• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৬ এপ্রিল, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

করোনা সংকটেও থেমে নেই স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি!

বাংলাদেশ প্রতিদিন

মহামারী রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের সংকটেও থেমে নেই স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসাসামগ্রী (ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি, পিপিই, টেস্টিং কিট/ওষুধপত্র) কেনাকাটায় অন্তত ২২ কোটি টাকার সঠিক হিসাব দিতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। নানা অব্যবস্থাপনার মধ্যেই চিকিৎসা দিতে গিয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত আড়াই শতাধিক চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু কিশোরগঞ্জে ৪২ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইতিমধ্যে একজন চিকিৎসক ও একজন স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেছেন। এরই মধ্যে এন-৯৫ মাস্ক কেনাকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য অধিদফতর জন্ম দিয়েছে নতুন কেলেঙ্কারি। এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুকূলে অর্থ বিভাগ থেকে ৪০০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি বিবরণী ও ব্যয় পরিকল্পনা অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছে অধিদফতর। এর বাইরে বাকি ১৫০ কোটি টাকা খরচের হিসাব অবশ্য পাঠায়নি তারা। সেখানে ল্যাবরেটরির জিনিসপত্র, পিপিই, কিট, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কেনার যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে তাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১২৮ কোটি টাকা। আর ১০০ কোটি টাকা ভবিষ্যৎ ব্যয়ের পরিকল্পনা হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবার ওই বিবরণীতে মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা, যা রীতিমতো এক গোঁজামিলের আশ্রয় বলে মনে করেন অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ তো গেল অর্থ ব্যয় আর কেনাকাটা সংক্রান্ত অয়িনম-দুর্নীতি আর হিসাবে গোঁজামিলের কথা। এদিকে এন-৯৫ মাস্ক কেনাতেও কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বিদেশ থেকে আমদানির কথা বলে দেশীয় কোম্পানি জেএমআই থেকে কেনা হয়েছে এন-৯৫ মাস্ক, যা আদতে এন-৯৫ নয়। বরং সেগুলো সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা আর বিতর্কের মধ্যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভুল স্বীকার করে দায়মুক্তি চেয়েছে। এর সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু তাই নয়, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত এন-৯৫ মাস্ক করোনা সেবাদানকারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেখানে করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষিত হাসপাতালের বাইরে ঢাকা ও সারা দেশের কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক কিংবা কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীকে এক পিসও এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চরম অব্যবস্থাপনার কারণে সংক্রমণের হার প্রতিদিন বাড়ছে। আমাদের হাতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হয়েছি। শুধুই কথামালা দিয়ে আমরা করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করতে চেয়েছি, যা ছিল চরম বোকামি। আর বিদেশ ফেরতদের কোনোভাবেই আমরা ব্যবস্থাপনা করতে পারিনি। এ ছাড়া অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যেসব অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এগুলো তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। যেখানে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে সেখানে চিকিৎসাসামগ্রী কেনাতে দুর্নীতি হবে এটাও স্বাভাবিক। আর এন-৯৫ মাস্ক ক্রয় নিয়ে যা হয়েছে তা স্বাস্থ্য অধিদফতরের চরম দায়িত্বহীনতা আর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা। এদিকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চিকিৎসাসামগ্রী কেনাকাটায় ২২ কোটি টাকার গরমিলের ব্যাখ্যা চেয়েছে অর্থ বিভাগ। কিন্তু এখনো এর সুষ্ঠু জবাব দিতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। অর্থ বিভাগ থেকে এখন পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এর প্রায় পুরোটাই ছাড় করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন এক্সপ্রেসের জন্যও ছাড় করা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।