• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৫ মে, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

ভারতীয় পেঁয়াজে বাজার সয়লাব, ক্ষতিগ্রস্থ দেশের পেঁয়াজ চাষিরা!

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

হঠাৎ করে গতবছর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে দিয়েছিল। তুরস্ক, পাকিস্তান, মিসরসহ বিশ্বের অনেক দেশ সে সময় বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করে সহায়তা করেছে। এখন বাংলাদেশে পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। এ সময় ভারত বাংলাদেশে লাখ লাখ টন পেঁয়াজ রফতানি করে ঈদের বাজার ধরেছে। ভারতীয় পেঁয়াজের কারণে দেশের পেঁয়াজ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

জানা গেছে, ভারত বাংলাদেশের রমজান এবং ঈদুল ফিতরে কাপড়-কসমেটিক্স ও পেঁয়াজের বাজার ধরতে মরিয়া। ইতোমধ্যেই হাজার হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ বৈধ-অবৈধ পথে বাংলাদেশে এসেছে। এখন করোনার লকডাউনের মধ্যেই আরো দুই হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে বিক্রি করতে চায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির এক খবরে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার দিল্লিকে জানিয়ে দিয়েছে করোনার কারণে তারা সড়কপথে বাংলাদেশে পেঁয়াজ পাঠাতে দেবে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তিতে স্থল-বন্দর খুলতে না পেরে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহনের জন্য রেলপথকেই বেছে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে ইতোমধ্যেই দুই হাজার টন পেঁয়াজের চালান নিয়ে একটি মালবাহী ট্রেন বাংলাদেশের পথে রওনা দিয়েছে। এ চালান রোজার মাসে বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার ধরতে পারবে বলে আশা করছে ভারত।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আছে, এই যুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেনাপোল এবং হিলিসহ অন্যান্য স্থলবন্দর বন্ধ রেখেছে। ফলে বাধ্য হয়েই মোদির বিজেপি সরকারকে আপাতত রেলের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। কারণ ভারতের পেঁয়াজ চাষীদের বাঁচাতে বাংলাদেশের বাজার ধরা চাই-ই। করোনার কারণে বন্ধ থাকা স্থলবন্দরগুলো গত এপ্রিল মাসের শেষ দিনে সীমিত আকারে চালু হওয়ার তিনদিন পরেই স্থানীয়দের বাধায় পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থল বন্দরে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়।

পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় গত সপ্তাহে দিল্লিকে জানিয়ে দেন তারা আপাতত স্থলবন্দর খুলে দিতে রাজি নন। তিনি বলেন, পেট্রাপোলের ক্ষেত্রে কিছু পাবলিক ইস্যু আছে। সীমান্তের মানুষ কিছুটা ইমোটিভ কমোশনে আছেন। ফলে স্থলবন্দর চালু করা যাচ্ছে না। কিন্তু ভারত সরকার রমজানে বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার ধরার ধান্দায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি দিয়ে জানায়, বাংলাদেশে মালপত্র পাঠানোর ক্ষেত্রে ‘ভারতের একটা আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা আছে’।

এরপরই সড়কপথের বিকল্প হিসেবে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার রেলপথে পেঁয়াজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহারাষ্ট্রের নাসিকের কাছে লাসলগাঁও স্টেশন থেকে গত সোমবার পেঁয়াজ বোঝাই একটি মালবাহী ট্রেন রওনা দেয় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পেঁয়াজ বোঝাই ট্রেনটি সীমান্তে গেদে-দর্শনা চেকপোস্টে অপেক্ষা করছে।

বাংলাদেশের পেঁয়াজ চাষী ও ব্যবসায়ীদের দাবি ভারতের পেঁয়াজ বোঝাই ট্রেন যেন বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া না হয়। এমনিতেই বৈধ-অবৈধ পথে ভারতের পেঁয়াজে বাংলাদেশের রমজানের বাজার সয়লাব। ফলে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে দেশের কৃষকরা উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম পাচ্ছেন না। এখন ট্রেনে আসা ভারতের পেঁয়াজ প্রবেশ করলে দেশের পেঁয়াজের দাম হয়তো কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা কমবে; কিন্তু কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্ছিত হবে। ভারতের পেঁয়াজ চাষীদের স্বার্থ যেমন ভারত সরকার দেখছে; তেমনি বাংলাদেশের সরকারকেও দেশের পেঁয়াজ চাষীদের স্বার্থ দেখতে হবে। তাছাড়া ভারত তাদের অতিরিক্ত পেঁয়াজ গছানোর জন্যই বাংলাদেশকে বেছে নিচ্ছে।