ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে পথশিশু জিনিয়াকে ‘অপহরণের’ ঘটনায় গ্রেপ্তার লোপা তালুকদারের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তার মেয়েও। তবে তাকে এখনো আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাকে পুলিশ খুঁজছে বলে জানা গেছে। জিনিয়া অপহরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) দুই দিনের রিমান্ডে রয়েছেন লোপা।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অনেককে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রচুর টাকা নিয়েছেন লোপা। এ অভিযোগে দু‘জন ইতিপূর্বে শাহবাগ ও মতিঝিল থানায় জিডি করেছেন। এখন লোপার বিরুদ্ধে তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
ডিবির রমনা অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার ও মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা মিশু বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, লোপার অতীত ভালো নয়, বাড়ি পটুয়াখালী। সেখানে অন্তঃসত্ত্বা নারী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন তিনি। সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন সময় বেআইনি কাজে যুক্ত হয়েছেন তিনি।
এখন তার মেয়েকেও খুঁজছে পুলিশ। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, জিনিয়াকে দিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করানোর পরিকল্পনা থেকেই শিশুটিকে অপহরণ করা হয়। গত সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার আমতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিনিয়াকে উদ্ধার করা হয়। এসময় গ্রেপ্তার করা হয় লোপা তালুকদারকে। এরপর থেকেই তার বিষয়ে নানা ধরনের তথ্য সামনে আসতে শুরু করে।
জানা গেছে, লোপা তালুকদার অনেকেরই পরিচিত। মন্ত্রী, এমপি, এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও ছবি তুলেছেন। তিনি নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকার পরিচিত মুখ। বড় বড় সাংবাদিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের খবর এখন ভেসে বেড়াচ্ছে।
তাকে গ্রেপ্তারের পর ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহাবুবুর রহমান বলেন, লোপা তালুকদার বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে জিনিয়াকে ফুঁসলিয়ে নারায়ণগঞ্জে তার বোনের বাড়িতে রাখে। তার উদ্দেশ্য ভালো ছিল না, খারাপ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তাকে প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, তার মাকে না জানিয়ে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া তার মা বা কেউ যাতে না জানে সে ব্যবস্থাও নিয়েছে। সেখানে সে রেখেছিল, চেষ্টা করেছে এটা যাতে আর কেউ না জানে। কাজেই অসৎ উদ্দেশ্যেই তাকে নিয়েছে বলে আমরা মনে করি।
মিশু বিশ্বাস গণমাধ্যমকে জানান, লোপা নিজেকে কথিত টিভি চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের স্টাফ রিপোর্টার বলে পরিচয় দেন, ভিজিটিং কার্ডও দেখান। তবে মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে তার যুক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জিজ্ঞাসাবাদে লোপা দাবি করেছেন, জিনিয়াকে লালন-পালন করে বড় করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে তাকে নেয়ার সময় মায়ের সম্মতি না নেয়া কিংবা আইনি প্রক্রিয়ায় না যাওয়ার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি। উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করা লোপার কথার সঙ্গে মিল পাচ্ছে না পুলিশ। তার কথা বিশ্বাসযোগ্যও নয় বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।
তার ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা গেছে, তিনি অগ্নি টিভির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এছাড়া আওয়ামী পেশাজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া নবচেতনার সিনিয়র রিপোর্টার তিনি। মোহনা টিভির সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার বলেও উল্লেখ করেছেন।
এখানেই শেষ হয় তিনি শীর্ষ টিভির ডিরেক্টর। সাপ্তাহিক শীর্ষ সমাচারের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। বাংলাদেশ কবি পরিষদের কবিও তিনি। তিনি নিজেকে সিনিয়র সাংবাদিক ও আওয়ামী পেশাজীবী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন।
এছাড়া ঢাকা ও পটুয়াখালীসহ আরও কয়েকটি স্থানে গণমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি জড়িত বলে ফেসবুক প্রোফাইলে উল্লেখ করেছেন। ফেসবুকে অনেকে জানিয়েছেন, তার নামে অপহরণ, মানব পাচারসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। কিন্তু তিনি অবাধে সব জায়গায় বিচরণ করছেন। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। যদিও তাৎক্ষনিকভাবে এসব তথ্যের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।