ধর্ষণ প্রতিরোধে বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা কেন?

  • বিবিসি বাংলা
  • ২০২০-১০-০৮ ১৬:০৯:২৯
popular bangla newspaper, daily news paper, breaking news, current news, online bangla newspaper, online paper, bd news, bangladeshi potrika, bangladeshi news portal, all bangla newspaper, bangla news, bd newspaper, bangla news 24, live, sports, polities, entertainment, lifestyle, country news, Breaking News, Crime protidin. Crime News, Online news portal, Crime News 24, Crime bangla news, National, International, Live news, daily Crime news, Online news portal, bangladeshi newspaper, bangladesh news, bengali news paper, news 24, bangladesh newspaper, latest bangla news, Deshe Bideshe, News portal, Bangla News online, bangladeshi news online, bdnews online, 24 news online, English News online, World news service, daily news bangla, Top bangla news, latest news, Bangla news, online news, bangla news website, bangladeshi online news site, bangla news web site, all bangla newspaper, newspaper, all bangla news, newspaper bd, online newspapers bangladesh, bangla potrika, bangladesh newspaper online, all news paper, news paper, all online bangla newspaper, bangla news paper, all newspaper bangladesh, bangladesh news papers, online bangla newspaper, news paper bangla, all bangla online newspaper, bdnewspapers, bd bangla news paper, bangla newspaper com, bangla newspaper all, all bangla newspaper bd, bangladesh newspapers online, daily news paper in bangladesh, bd all news paper, daily newspaper in bangladesh, Bangladesh pratidin, crime pratidin, অনলাইন, পত্রিকা, বাংলাদেশ, আজকের পত্রিকা, আন্তর্জাতিক, অর্থনীতি, খেলা, বিনোদন, ফিচার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চলচ্চিত্র, ঢালিউড, বলিউড, হলিউড, বাংলা গান, মঞ্চ, টেলিভিশন, নকশা, ছুটির দিনে, আনন্দ, অন্য আলো, সাহিত্য, বন্ধুসভা,কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, অটোমোবাইল, মহাকাশ, গেমস, মাল্টিমিডিয়া, রাজনীতি, সরকার, অপরাধ, আইন ও বিচার, পরিবেশ, দুর্ঘটনা, সংসদ, রাজধানী, শেয়ার বাজার, বাণিজ্য, পোশাক শিল্প, ক্রিকেট, ফুটবল, লাইভ স্কোর, Editor, সম্পাদক, এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ, A Z M Mainul Islam Palash, Brahmanbaria, Brahmanbaria Protidin, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিদিন, Bandarban, Bandarban Protidin, বান্দরবন, বান্দরবন প্রতিদিন, Barguna, Barguna Protidin, বরগুনা, বরগুনা প্রতিদিন, Barisal, Barisal Protidin, বরিশাল, বরিশাল প্রতিদিন, Bagerhat, Bagerhat Protidin, বাগেরহাট, বাগেরহাট প্রতিদিন, Bhola, Bhola Protidin, ভোলা, ভোলা প্রতিদিন, Bogra, Bogra Protidin, বগুড়া, বগুড়া প্রতিদিন, Chandpur, Chandpur Protidin, চাঁদপুর, চাঁদপুর প্রতিদিন, Chittagong, Chittagong Protidin, চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম প্রতিদিন, Chuadanga, Chuadanga Protidin, চুয়াডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা প্রতিদিন, Comilla, Comilla Protidin, কুমিল্লা, কুমিল্লা প্রতিদিন, Cox's Bazar, Cox's Bazar Protidin, কক্সবাজার, কক্সবাজার প্রতিদিন, Dhaka, Dhaka Protidin, ঢাকা, ঢাকা প্রতিদিন, Dinajpur, Dinajpur Protidin, দিনাজপুর, দিনাজপুর প্রতিদিন, Faridpur , Faridpur Protidin, ফরিদপুর, ফরিদপুর প্রতিদিন, Feni, Feni Protidin, ফেনী, ফেনী প্রতিদিন, Gaibandha, Gaibandha Protidin, গাইবান্ধা, গাইবান্ধা প্রতিদিন, Gazipur, Gazipur Protidin, গাজীপুর, গাজীপুর প্রতিদিন, Gopalganj, Gopalganj Protidin, গোপালগঞ্জ, গোপালগঞ্জ প্রতিদিন, Habiganj, Habiganj Protidin, হবিগঞ্জ, হবিগঞ্জ প্রতিদিন, Jaipurhat, Jaipurhat Protidin, জয়পুরহাট, জয়পুরহাট প্রতিদিন, Jamalpur, Jamalpur Protidin, জামালপুর, জামালপুর প্রতিদিন, Jessore, Jessore Protidin, যশোর, যশোর প্রতিদিন, Jhalakathi, Jhalakathi Protidin, ঝালকাঠী, ঝালকাঠী প্রতিদিন, Jhinaidah, Jhinaidah Protidin, ঝিনাইদাহ, ঝিনাইদাহ প্রতিদিন, Khagrachari, Khagrachari Protidin, খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি প্রতিদিন, Khulna, Khulna Protidin, খুলনা, খুলনা প্রতিদিন, Kishoreganj, Kishoreganj Protidin, কিশোরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ প্রতিদিন, Kurigram, Kurigram Protidin, কুড়িগ্রাম, কুড়িগ্রাম প্রতিদিন, Kushtia, Kushtia Protidin, কুষ্টিয়া, কুষ্টিয়া প্রতিদিন, Lakshmipur, Lakshmipur Protidin, লক্ষ্মীপুর, লক্ষ্মীপুর প্রতিদিন, Lalmonirhat, Lalmonirhat Protidin, লালমনিরহাট, লালমনিরহাট প্রতিদিন, Madaripur, Madaripur Protidin, মাদারীপুর, মাদারীপুর প্রতিদিন, Magura, Magura Protidin, মাগুরা, মাগুরা প্রতিদিন, Manikganj, Manikganj Protidin, মানিকগঞ্জ, মানিকগঞ্জ প্রতিদিন, Meherpur, Meherpur Protidin, মেহেরপুর, মেহেরপুর প্রতিদিন, Moulvibazar, Moulvibazar Protidin, মৌলভীবাজার, মৌলভীবাজার প্রতিদিন, Munshiganj, Munshiganj Protidin, মুন্সীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ প্রতিদিন, Mymensingh, Mymensingh Protidin, ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ প্রতিদিন, Naogaon, Naogaon Protidin, নওগাঁ, নওগাঁ প্রতিদিন, Narayanganj, Narayanganj Protidin, নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ প্রতিদিন, Narsingdi, Narsingdi Protidin, নরসিংদী, নরসিংদী প্রতিদিন, Natore , Natore Protidin, নাটোর, নাটোর প্রতিদিন, Nawabgonj, Nawabgonj Protidin, নওয়াবগঞ্জ, নওয়াবগঞ্জ প্রতিদিন, Netrokona, Netrokona Protidin, নেত্রকোনা, নেত্রকোনা প্রতিদিন, Nilphamari, Nilphamari Protidin, নীলফামারী, নীলফামারী প্রতিদিন, Noakhali, Noakhali Protidin, নোয়াখালী, নোয়াখালী প্রতিদিন, Norai, Norai Protidin, নড়াইল, নড়াইল প্রতিদিন, Pabna, Pabna Protidin, পাবনা, পাবনা প্রতিদিন, Panchagarh, Panchagarh Protidin, পঞ্চগড়, পঞ্চগড় প্রতিদিন, Patuakhali, Patuakhali Protidin, পটুয়াখালী, পটুয়াখালী প্রতিদিন, Pirojpur, Pirojpur Protidin, পিরোজপুর, পিরোজপুর প্রতিদিন, Rajbari, Rajbari Protidin, রাজবাড়ী, রাজবাড়ী প্রতিদিন, Rajshahi , Rajshahi Protidin, রাজশাহী, রাজশাহী প্রতিদিন, Rangamati, Rangamati Protidin, রাঙ্গামাটি, রাঙ্গামাটি প্রতিদিন, Rangpur, Rangpur Protidin, রংপুর, রংপুর প্রতিদিন, Satkhira, Satkhira Protidin, সাতক্ষীরা, সাতক্ষীরা প্রতিদিন, Shariyatpur, Shariyatpur Protidin, শরীয়তপুর, শরীয়তপুর প্রতিদিন, Sherpur, Sherpur Protidin, শেরপুর, শেরপুর প্রতিদিন, Sirajgonj, Sirajgonj Protidin, সিরাজগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ প্রতিদিন, Sunamganj, Sunamganj Protidin, সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ প্রতিদিন, Sylhet, Sylhet Protidin, সিলেট, সিলেট প্রতিদিন, Tangail, Tangail Protidin, টাঙ্গাইল, টাঙ্গাইল প্রতিদিন, Thakurgaon, Thakurgaon Protidin, ঠাকুরগাঁও, ঠাকুরগাঁও প্রতিদিন, ক্রাইম প্রতিদিন, ক্রাইম, প্রতিদিন, Crime, Protidin, অপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ চাই, অমুবাচা, crimeprotidin

সম্প্রতি বাংলাদেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার খবরের কারণে আবারো আলোচনায় এসেছে 'ক্রসফায়ার' এর বিষয়টি।

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সংবিধান পরিপন্থী এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করে দেশি এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। কিন্তু বাংলাদেশে ২০০৪ সালের পর থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে 'ক্রসফায়ার' নাম নিয়ে আলোচনায় স্থান দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর, সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে 'ক্রসফায়ার' ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরণের বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

অনেকে বলছেন, ধর্ষণের মতো নিষ্ঠুর ঘটনা বন্ধ করতে হলে ধর্ষণকারীদের শাস্তি হিসেবে 'ক্রসফায়ার' দিতে হবে -অর্থাৎ তাকে বিনা বিচারে হত্যা করতে হবে - যাতে এ ধরণের ঘটনা ঘটানোর প্রতি ভয় তৈরি হয়। এমনকি এ ধরণের কিছু ফেসবুক গ্রুপও তৈরি করা হয়েছে।

আবার অনেকেই বলছেন যে, ক্রসফায়ারের মাধ্যমে আসলে ধর্ষণের মতো অপরাধ থামানো সম্ভব নয়। তবে এ'ধরণের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডর আদৌ কোন সাংবিধানিক বা নৈতিক ভিত্তি আছে কি না, তা নিয়ে খুব একটা আলোচনা চোখে পড়ছে না।

রহিম উদ্দিন শিকদার নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী বলেছেন, "নোয়াখালীর ধর্ষকসহ সকল ধর্ষণকারীদের ক্রসফায়ার দিন। ক্রসফায়ারই এদের জন্য একমাত্র বিচার।"

আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী তানভীর আহমেদ তার স্ট্যাটাসে বলেছেন, "ধর্ষণকারীর ক্রসফায়ার হোক।"

তবে অনেক ব্যবহারকারীই আবার ক্রসফায়ারের বিষয়টির বিপক্ষে আওয়াজ তুলেছেন। এরকমই একজন জায়াদুল আহসান পিন্টু। তিনি বলেছেন, "আপনি যেমন ক্ষমতার বলে ক্রসফায়ার চান, ধর্ষকও ক্ষমতার বলেই ধর্ষণ করে। বিষয়টা একই।"

মি. আহসানের এই কথাকেই সমর্থন করেছেন আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী তপন মাহমুদ লিমন। তিনি বলেছেন, "মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ২০১৮-২০১৯ সালে ৪২৪ জন ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ কি মাদকমুক্ত হয়েছে? কতদিন ধরে এই ক্রসফায়ার চালালে সব নিয়ন্ত্রণে আসবে? দয়া করে জানাবেন?"

দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসাব বলছে, ২০০১ সাল থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় বিশ বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৪০০২ জন মানুষ।

গত দুই বছরে যতগুলো ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগই মাদক বিরোধী অভিযানে হয়েছে বলে এর আগে জানিয়েছিল পুলিশ।

তবে এর পরও মাদকের চোরাচালান বা এ সম্পর্কিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

মানবাধিকার-কর্মী নুর খান লিটন বলেন, "গত কয়েক বছরে, বাংলাদেশে একের পর এক ক্রসফায়ারে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বা অপরাধ প্রবণতা এখন পর্যন্ত কমেনি।"

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাবে ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন বাহিনীর হাতে প্রায় চার হাজার বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার আইনজীবী এলিনা খান বলেন, মাদক বিরোধী অভিযানে যাদেরকে ক্রসফায়ারে দেয়া হচ্ছে তারা খুবই চুনোপুঁটি ধরণের মানুষ।

তার মতে, যারা ক্ষমতাবান, যারা মাদক চোরাচালানের পেছনে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করছে তারা কখনোই ক্রসফায়ারে পড়ছে না বা দেয়া হচ্ছে না। বরং এদের মধ্যে অনেকের নাম আসার পরেও উল্টো তারা রাজনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থান পাচ্ছেন এমনকি জনপ্রতিনিধিও নির্বাচিত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ক্রসফায়ার দিয়ে কি ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব?
ক্রসফায়ার বা বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কি আসলে ধর্ষণের মতো অপরাধ কমাতে বা বন্ধ করতে পারবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে মানবাধিকার কর্মী এবং ধর্ষণ নিয়ে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্টরা সবাই একমত হয়েছেন যে, ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দিয়ে ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা বলেন, "মানুষ আসলে এতো বেশি বিরক্ত হয়ে গেছে, ভয় পাচ্ছে, হতাশ হয়ে গেছে যে তারা ভাবছে যে ক্রসফায়ার হলে হয়তো এর সমাধান আসবে। কিন্তু এটি ভুল ধারণা"।

তিনি মনে করেন ক্রসফায়ার একটি অনৈতিক এবং অসাংবিধানিক বিষয়। এটা এক ধরণের বিচারহীন মৃত্যু।

ক্রসফায়ারের প্রচলন চালু হলে কোন ধর্ষণের ঘটনায় যদি নির্দোষ কারো মৃত্যু হয় তাহলে সে দায়ভার জনগণ নেবে কিনা সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

"আমি কখনোই মনে করি না ক্রসফায়ার করে বা একটা অন্যায় করে আরেকটা অন্যায়কে ঢাকা যায় না।"

একই ধরণের মত দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী এলিনা খানও। তিনি বলেন, ক্রসফায়ার কখনোই সমাধান হতে পারে না। কারণ এর কারণে নিরপরাধ মানুষও ক্রসফায়ারের শিকার হতে পারে।

তিনি বলেন, যাকে ক্রসফায়ার দেয়া হবে সে মারা যাবে। কিন্তু মানুষের মধ্যে যদি মূল্যবোধ, নৈতিকতা না থাকে তাহলে শুধু ক্রসফায়ার দিয়ে কিছু হবে না।"

"একটা সুশাসন এবং গণতান্ত্রিক দেশে কখনোই ক্রসফায়ার কোন রেমেডি হতে পারে না।" তিনি বলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণের প্রতি রাষ্ট্র এখনো কোন ধরণের সুনজর দেয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণের প্রতি রাষ্ট্র এখনো কোন ধরণের সুনজর দেয়নি।

আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি বন্ধ এবং যুব সমাজকে কাজে লাগানো না গেলে ধর্ষণ, মাদকের মতো অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

মানবাধিকার-কর্মী নুর খান লিটন বলেন, ক্রসফায়ার একটি বিচার বহির্ভূত ব্যাপার। আর তাই কোন অপরাধের ক্ষেত্রে বিচার-বহির্ভূত হাতিয়ার ব্যবহারের পক্ষে নন তিনি।

তিনি বলেন, যারা ক্রসফায়ারকে ধর্ষণ প্রতিরোধের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন তারা মূল বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।

"যে দেশে গণতন্ত্র থাকবে, সংবিধান থাকবে এবং আইন আছে, সেখানে আইনের যথাযথ প্রয়োগটাই জরুরী।"

ক্রসফায়ার হবে অরাজকতা
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ক্রসফায়ার যদি বৈধতা পায় তাহলে যে সমস্যা হবে তা হলো প্রায় সব মানুষ আইন হাতে তুলে নেয়ার জন্য উদ্যত হবে।

"জমি-জমা, সম্পত্তির হিসাব বা অন্য যেকোন শত্রুতা থাকলেও মানুষ একে অন্যকে মেরে ফেলতে দ্বিধা-বোধ করবে না এবং অভিযোগ তুলবে যে সে আমাকে ধর্ষণ করতে এসেছিল," বলেন মানবাধিকার-কর্মী শিপা হাফিজা।

তার মতে, ধর্ষণ বাড়ছে বিচারহীনতার জন্য। কারণ এ ঘটনায় বিচার হচ্ছে না, বিচার দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আর এর জন্য সমাধান হিসেবে যদি ক্রসফায়ার বৈধ হয় তাহলে সেটি হবে অরাজকতা।

"একটা স্বাধীন রাষ্ট্রে এ ধরণের অরাজকতা কখনো আমরা চাইতে পারি না।"

ক্রসফায়ার যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হলে মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিতে দ্বিধা করবে না বলে আশঙ্কার কথা জানানো হয়।

"বাংলাদেশ তখন স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক দেশ বলে আর পরিচিত হবে না," বলেন শিপা হাফিজা।

তার মতে, ক্রসফায়ার একটি ভয়ংকর বিষয় যেখানে জবাবদিহিতা থাকে না। আর যেখানে জবাবদিহিতা থাকে না সেখানে সুশাসনও থাকে না।

নুর খান লিটন বলেন, "এটি সমাজের সর্ব স্তরে বৈধতা পেলে আইনের শাসন আর থাকবে না। বরং হত্যার সংস্কৃতি, প্রতিশোধের সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। যা আদিম বর্বরতার দিকে মানুষকে নিয়ে যাবে।"

একটি অপরাধ অনেকগুলো অপরাধের জন্ম দেবে বলেও মনে করেন তিনি।

ক্রসফায়ারের প্রতি সমর্থন বাড়ছে কেন?
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা বলেন, ২০১৪ সাল থেকে নারী ও শিশুর উপর আগ্রাসন অনেক বেশি হারে বাড়তে থাকে।

তিনি জানান, ২০১৭ সালে দেখা যায় যে, আগের বছরগুলোর তুলনায় সে বছর নারীর উপর সর্বোচ্চ হারে ধর্ষণ এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সর্বোচ্চ হারটা হচ্ছে সেই সব ঘটনার আলোকে যেসব ধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো। আর এর বাইরে তো অপ্রকাশিত আরো অনেক ঘটনা রয়েই গেছে।

২০১৮ থেকে ২০১৯ সালে দেখা গেলো যে, দ্বিগুণ সংখ্যক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা প্রায় দেড়গুণ বেশি।

"এই ক্রমাগত ধর্ষণকে আমরা সংস্কৃতি হিসেবে মেনে নিয়েছে। এটা আমাদের কাছে ডাল-ভাতের মতো একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে," শিপা হাফিজা বলেন।

তার মতে, ধর্ষণের প্রতি রাষ্ট্র এখনো কোন ধরণের সুনজর দেয়নি। কারণ দেড়শ বছরের ধরে যে আইন দিয়ে বিচার করা হয় সেখানে ধর্ষণের সংজ্ঞায় সমস্যা রয়েছে। আদালত, প্রশাসন-সবক্ষেত্রেই অক্ষমতা রয়েছে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ধর্ষণের বিচার না পাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরণের চরম হতাশা তৈরি হয়।
ছবির উৎস,GETTY IMAGES
ছবির ক্যাপশান,
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ধর্ষণের বিচার না পাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরণের চরম হতাশা তৈরি হয়।

"সারা জীবন ভয় পেতে পেতে মানুষের মধ্যে যে হতাশা হয়েছে তা থেকে মানুষ বলছে যে ধর্ষকদের মেরে ফেলো। কিন্তু খুব বেশি দিন নাই যখন হতাশা ক্ষোভে রূপ নেবে, তখন মানুষকে সামাল দিতে রাষ্ট্রের সমস্যা হবে"।

তার আগেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

মানবাধিকার আইনজীবী এলিনা খান বলেন, ধর্ষণের বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা থাকলেও সেটি না হয়ে বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে।

এক্ষেত্রে শুধু আদালত নয় বরং থানা পর্যায় থেকে দীর্ঘমেয়াদী শুরু হয়।

"একটি ধর্ষণের ঘটনায় তদন্ত করা, চার্জশিট দেয়া, আসামীর সুরক্ষার মতো নানা স্পর্শকাতর বিষয় থাকে। এগুলোতে জোর না দেয়ার কারণে সুশাসন মানুষ পাচ্ছে না।"

ফলে বিচার না পাওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরণের চরম হতাশা তৈরি হয়।

"মানুষ ভাবছে যে যেখানে আইন থাকার পরও কোন কাজ হচ্ছে না, বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে তাহলে মেরেই ফেল। ক্রসফায়ারের দাবিটাও তারই বহিঃপ্রকাশ," বলেন এলিনা খান।

মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি মানুষের মনে এ ধরণের একটি অবস্থা তৈরি করে। এছাড়া ক্ষমতা প্রদর্শনের রাজনীতির কারণে মানুষের মনে আশঙ্কা থাকে যে অপরাধীরা তাদের ক্ষমতা, অর্থ এবং অবস্থানের কারণে হয়তো পার পেয়ে যাবে।

যার কারণে তাদের মধ্যে একটি ধারণা ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয় যে ক্রসফায়ারই একমাত্র সমাধান। বিচার ব্যবস্থাকে যথাযথ করা হলে মানুষকে এ ধরণের চিন্তা করতে হতো না বলেও মনে করেন তিনি।

সমাধান কী হওয়া উচিত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণ বন্ধের ক্ষেত্রে যে দাবি ওঠা উচিত সেটি হচ্ছে দ্রুত বিচার এবং সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কোন অন্যায় যেন বিচারের বাইরে না থাকে সেটি নিশ্চিত হতে হবে।

তারা বলছেন, বিচার নিশ্চিত হলে যারা ধর্ষক বা যারা সমর্থন দেয় তারা বুঝতে পারবে যে এটা কত জঘন্য অপরাধ। তাহলে তারা এটা থেকে বিরত থাকবে।

এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয় গত জুলাইয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার ঘটনা।

শিপা হাফিজা বলেন, গত ১০ বছর ধরে ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে নানা ধরণের প্রতিবাদ হলেও তা বন্ধ হয়নি। কিন্তু সিনহার হত্যার পর যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বুঝতে শুরু করলো যে এ ঘটনায় বিচার হবে তখন কিন্তু ক্রসফায়ার বন্ধ হয়ে গেছে। গত দুই মাসে মাত্র একটি ক্রসফায়ার হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাষ্ট্রই পারে সমাজকে একটা সংস্কৃতি দিতে যেখানে নারী-পুরুষ সবাই স্ব-সম্মানে থাকতে পারে। ক্রসফায়ার বিষয়টি এই সব গুলো বিষয়ের একটি উল্টো দিক বলে মনে করেন তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

 
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
-->

Shotoborshe Mujib, A Z M Mainul Islam Palash, Crime Protidin Media And Publication