• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৩ এপ্রিল, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

এবার জঙ্গল থেকে সরকারি চাল উদ্ধার, খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন!

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পরপর দুই দিন বাড়ি ও জঙ্গল থেকে সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়েছে। গত ১০ এপ্রিল উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের এক দিনমজুরের বাড়ি থেকে সরকারি গুদামের আট বস্তা চাল ও পরের দিন (১১ এপ্রিল) একই এলাকার একটি জঙ্গল থেকে আরও চারটি প্লাস্টিকের বস্তায় ১২২ কেজি চাল ও খাদ্য অধিদপ্তরের আটটি খালি বস্তা উদ্ধার করা হয়।

চাল উদ্ধারের ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উদ্ধার করা চাল স্থানীয় ডিলার ওই দিনমজুরের বাড়িতে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ উঠলেও মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি।

আরও পড়ুন: দেশে আরও ৫ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ১৮২

স্থানীয়দের অভিযোগ, শাহবাজপুর ইউনিয়নের ভাটাউচি গ্রামের দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরের বাড়িতে পাওয়া চালগুলো স্থানীয় চাল ডিলার মো. সুলেমান রেখেছিলেন। গত ৯ এপ্রিল সকালে ডিলার চালগুলো ওই বাড়িতে পাঠান। ডিলার সুলেমানের বাড়িও একই গ্রামে। তবে, এই ঘটনার ১১ এপ্রিল রাতে থানায় দায়ের করা মামলায় কেবল দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরকে আসামি করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আব্দুস শুক্কুরের বাড়িতে সরকারি আট বস্তা (প্রতিটির ওজন ৩০ কেজি) চাল থাকার খবরটি গত ১০ এপ্রিল সন্ধ্যায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোস্তাক আহমদকে জানানো হয়। তিনিসহ খাদ্য অফিসের কোনো কর্মকর্তাই সেদিন কর্মস্থলে না থাকায় ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় নিরাপত্তাপ্রহরী মাসুম আহমেদকে। খবর পেয়ে শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। খাদ্য অফিসের নিরাপত্তাপ্রহরীর উপস্থিতিতে পুলিশ চালগুলো জব্দ করে। এরপর নিরাপত্তাপ্রহরী স্থানীয় ডিলারের কাছ থেকে স্টক রেজিস্টার নিয়ে চলে আসেন।

আরও পড়ুন: প্রতিপক্ষের পা কেটে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে আনন্দ মিছিল!

এর পরদিন (১১ এপ্রিল) বিকালে স্থানীয় ডিলার সুলেমানের বাড়ির অদূরে মুজম্মিল আলীর বাড়ির পাশের জঙ্গলে পরিত্ত্যক্ত অবস্থায় চারটি প্লাস্টিকের বস্তায় আরও ১২২ কেজি চাল ও খাদ্য অধিদপ্তরের আটটি খালি বস্তা উদ্ধার করা হয়। চাল ও খালি বস্তা উদ্ধারের পর খাদ্য কর্মকর্তারা ডিলারের গুদামে তালা দিয়ে বাজার বণিক সমিতির সম্পাদক আখতার হোসেন রহিমের কাছে চাবি বুঝিয়ে দেন। ১১ এপ্রিল রাতেই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের উপখাদ্য পরিদর্শক প্রানেশ লাল বিশ্বাস বাদী হয়ে বড়লেখা থানায় দিনমজুর আব্দুস শুক্কুরকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

আব্দুস শুক্কুরের স্ত্রী হাজিরা বেগম বলেন, ‘আমার কার্ডের দুই মাসের দুই বস্তা চাল একসঙ্গে পেয়েছি। আমরা গরিব মানুষ। বাড়তি আরও ছয় বস্তা চাল সুলেমান ভাই তার লোকজন দিয়ে আমার ঘরে পাঠান। আমার স্বামী বাড়িতে না থাকায় প্রথমে রাখতে চাইনি। পরে সুলেমান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাকে এগুলো রাখতে বলেন। চালগুলো তিনি পরে নেবেন বলে আমাকে জানান। পরের দিন সরকারি লোকজন এসে চালগুলো নিয়ে যায়।’

স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন আহমদ ও দুলাল আহমদ বলেন, ৯ এপ্রিল ডিলার সুলেমান দিনমজুর শুক্কুরের বাড়িতে আট বস্তা (প্রত্যেকটি ৩০ কেজি ওজনের) চাল পাঠান। তখন শুক্কুর বাড়িতে ছিলেন না। বাইরের কোথাও দিনমজুরের কাজ করছিলেন। শুক্কুরের বাড়িতে চাল রাখার ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে পরদিন লোকজন প্রশাসনকে খবরটি জানায়। এরপর ওই বাড়ি থেকে আট বস্তা চাল জব্দ করা হয়। কিন্তু, মামলায় শুধু দিনমজুরকে আসামি করা হয়েছে। সরকারি চাল অন্য জায়গা থেকে উদ্ধারের ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিয়েই এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এই বিষয়ে কথা বলতে ডিলার মো. সুলেমানের মুঠোফোনে কল দিয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

বড়লেখা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোস্তাক আহমদ বলেন, ‘শুক্রবার (১০ এপ্রিল) ছুটির দিন থাকায় সিলেটে বাসায় ছিলাম। প্রথমদিন নিরাপত্তাপ্রহরীকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। স্থানীয় ডিলারের স্টক রেজিস্টার নিয়ে আসতে বলি। পরের দিন ওই গুদামে খোঁজ নিতে গিয়ে খবর পাই আরও কিছু চাল ও খালি বস্তা পাওয়া গেছে। এগুলোও পুলিশের মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে। যার ঘরে সরকারি চাল পাওয়া গেছে তার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত থাকলে থানার পুলিশ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধেও চার্জশিট দেবে। আমরা তো আর মামলা তদন্ত করতে পারি না।’

আরও পড়ুন: মানিকগঞ্জে চাল আত্মসাত : স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তার

শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রথমদিন আট বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। সেদিন খাদ্য অফিসের একজন নিরাপত্তাপ্রহরীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তার ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে চাল জব্দ করা হয়। পরদিন স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে আরও কিছু চাল ও খালি বস্তা পরিত্ত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।’

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক ক্রাইম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। একজন উপপরিদর্শককে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে যারাই জড়িত থাকুক, তদন্তে যাদের নাম আসবে তাদেরকে তদন্তের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।’