গাজীপুরের অগ্রণী ব্যাংক শ্রীপুর শাখায় গ্রাহকের একাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও ম্যানেজারকে বদলী করা হয়েছে।
বরখাস্তকৃতরা হলেন ওই শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মো: নজরুল ইসলাম, ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি ও ক্যাশ অফিসার মো: দোলোয়ার হোসেন। জালিয়াতির এ ঘটনা ধরা পরার পর সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়।
অগ্রণী ব্যাংকের বর্তমান ম্যানেজার মো: জাকির হোসেন জানান, গত ১ মাস ধরে নানা ধরনের অভিযোগ নিয়ে গ্রাহকরা এ শাখায় আসতে থাকেন। গ্রাহকের একাউন্টে জমা করা টাকার গড়মিলের তথ্য ও অভিযোগ নিয়ে আসলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ১ কোটি ৩০লাখ টাকা উদ্ধার করে গ্রাহকের একাউন্টে পুনরায় জমা করা সম্ভব হয়েছে। এই সমুদয় টাকা ই ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি ফেরত দিয়েছেন।
অগ্রণী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখার গ্রাহক বদরুন নাহার গত ২৭ আগস্ট ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে লিখিত এক অভিযোগে জানিয়েছেন, তার সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ৭৪২৯ তে এক লাখ টাকা জমা করেন।ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে চেক বইয়ের একটি পাতা (নং-৩৪৩৮৭৯) নিয়ে যায় । পরবর্তীতে ওই চেকের মাধ্যমে তিনি গ্রাহকের একাউন্ট থেকে এক লাখ টাকা তুলে নেন। বিষয়টি ধরা পড়লে ব্যাংক ম্যানেজারের মাধ্যমে গ্রাহকের একাউন্টে ওই টাকা জমা দেন অভিযুক্ত বদরুল হাসান সনি।
একই অভিযোগ তুলেন, গ্রাহক জুয়েনা বেগম (হিসাব নম্বর ১৭৪৮০)।তার স্বামী ও ছেলে সৌদি আরবে চাকুরি করেন। সেখান থেকে তার একাউন্টে তারা টাকা পাঠান। ১৩ জুলাই তিনি ওই একাউন্টের তথ্য জানতে গিয়ে দেখেন তার একাউন্টে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা কম। পরে বিষয়টি ম্যানেজোরকে জানালে ১৪ জুলাই ৫ লাখ এবং ১৫ জুলাই ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা তার একাউন্টে জমা করা হয়। বদরুল হাসান সনির বিরুদ্ধে ওই টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে দুই ধাপে ওই টাকা তার একাউন্টে জমা করা হয়।
অপর গ্রাহক আফতাব উদ্দিন (হিসাব নম্বর-১৯৭২৫) জানান, তিনি ৪ জুন তিন লাখ টাকা তার একাউন্টে জমা করেন। ২২ আগস্ট বিকেলে ম্যানেজার তাকে জমা ও চেক বই নিয়ে ব্যাংকে আসতে বলেন। পরদিন ব্যাংকে গেলে ম্যানেজার জানান, তার একাউন্টে তিন লাখ টাকা কম আছে। গ্রাহকের অভিযোগের পর ক্যাশ অফিসার সনি ২৩ জুলাই ওই টাকা তার একাউন্টে জমা করেন।
এ ব্যাপারে ওই ব্যাংকের সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রিন্সিপাল অফিসার মো: নজরুল ইসলাম জানান, ক্যাশ অফিসার বদরুল ইসলাম সনি নিজেই গ্রাহকের স্বাক্ষর নকল করে চেক বই উত্তোলন করেছে। পরে চেকে নিজেই গ্রাহকের স্বাক্ষর দিয়ে টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে। ওই সব চেক এন্ট্রি করার সময় চেকের নম্বর এন্ট্রি না করেই টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। নজরুল ইসলাম আরো জানান, অনেক সময় গ্রাহক ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে গেলে গ্রাহকের টাকা তার একাউন্টে জমা না করে তা আত্মসাৎ করেছেন সনি। অর্থাৎ সনি গ্রাহকের টাকা ডেবিট করেও আত্মসাৎ করেছেন আবার ক্রেডিট করেও আত্মসাৎ করেছেন। সম্প্রতি কাপাসিয়া শাখার একজন অফিসারকে এ শাখায় কাজে সহযোগিতার জন্য নিয়ে আসা হয়। এসব বিষয় তার কাছে ধরা পড়ার পরই তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেন। কর্তৃপক্ষ একটি অডিট টিম গঠন করে ব্যাংকের যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে উপরোক্ত বিষয়ের সত্যতা পেলে প্রিন্সিপাল অফিসার নজরুল ইসলাম, ক্যাশ অফিসার বদরুল ইসলাম সনি ও দেলোয়ার হোসেন কে সাময়িক বহিষ্কার এবং ম্যানেজার আব্দুল হালিম কে অন্যত্র সরিয়ে নেয়।
অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের গাজীপুর জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক শামীম আরা সুলতানা গণি ক্রাইম প্রতিদিনকে জানান, সম্প্রতি অগ্রনী ব্যাংকের শ্রীপুর শাখায় গ্রাহকেদের ব্যাংক হিসাবে সঞ্চিত রাখা টাকার গড়মিলের তথ্য জানার পর অগ্রনী ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যান এবং অডিট টিম গঠন করে তদন্ত শুরু করা হয়। প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শ্রীপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মো: নজরুল ইসলাম, ক্যাশ অফিসার বদরুল হাসান সনি ও ক্যাশ অফিসার মো: দোলোয়ার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত ও শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল হালিমকে ঘটনার ব্যাখ্যা তলব করে অগ্রনী ব্যাংকের ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।