• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৬ মে, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

করোনা সংকটেও থেমে নেই সড়কে চাঁদাবাজি!

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

মালবোঝাই ভটভটি কিংবা যানবাহন আসলেই সেদিকে ছুটে যাচ্ছেন এক যুবক। স্লিপ দিয়ে চাঁদা আদায় করেই সরে যাচ্ছেন দ্রুত। কোনো সময় আবার চাঁদা আদায় নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন চালকের সঙ্গে। তখন চাঁদা আদায়কারীর পক্ষ নিয়ে সঙ্গী হচ্ছেন আরও ৪-৫ জন। তাদের রুদ্রমূর্তি দেখে ভয়ে চাঁদা দিয়ে দিচ্ছেন সেই যানবাহনের চালক।

বগুড়ার মাটিডালি মোড় এলাকার চিত্র এটি। বিগত এক সপ্তাহ হলো এখানে করোনার দুযোর্গের মধ্যেই পুরোদমে শুরু হয়েছে বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পুলিশ ফাঁড়ি জানলেও চাঁদা আদায় বন্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।

স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে যেখানে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন ব্যস্ত সময় পার করছে তখনও সড়কে চলছে চাঁদা আদায়ের মহোৎসব। এরা এতোটাই বেপরোয়া যে পুলিশকেও ভয় পায় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বগুড়া জেলায় লকডাউন চলছে। এরপরও জরুরি পণ্য ও জরুরি পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ সিএনজি কিংবা অটোরিকশায় চলাচলের সুযোগ পাচ্ছে। আর এতেই বাজিমাত। শহরের প্রবেশ মুখ মাটিডালিতে এক সপ্তাহ হলো শুরু হয়েছে এই চাঁদাবাজি। কখনও স্লিপ দিয়ে, কখনও স্লিপ ছাড়া। লাঠি হাতে দাঁড়ালেই চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন চালকরা।

এই প্রথম মাটিডালি এলাকায় চাঁদা আদায়ের তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে অবৈধ যান ভটভটি। কৃষি পণ্য নিয়ে এই যানগুলো শহরে ঢুকলেই দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা চাঁদা। এই এলাকায় চাঁদাবাজিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সিএনজির চেইন মাস্টার কালাম ও মহাস্থান রোডের চেইন মাস্টার জলিল। ভোর থেকে এই দুইজন মাটিডালি এলাকার বিভিন্ন দোকানে বসে থাকেন। তাদের একাধিক চাঁদাবাজ সদস্য যানবাহন থেকে তোলেন এই চাঁদা।

এছাড়াও একই স্থানে পণ্যবাহী ট্রাক, বালুবোঝাই ট্রাক, তরমুজের গাড়িসহ কাঁচা বাজারের বিভিন্ন গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি চললেও পুলিশ প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

পণ্যবাহী একটি পিকআপ ভ্যানের চালক কাসেম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে জেলার কোনো স্থানে পরিবহনের চাঁদা দিতে হয় না। শুধুমাত্র মাটিডালি মোড় এলাকায় চাঁদা দিতে হয় ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। চাঁদাবাজরা হুমকি দিয়ে বলে দিয়েছে চাঁদা না দিলে কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারবে না।

চাঁদা আদায়কারী রহিম ও জহুরুল বলেন, আমরা দিন হাজিরায় চাঁদা তুলি। বৈধ কি অবৈধ তা বলতে পারবো না। চাঁদা তুলে জমা দিলে আমরা হাজিরার টাকা পেয়ে যাই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অবৈধ যান ভটভটিতে (নছিমন) নতুন করে একটি চাঁদার স্লিপ দেয়া হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ মৎস্য ও ইলফিস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নামে আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা। কমিশন রশিদ লেখা এই রশিদটি কেন চাঁদা আদায়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে তা বলতে পারেননি উত্তোলনকারীরা। সমিতির ঠিকানা হিসেবে তিনমাথা রেলগেট, পুরান বগুড়া উল্লেখ করা থাকলেও এই ঠিকানায় কোনো সমিতির প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদা আদায়কারীদের নেতৃত্ব দেয়া সিএনজির চেইন মাস্টার কালাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু বলেন- শ্রমিক নেতাদের জানিয়েই আমরা চাঁদা তুলছি।

ফুলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সফিকুল ইসলাম পলাশ বলেন, আমরা শুনেছি সকালের দিকে কয়েকজন চেইন মাস্টারের নেতৃত্বে কিছু যুবক চাঁদা তুলছে। তবে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখন খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।