পাকিস্তানে নিম্ন আদালত ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে অপহরণের পর জোরপূর্বক করা বিয়েকে বৈধতা দিয়েছে। কোনো মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হলেও প্রথম ঋতুস্রাব হলেই শরিয়াহ মোতাবেক তাকে বিয়ে করা যাবে। সাধারণত ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সে মেয়েদের প্রথম ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। তবে শারীরিক গঠনভেদে বয়সের তারতম্য ঘটতে পারে।
ভারতীয় সম্প্রচার মাধ্যম ‘এনডিটিভি পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের নিম্ন আদালতে এমন রায় দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে’। গত সোমবার এই মামলার রায় দিতে গিয়ে বিয়ের জন্য বয়স কোনো বিষয় নয় বলে উল্লেখ করল দুই বিচারপতি মহম্মদ ইকবাল ও ইরশাদ আলি শাহ। এই বিষয়ে তাদের নির্দেশ, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কোনো দরকার নেই। মেয়েটি ঋতুমতী হলেই বিয়ে দেওয়া যাবে। শরিয়ত আইন অনুযায়ী, এটা স্বীকৃত।
এনডিটিভি’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর হুমা ইউনুস নামে খ্রিস্টান পরিবারের এক মেয়েকে বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। হুমাকে অপহরণ করেছেন ২৮ বছর বয়সী আব্দুল জব্বার। এরপর জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে হুমাকে বিয়ে করেন তিনি।
হুমা’র পরিবারের দাবি, গির্জা এবং স্কুলের নথিপত্র অনুযায়ী হুমার বয়স ১৪ বছর। সিন্ধ বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। তাই এই আইন অনুযায়ী হুমা ও আব্দুলের বিবাহ অবৈধ।
তবে সিন্ধ আদালতে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবেন বলে জানিয়েছে হুমার পরিবার। হুমার আইনজীবী তাবাসসুম ইউসুফ বলেন, ‘অপহরণ এবং জোরপূর্বক করা বিয়ে রুখতেই ২০১৪ সালে বাল্য বিবাহ রদ আইন আনা হয় সিন্ধু প্রদেশে। কিন্তু হাইকোর্টের মন্তব্য সেই আইনের পরিপন্থী।’
এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ৪ মার্চ। তবে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে না ওঠা পর্যন্ত হুমাকে সরকারি নিরাপত্তায় রাখার আবেদন জানিয়েছে হুমার পরিবার।
সিন্ধ হাইকোর্টের এই রায়ের কথা জানাজানি হলে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ইমরান খানের প্রশাসন পুরোপুরি ইসলামিক মৌলবাদের কবজায় চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে সেদেশের স্বেচ্ছাসেবী কয়েকটি সংগঠন। বাধ্য হয়ে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই খ্রিস্টান কিশোরী বাবা-মা। আগামী ৪ মার্চ সিন্ধ হাইকোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।