আজীবন রেশন সুবিধা পাবে পুলিশ বাহিনী। পুলিশ সদস্যদের আজীবন রেশন সুবিধা দিয়ে অর্থ বিভাগ গত বুধবার অফিস আদেশ জারি করেছে। সিদ্ধান্তটি কার্যকর করার জন্য ওইদিনই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বর্তমানে পুলিশের কনস্টেবল থেকে শীর্ষপদ পর্যন্ত চাকরিতে প্রবেশের দিন থেকে অবসরোত্তর ছুটি পিআরএল পর্যন্ত রেশন সুবিধা পাচ্ছেন। একই সুবিধা ভোগ করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিজিবি, আনসার, কারারক্ষী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
পুলিশ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পরিবারের সদস্য সংখ্যা দুইজন ধরে ভর্তুকি দামে রেশন দেওয়া হবে। প্রতি মাসে তারা ২০ কেজি চাল, ২০ কেজি আটা, ২ কেজি চিনি, সাড়ে ৪ লিটার ভোজ্য তেল, ২ কেজি ডাল পাবেন। যেসব পুলিশ সদস্য গত ১ জানুয়ারি থেকে অবসরে গিয়েছেন বা যাবেন তারা এ সুবিধা পাবেন। তবে সন্তানদের ক্ষেত্রে এ সুবিধা ২১ বছর পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। অবিবাহিত, প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন এ সুবিধা পাবেন। কোনো ক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্য সংখ্যা দুইজনের বেশি হবে না। পরিবারের সদস্য সংখ্যা একজন হলে রেশনের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে আসবে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই পুলিশ বাহিনীর সদস্য হলে অথবা ভিন্ন ভিন্ন রেশন সুবিধাসংবলিত দপ্তর বা সংস্থায় কর্মরত হলে তাদের যেকোনো একজন যতদিন কর্মরত থেকে পারিবারিক রেশন বা সুবিধা ভোগ করবেন ততদিন পর্যন্ত তাদের কেউ বা পরিবারের কোনো সদস্য অবসরকালীন রেশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ হতে এ আদেশ জারি করতে হবে। আদেশ জারির পর থেকে এটি কার্যকর হবে।
প্রচলিত নিয়ম অনুসারে পুলিশ সদস্যরা রেশন হিসেবে চাল, ডাল, তেল, আটা ও চিনি পেয়ে থাকেন। স্বামী-স্ত্রী, এক সন্তানসহ কারও পরিবারের তিন সদস্য হলে মাসে ৩০ কেজি চাল, ২৫ কেজি আটা, ৭ কেজি ডাল, ৬ লিটার তেল ও ৪ কেজি চিনি পেয়ে থাকেন। কারও পরিবারের সদস্য স্বামী-স্ত্রীসহ চারজন হলে প্রতি মাসে ৩৫ কেজি চাল, ৩০ কেজি আটা, ৮ কেজি ডাল, ৮ লিটার তেল ও ৫ কেজি চিনি পেয়ে থাকেন। স্বামী-স্ত্রীসহ সর্বোচ্চ দুই সন্তানের জন্য রেশন সুবিধা দেওয়া হয়।
পুলিশ ছাড়াও বিজিবি, আনসার, কারারক্ষী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মচারীরা রেশন সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা রেশন সুবিধা ভোগ করেন। প্রতি মাসে পুলিশের সব সদস্য প্রতি কেজি চাল ২ টাকা ১০ পয়সা এবং প্রতি কেজি গম ১ টাকা ৭৭ পয়সা দরে রেশন হিসেবে পান। আনসার, কারারক্ষী, ফায়ার সার্ভিস ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মচারীরাও একই দরে চাল ও গম উত্তোলন করেন। বিজিবি সদস্যরা প্রতি কেজি ২ টাকা ৫৫ পয়সা দরে চাল ও ২ টাকা ১৫ পয়সা দরে গম উত্তোলন করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রেশন সুবিধা দাবি জানিয়ে আসছেন। গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয় কী দরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেশনপণ্য হিসেবে চাল-গম দেওয়া যেতে পারে। জবাবে খাদ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক ও বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমানারা খানম জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পাঁচটি অধিদপ্তরের মধ্যে পুলিশ ও বিজিবি ছাড়া অবশিষ্ট তিন বিভাগের রেশন মূল্য একই। অর্থাৎ চাল ২ টাকা ১০ পয়সা এবং গম ১ টাকা ৭৭ পয়সা। এ অবস্থায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘এসেনশিয়াল প্রায়োরিটি কনজ্যুমার’ হিসেবে চাল ও গমের দর একই রাখার সুপারিশ করা হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইব) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সেনাবাহিনীর মতো পুলিশও রেশন সুবিধা চাচ্ছিল। পুলিশের এ সুবিধা চাকরিজীবীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করবে। যারা রেশন সুবিধা পায় না তারাও এখন রেশন সুবিধা চাইবে। সেই চাহিদা একসময় পুলিশের মতো আজীবন রেশন সুবিধা পাওয়ার দাবিতে পরিণত হবে। এতে জনগণের ওপর করের বোঝা বাড়বে।’
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ ও সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া মিলন বলেন, ‘সংশ্লিষ্টরা আমাদের দাবি উপেক্ষা করে চলছেন। পুলিশ আজীবন রেশন সুবিধা পেলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে আমরা নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীদের রেশন দেওয়ার দাবি পুনর্বিবেচনায় আনার জন্য অনুরোধ করছি।’