দেশের অবকাঠামোগত অগ্রগতির সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়া আট মেগা প্রকল্প। এর মধ্যে অগ্রগতি বিচারে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। সবশেষ জুলাই মাসের হিসাব বলছে, প্রকল্পটির মূল সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে সার্বিকভাবে প্রকল্পটির ৮১ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে এরই মধ্য। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের আঘাত মোকাবিলা না করতে হলে এই অগ্রগতির হার আরেকটু বেশিই হতো।
স্বপ্নের পদ্মাসেতু ছাড়াও বাকি মেগা প্রকল্পগুলোর কাজও এগিয়ে চলেছে। ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের মুখ দেখতে যাচ্ছে এসব প্রকল্প। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, এলএনজি টার্মিনাল ও গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপন, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। তবে এই প্রকল্পগুলোর কোনোটির বাস্তব অগ্রগতিই ৫০ শতাংশ অতিক্রম করেনি।
জুলাই মাস পর্যন্ত ফাস্ট ট্র্যাক অগ্রগতি প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে সম্প্রতি প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সারাবাংলার কাছে প্রতিবেদনটির কপি সংরক্ষিত রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোতে বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। এগুলোর গতি বাড়াতে সবকিছুই করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিদেশি ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়াররা প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক কোনো সংকটও নেই। আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ সরবরাহ করছি। যখন যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার, সেটি আমরা নিচ্ছি। সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর আমরা রাখছি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে প্রকল্পগুলোতে গত কয়েক মাসে কিছুটা হলেও স্থবিরতা এসেছিল। তবে করোনার প্রভাব কাটিয়ে প্রকল্পগুলো ফের গতি পেতে শুরু করেছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরা হলো।
পদ্মাসেতু প্রকল্প
২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে এ প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। শুরু থেকে গত জুলাই পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৪২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ শতভাগ শেষ। এছাড়া নদী শাসন কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৪ শতাংশ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ শতাংশ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প
২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মোট ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুরু থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৩১ হাজার ৭৪৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর্থিক ও সার্বিক অগ্রগতি ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। শুরু থেকে গত জুলাই মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭২১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৪৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
মেট্রোরেল লাইন-৬
২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ১১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪৭ দশমিক ১০ শতাংশে। করোনার কারণে কয়েক মাস কাজ বন্ধ থাকলেও এখন পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ
২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ২১ কোটি টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৩ দশমিক ১৮ শতাংশ আর সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মোট ব্যয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। জুলা ইমাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ১৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৩৯ শতাংশে। এছাড়া প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছাকাছি ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ
২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত জুলাই পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ৪ হাজার ৯৫৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তাছাড়া সার্বিক ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪১ শতাংশে।
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ ও গ্যাস পাইপ লাইন স্থাপন
এ প্রকল্পের আওতায় ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফেকেশন ইউনিট টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপ লাইন নির্মাণ, আনোয়ারা-ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের প্রারম্ভিক কার্যাবলী ও মালামাল সংগ্রহের কাজ এরই মধ্যে শতভাগ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি হুকুম দখলের কার্যক্রম গড়ে ৯৯ দশমিক ১৬ ভাগ শেষ হয়েছে।