• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৫ মে, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

কি হচ্ছে জানে না আওয়ামী লীগ নেতারা!

বাংলা ইনসাইডার

করোনা নিয়ে একেবারে অন্ধকারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো নেতা এবং কোনো মন্ত্রী জানেন না সরকারের পরিকল্পনা কী, সরকারের কৌশল কী এবং সরকার কোন পথে এগোচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন এই সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু এই প্রথম একটি সঙ্কট মোকাবেলায় বা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি নির্ধারণে আওয়ামী লীগ ভূমিকাহীন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাই বিভিন্নজনের কাছে ফোন করে জানতে চান কী হচ্ছে, কী হবে। এই অবস্থা আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক না নেতিবাচক সেটা পরের বিষয়, কিন্তু সরকার পরিচালনায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এখন পুরোপুরিভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের- তাকে মনে করা হতো আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। কিন্তু করোনাকালে তিনি ঘরবন্দি হয়ে আছেন। ঘরে বসে শুধু কিছু রুটিন বিবৃতি-বক্তৃতা দেয়া ছাড়া তার কোন কার্যক্রম নেই। সরকার করোনা মোকাবেলায় কী ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে, জনস্বাস্থ্যের জন্য কী ধরণের কর্মসূচী নিচ্ছে, অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলার জন্য কী ধরনের কর্মসূচী নিচ্ছে- এ নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের কোন বক্তব্য-বিবৃতি শোনা যায়নি। এমনকি নীতিনির্ধারণী কোনো বৈঠকেও তাকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। এ নিয়ে দলের মধ্যে কানাঘুষা কম হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের আরেকজন সিনিয়র নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনিও একাধারে মন্ত্রী এবং দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য। করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে তিনিও সরকার কী ধরণের কাজ করছে বা কী করছে- এ নিয়ে মোটামুটি অন্ধকারে রয়েছেন। কৃষিমন্ত্রী হিসেবে তিনি সাফল্য দেখিয়েছেন এবং এক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বোরো ধান কাটার ব্যবস্থা করেছেন। সঙ্কটকালে তিনি যেভাবে তার মন্ত্রণালয়কে পরিচালনা করেছেন এবং যেভাবে শ্রমিক জোগাড় করে ফসল তোলা হয়েছে তা খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু সরকার কোন পথে এগোচ্ছে এবং কীভাবে এই অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করা হবে এ নিয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাকও প্রায় অন্ধকারেই রয়েছেন বলে জানা গেছে। সরকারের নীতিনির্ধারণী কার্যক্রমে তার কোনো ভূমিকা লক্ষণীয় নয়। যদিও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রধান বিষয়টি হলো খাদ্য সঙ্কট এবং খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় করণীয় কী হবে, কী করা যাবে, না যাবে ইত্যাদি নিয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাককে কোন প্রকার নীতিনির্ধারণী বৈঠকে দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং মন্ত্রিত্বে আছেন এরকম আরেকজন হলেন ডা. দীপু মনি। ডা. দীপু মনিকে শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। তিনি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, টেলিভিশনে পাঠদান কর্মসূচী চালু করাসহ করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা তিনি করছেন। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্মসূচীতে, বিশেষ করে করোনা মোকাবেলায় সরকারের স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগুলোতে তার অবদান কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অন্যান্য রাজনীতিবিদদের মতো তাকেও দেখা যায়নি করোনা মোকাবেলার কোন নীতিনির্ধারণী বৈঠকে বা সামগ্রিক বিষয় নিয়ে তিনি কোনো পরামর্শ দিয়েছেন কিনা সে সম্পর্কেও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

আওয়ামী লীগের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। যিনি মন্ত্রিত্বে এবং সরকারে দুটোতেই আছেন, তিনি হলেন ড. হাছান মাহমুদ। তথ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনিও সক্রিয়। গণমাধ্যমকে সহায়তা দেওয়ার জন্য এবং গণমাধ্যমকে নানারকম সাহস দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বিরামহীনভাবে কাজ করছেন। কিন্তু সরকারের নিউক্লিয়াসে তার ভূমিকা কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। করোনা মোকাবেলায় সরকার যে কর্মকৌশল এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যে প্যাকেজ প্রণোদনাগুলো দিচ্ছে কিংবা অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় যে উদ্যোগ-কর্মসূচীগুলো নিচ্ছে, সেখানে তার পরামর্শ, মতামত বা ভূমিকা মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয় বলেই দৃশ্যমান হচ্ছে।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, সরকারের ভেতর যারা প্রভাবশালী মন্ত্রী রয়েছেন, তারাও করোনা মোকাবেলায় সরকার কী করছে তা জানে না। অন্য নেতারা তো আরো বেশি অন্ধকারে রয়েছেন।

দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কেবল দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বা ক্ষমতাসীন দলই নয়, বরং জনগণের সাথে সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত দল। আর জনগণের মতামতের সবচেয়ে বেশি প্রতিফলন ঘটে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে, যা অতীতেও ঘটেছে, বর্তমানেও ঘটছে। অনেকরকম স্থলন, দুর্বলতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক দল। সেই দলের নেতারাই যদি না জানে দেশে কী হচ্ছে, সরকার কী করছে, তাহলে জনগণের কল্যাণ কতটুকু নিশ্চিত হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন।