• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১ এপ্রিল, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

ফিরোজায় প্রবেশাধিকার হারিয়েছেন শিমুল বিশ্বাস!

সারাবাংলা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ‘নিশান পেট্রোল’ জিপের সামনের সিটে গত একযুগ ধরে যাকে দেখা গেছে সেই শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস গত আটদিনে ফিরোজা’য় ঢুকতে পারেননি। অথচ বিশেষ সহকারী হিসেবে কদিন আগেও খালেদা জিয়ার ভাড়াবাসা ‘ফিরোজা’ এবং গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দাপুটে অবস্থান ছিল তার।

দলীয় সূত্রমতে, ওয়ান ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার জিপের সামনের সিটে ‘হঠাৎ আবিষ্কার’ করেন শিমুল বিশ্বাসকে। বাম ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা শিমুল বিশ্বাস কবে কখন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন— তা জানতেন না অনেকেই।

কিছুদিনের মধ্যেই সেই শিমুল বিশ্বাস হয়ে ওঠেন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন। তার দাপুটে অবস্থানের কাছে বিএনপির বাঘা, বাঘা নেতারা অসহায় হয়ে পড়েন। দলের ভেতরে-বাইরে শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমা হতে থাকে। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলেননি কোনোদিন।

অভিযোগ আছে, ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার বেশকিছু ‘ভুল’ সিদ্ধান্তের পেছনে শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের ইন্ধন রয়েছে। ২০১৩ সালের মার্চে ঢাকায় সফররত ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল, ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘চা’-এর দাওয়াত প্রত্যাখান, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণা ও টানা ৯২ দিন গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান, ২৪ জানুয়ারি ছেলেহারা মা’ খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে গেলে প্রধানমন্ত্রীকে গুলশান কার্যালয়ের দরজা থেকে ফিরিয়ে দেওয়াসহ বেশকিছু ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্তের নেপথ্য নায়ক ছিলেন শিমুল বিশ্বাস— এমনটিই বক্তব্য বিএনপির অসংখ্য শীর্ষ নেতার।

অনেকেরই অভিযোগ- গুলশান কার্যালয় এবং বাসায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরও শিমুল বিশ্বাসের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হতো। তার সম্মতি ছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারত না। ২০১৫ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন মাঝপথে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তও শিমুল বিশ্বাসের কাছ থেকে আসে। সেদিন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বার বার চেষ্টা করেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে শিমুল বিশ্বাস নিজেই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।

সঙ্গত কারণেই ২৫ মাস ১৭ দিন পর সাময়িক কারামুক্তির সময় খালেদা জিয়ার সেই নিশান পেট্রোল গাড়ির সামনের সিটে শিমুল বিশ্বাসের থাকার কথা ছিল। কিন্তু ২৫ মার্চ বিকেল সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে পৌঁছানো দলীয় পতাকাবাহী খালেদা জিয়ার সেই গাড়িটির সামনের সিট ফাঁকাই ছিল।

অবশ্য খালেদা জিয়া নিজেও নিশান পেট্রোল জিপে ওঠেননি। অসুস্থ শরীরে উঁচু জিপে ওঠার বিড়ম্বনা এড়াতে টয়োটা ব্রান্ডের ছোট্ট একটি প্রাইভেট কারে চড়ে ফিরোজায় ফেরেন খালেদা জিয়া। সিএসএফ’র ১২ জন সদস্য, কয়েকজন আত্মীয় এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার সঙ্গে ছিলেন।

বাসায় পৌঁছানো কিছুক্ষণ পর প্রফেসর ডা. এফ. এফ. রহমান, প্রফেসর ডা. রাজিবুল ইসলাম, প্রফেসর ডা. আব্দুল কুদ্দুস, প্রফেসর ডা. হাবিবু রহমান, প্রফেসর ডা. সিরাজ উদ্দিন ও প্রফেসর ডা. এ এ জেড এম জাহিদ হোসেন খালেদা জিয়াকে দেখে আসেন। এর পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান।

কিন্তু গত সাত দিনেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাননি বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। সংশ্লিষ্টদের মতে, দলের হাইকামান্ডের নিষেধাজ্ঞার কারণেই বিএসএমএমইউ’তে যেতে পারেননি তিনি। খালেদা জিয়া বাসা এবং অফিসেও আপাতত যেতে পারবেন না শিমুল বিশ্বাস।

অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়া হোম কোয়ারেনটাইনে থাকায় তার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস সেখানে যেতে পারছেন না। আর করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে বিএসএমএমইউতেও যাননি তিনি। কিন্তু পাল্টাযুক্তিও দিচ্ছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, দলের যেসব নেতা বয়সের ভাড়ে ন্যুব্জ, তারা যদি খালেদা জিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন, তাহলে শিমুল বিশ্বাস কেন নয়! তিনি তো এখনও খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘ম্যাডামের সঙ্গে তো আমার কথা-ই হয়নি, তাহলে নিষেধাজ্ঞা আসল কীভাবে। ম্যাডাম কোয়ারেনটাইনে আছেন, সে জন্য আমি সেখানে যাইনি। ১৫ এপ্রিলের পর যাব। তখন বোঝা যাবে আসল ব্যাপারটা কী!’