।’ ডা. রাজিব অপারেশন করলেও তার সঙ্গে সমন্বয় ছাড়া কিভাবে অপারেশন হলো সে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
ডা. রাজিব অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘ঘটনা যেহেতু চার মাস অতিক্রান্ত হয়েছে, তাই আমি বিস্তারিত জেনেই কথা বলবো।’