একটি বেসরকারি সংস্থার বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের জন্য নিজের ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয় ব্যবহার করে বিপাকে পড়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুরের তৃণমূল এমপি অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী।
ওই বিজ্ঞাপনের কারণে ‘অফিস অব প্রফিট’ আইন লঙ্ঘন হওয়ায় তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে কিনা তা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
ভারতীয় আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যদের আদর্শ আচরণ বিধিতে যে ‘স্বার্থের সংঘাত’ সংক্রান্ত নিয়ম রয়েছে, মিমি চক্রবর্তী তা সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করেছেন। মিমি অবশ্য বলছেন, তিনি নিয়ম জানতেন না।
খবরে বলা হয়, যে ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেই ব্র্যান্ডের নারকেল তেলের বিজ্ঞাপন মিমি চক্রবর্তী অনেক দিন ধরেই
করেন। কিন্তু ওই সংস্থা সম্প্রতি যে নতুন বিজ্ঞাপন বাজারে এনেছে, তাতে মিমি চক্রবর্তী নিজের ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয় তুলে ধরেছেন।
নতুন বিজ্ঞাপনটিতে মিমি ছাড়াও রয়েছেন বিদ্যা বালন। বিজ্ঞাপনটিতে দেখা গেছে, একটি আয়নার সামনে বসে চুল বাঁধছেন মিমি। আর পেছন থেকে হেঁটে আসছেন বিদ্যা। মিমিকে তিনি প্রশ্ন করছেন, ‘এখনও চুল নিয়ে পড়ে?’ জবাবে মিমি বলছেন, ‘আমি এখন জনপ্রতিনিধি। তাই তার যোগ্য হেয়ারস্টাইল।’
একটি বাণিজ্যিক ব্র্যান্ডকে মান্যতা পাইয়ে দিতে নিজের ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয়কে ব্যবহার করছেন কোনো সাংসদ— এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বর্তমান ও সাবেক এমপিরা।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলছেন, ‘কোনো সংসদ সদস্য এটা করতে পারেন না। ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে কেউ এইভাবে পয়সা রোজগার করতে পারেন না।’
তবে ‘অফিস অব প্রফিট’ আইনের আওতায় এই বিষয়টা পড়ছে না বলে তার মত। সংসদ সদস্য বা বিধায়ক হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকারের অধীনস্থ কোনো পদ নিয়ে কেউ যদি আর্থিক ভাবে লাভবান
হন, তা হলে সেই পদ ‘অফিস অব প্রফিট’-এর আওতায় পড়বে— ব্যাখ্যা অরুণাভর। মিমি চক্রবর্তীর ক্ষেত্রে তেমন ঘটেনি।
কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টেরই আরেক আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১-র ৮(এ) ধারা অনুযায়ী দুর্নীতিগ্রস্ত কার্যকলাপের জন্য সংসদ সদস্য বা বিধায়কের পদ খারিজ করা যায়।’
তার ব্যাখ্যা, ‘একটি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে একটি বেসরকারি ব্র্যান্ডের হয়ে প্রচার করার জন্য নিজের ‘জনপ্রতিনিধি’ পরিচয়কে ব্যবহার করে ওই সংসদ সদস্য অত্যন্ত অনৈতিক কাজ করেছেন। এই অনৈতিক কাজকে ‘দুর্নীতি’ হিসেবে ধরা যাবে কি না, তা নিয়ে তর্ক উঠতে পারে।’
‘তর্ক যদি ওঠে, তা হলে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারাটির বিশদ ব্যাখ্যা করবে আদালত। তার পরেই বোঝা যাবে, ওই সংসদের পদ খারিজ হবে কি না।’
সিপিএমের সাবেক সংসদ সদস্য ও এথিক্স কমিটির সদস্য নীলোৎপল বসু বলেন, ‘এইভাবে বিজ্ঞাপন দেয়া যায় না। এটা স্বার্থের সংঘাত সংক্রান্ত নিয়মে আটকে যায়।’
তবে সেলিব্রিটি থেকে রাজনীতিক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে ওঠা বাবুল সুপ্রিয় এই বিতর্কে মিমির বিপক্ষে মুখ খুলেছেন। তার কথায়, ‘এইভাবে বিজ্ঞাপন করা খুবই অনুচিত কাজ। তার উচিত এখনই এই ভুল শুধরে নেয়া।’
তবে মিমি নিজে বলেছেন, ‘আমি এই সব নিয়ম-কানুন একদমই জানতাম না। আমাকে যা পড়তে বলা হয়েছিল, পড়ে দিয়েছি।’
যে সংস্থার হয়ে তিনি বিজ্ঞাপনটি করেছেন, তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন বলে মিমি জানিয়েছেন। তার কথায়, ‘আমি তাদের বলব, ওই অংশগুলো এডিট করে বাদ দিতে।’