বিগত কয়েকদিন ধরে ধর্ষণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুব সরব। ফেইসবুক খুললে ধর্ষণ ছাড়া তেমন কোন ইস্যু চোখে পড়ছে না। লোকজন বুঝে হোক আর আবেগে হোক- রাতারাতি ধর্ষকদের সাজা চাচ্ছেন। পারলে সে রাতেই অভিযুক্তদের ক্রসফায়ারে দিতে বলেছেন অনেকে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় সরকার যেমন বিব্রত, আমরাও তেমনি বিব্রত।
ঘটনার সূত্রপাত কোটা সংরক্ষণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত ছাত্র অধিকার পরিষদের এক নেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ দিয়ে, যাহা রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়ে নুরু গংদের ফাসিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ছেয়েছিল একদল। তারপর সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে গনধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশে প্রতিবাদের জড় উঠলেও মূলত বিস্ফোরণ ঘটছে ৪ অক্টোবর নোয়াখালির বেগমগঞ্জের এক গৃহবধুকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর। যাহা এখন ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে রুপ নিয়েছে।
যদিও এরই মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে। তারপরও ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে সারাদেশের পাশাপাশি শাহবাগও ছিল ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে মুখর। এতে ঢাকার বাহিরের বিভিন্ন জেলা থেকে আন্দোলনকারীরা এসে যোগ দিয়েছিলেন। যাদের দাবি ছিল ধর্ষণের সাথে জড়িত প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে যৌক্তিক প্রতিবাদ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আন্দোলন, অনলাইন-অফলাইনে সরব সোচ্চার কন্ঠ, দলমত নির্বিশেষে ধর্ষণ ও ধর্ষকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার সকল ইতিবাচক প্রচেষ্টাকে আন্তরিক স্বাগতম ও অভিবাদন জানাই এবং একসাথে আওয়াজ তুলি, ঘৃণ্যতম অপরাধ ও অপরাধীর বিরুদ্ধে। কারন ধর্ষণ সামাজিক ব্যাধি, মোটেও রাজনৈতিক ইস্যু না। তাহলে কারা এই সামাজিক ব্যাধিকে রাজনৈতিক রঙ লাগানোর কাজে নেমেছেন? আপনারা কি ধর্ষণকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করতে পারবেন? পারবেন না, কারন এটা রাজনৈতিক ইস্যু না, এটা সামাজিক ইস্যু, এর জন্য প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে ধর্ষণ ও ধর্ষকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
“শ’তে শেখ হাসিনা, তুই ধর্ষক, তুই ধর্ষক” প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে, প্রধানমন্ত্রীর ছবিতে আগুণ লাগিয়ে এবং ‘ধর্ষণের বিচার পরে আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাই’ শ্লোগান দিয়ে আপনারা যে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন নৎসাত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চান সেটা বুঝা কঠিন না। এসব নিশত হীন রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা যা ঘৃণিত ও অপরাধও বটে।
অপ-রাজনীতি, ত্রান চোর চেয়ারম্যান, গুণ্ডা পালা এমপি আর টাকায় কেনা পুলিশ দিয়ে সমাজ চলতে পারে না। দলীয়ভিত্তিতে সমাজ এখন খণ্ড খণ্ড হয়ে আছে। জানাযাও এখন দলীয় ভিত্তিতে হয়। সমাজের মেরামত প্রয়োজন। ক্রসফায়ার, কেতাবি আইন, দুর্নীতিগ্রস্থ প্রশাসন দিয়ে কোনকালেই সমাজের শৃঙ্খলা আসবে না। যতদিন ভদ্রলোকরা সমাজের নেতৃত্বে আসবে না, ততদিন এটাই চলবে।
যেখানে সমাজ নেই, মানুষের মর্যাদা নেই, স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা কেউ না, দলীয় নেতার পালা গুণ্ডারা রাজত্ব করে, সেখানে আপনার-আমার বস্ত্র থাকা আর বেগমগঞ্জের গৃহবধূর বস্ত্রখোলার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। সম্ভ্রম কারো অবশিষ্ট নেই।
আপনি কি মনে করেন ধর্ষণের শাস্তি লিঙ্গ কর্তন, মৃত্যুদণ্ড কিংবা ক্রসফায়ার হলেই ধর্ষণ মুক্ত বাংলাদেশ হবে? অবশ্যই না।
ধর্ষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে আগে প্রেম-ভালোবাসার নামে অবাদ মেলামেশা ও পরকিয়া বন্ধে আইন ও শাস্তি জরুরী। কারন নারী-পুরুষ উভয়ের সম্মতিতে যে যৌনাচার ঘটে সেটার নাম প্রেম। আর নারীর অসম্মতিতে জোর-জবরদস্তিমূলক যে যৌনাচার ঘটে সেটা ধর্ষণ। দেশে বর্তমানে যত ধর্ষন হচ্ছে তার ৯৫% বিকৃত প্রেম ভালোবাসার নামক শব্দ দিয়ে শুরু, আর বাকি ৫% ধর্ষণ জোর-জবরদস্তিমূলক, নেক্কারজনক। তাই ধর্ষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আইনের পাশাপাশি কাউন্সিলিন করতে হবে। প্রতিবাদী আওয়াজ তুলতে হবে প্রতিটি ঘর, বাড়ি ও সমাজ থেকে।
লেখক
এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ
সম্পাদক
ক্রাইম প্রতিদিন
প্রতিষ্টাতা ও চেয়ারম্যান
অপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ চাই