• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২২ এপ্রিল, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

চুল বিক্রি করে সন্তানের জন্য দুধ কিনলেন মা!

সাভার প্রতিনিধি

করোনার লকডাউনে দেশের দরিদ্র মানুষের জীবন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। টিকে থাকতে এবং বেঁচে থাকতে মানুষ কত কি করতে পারে তারই যেন উদাহরণ সৃষ্টি করলো সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনি মহল্লার বাসিন্দা দুই সন্তানের মা সাথী বেগম। দুই দিন ধরে ঘরে কোনও খাবার ছিল না তার। ঘরে থাকা ১৮ মাসের শিশুটিরও খাবার শেষ। অনেকের কাছে ত্রাণের জন্য গেলেও কোনো সাহায্য পাননি। পরে ২০ এপ্রিল দুপুরে এক হকারের সাথে কথা হয় তার। সেই হকার মাথার চুল দেখিয়ে বিক্রির কথা বললে তিন থেকে চারশ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেয়। পরে চুল কেটে বিক্রি করে মাত্র ১৮০ টাকায়! পরে সেই টাকা দিয়েই সন্তানের দুধ ও নিজেদের জন্য চাল কিনে ঘরে ফিরেন তিনি।

সাথী বেগম জানান, কয়েক মাস আগে অভাবের কারণে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ থেকে স্বামী সন্তানসহ মিরপুরে আসেন। সেখান থেকে দেড় মাস আগে সাভারের ব্যাংক কলোনির নানু মিয়ার টিনশেড বাড়িতে এসে ওঠেন। এই এলাকায় নতুন বলে কেউ তাদের তেমন চেনেন না, তাই মিলছে না সহায়তা। 

সাথী বেগম আরও জানান, তার স্বামী পেশায় দিনমজুর। তিনি নিজেও বাসাবাড়িতে কাজ করতেন। তবে করোনাভাইরাসের কারণে বাড়িওয়ালা কাজে যেতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তার স্বামীও কোনও কাজ না পেয়ে বাড়িতে বেকার সময় কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় দুই দিন ধরে ঘরে কোনও খাবার নেই। ১৮ মাসের শিশু বাচ্চারও কোনও খাবার নেই। এলাকায় নতুন এসেছেন, কাউকেই তেমন চেনেন না। কোথায় ত্রাণ দেয় সেটাও জানা নেই তার। প্রতিবেশীর কাছ থেকে খবর পেয়ে দুই জায়গায় সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন। তবে তাকে চেনেন না বলে ত্রাণ না পাননি, খালি হাতেই ফিরে এসেছেন। এমন সময় এক হকারের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার কথায় চারশ’ টাকা পাবেন শুনে মাথার চুল কেটে দিয়ে দেন, তবে সেখানেও তিনি ঠকে যান। হকার মাত্র ১৮০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে ওই টাকা দিয়ে শিশুর জন্য দুধ ও এক কেজি চাল কিনেছেন। 

সাথী বেগমের প্রতিবেশী রিকশাচালক সুমন বলেন, ‘লকডাউনের পর সড়কে কোনও যাত্রী নেই। আয়-উপার্জন না থাকায় কোনোভাবে জীবন নিয়ে বেঁচে আছি। সাথী বেগমের অসহায় অবস্থার কথা জানি, তবে সহযোগিতা করার সামর্থ্য নেই।’ 

সাথী বেগমের অসহায় অবস্থার কথা জেনে সাভার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। খুব দ্রুত ওই পরিবারের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো হবে।’ 

সাভার পৌর মেয়র আব্দুল গনি বলেন, পৌর এলাকায় অনেক জায়গায় ত্রাণ বিতরণ চলছে। তবে ওই নারী বাচ্চার খাবার সংগ্রহের জন্য চুল কেটে বিক্রি করেছেন, এমন খবর জানতাম না। তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।