• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১০ জুন, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ধান ও চালের দাম

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে চালের দাম। অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ধানের দামও। এক বছরের ব্যবধানে দেশের বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি সর্বনিম্ন ৮ থেকে ১৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর ধানের দাম মণপ্রতি মানভেদে  ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে মিল মালিকরা দাবি করেছেন। ঈদুল ফিতরের আগে  নতুন ধান আসায় দাম কিছুটা কমলেও ঈদের পর থেকে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে এই দাম।  এখনও  ধানের বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হু হু করে  চালের এই দাম বাড়ানো অব্যাহত রয়েছে। যার প্রভাব ইতোমধ্যে সারাদেশের চালের বাজারে পড়তে শুরু করেছে। 

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর জুনে যে চালের কেজি ছিল ৩২ থেকে ৩৩ টাকা সেই চাল এ বছরে একই সময়ে ৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত দুই বছরের মধ্যে এবারই চালের দাম সব থেকে বেশি। মিল মালিকদের দাবি, যে ধান গত বছর এই সময়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ ছিল এখন তা হাজারে ঠেকেছে। পাশাপাশি সরু ধান গত বছর এই সময়ে ৮০০ টাকা মণ বিক্রি হলেও এখন ১ হাজার ১০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। ধানের বাজার আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মিল মালিকরা বলছেন, ধানের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। 

তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে,  করোনা পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে সহজেই চাল আমদানি করা যাবে না মনে করে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও আড়ৎদাররা ধান ও চাল মজুদ শুরু করেছে। ফলে এই দাম বেড়েছে। 

এদিকে দাম বাড়ায় সরকারিভাবে চাল সংগ্রহেও ব্যাঘাত ঘটছে। শেষ পর্যন্ত সরকারিভাবে চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা ঠিকঠাক মতো পূরণ না হলে মওসুমের শেষের দিকে চালের বাজার আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমন মওসুমের আগ পর্যন্ত চালের বাজারে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে এ ব্যবসার সাথে জড়িতরা মনে করছেন। যদিও ধান-চালের দাম বাড়ায় খুশিই হয়েছন কৃষকরা। 

মিল মালিক, কৃষক ও খাদ্য কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রমজানের মধ্যে সারা দেশে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়। ঈদের পর নতুন ধান মিলগুলোতে আসায় চালের বাজার ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ঈদের আগ পর্যন্ত মিনিকেট, কাজললতা, বাসমতি, আঠাশ ও মোটা পারিজা জাতের চালের বাজার কেজিতে মিল গেটে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত কমে যায়। তবে ঈদের পরের চিত্র মিল গেট থেকেই একেবারে ভিন্ন।

কুষ্টিয়া হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান জানান, ঈদের আগে কুষ্টিয়ার মিলগুলো পুরোপুরি চালু হলেও নওগাঁ, দিনাজপুরসহ অন্যান্য জেলার মিলগুলো পুরোদমে উৎপাদনে ছিল না। ঈদের পর সব জেলায় পুরোদমে উৎপাদনে গেছে। প্রচুর ধান কিনছে মিল মালিকরা। ছাঁটাই ও বিপণন কার্যক্রম চলছে জোর গতিতে। ঈদের আগে ধানের যে বাজার ছিল ঈদের পর তা থেকে বাজার অনেক বেশি। সব জাতের ধান প্রতিমণে ২৫০ টাকা বেড়েছে।

তিনি বলেন, বিশেষ করে আঠাশ, কাজললতা ও মিনিকেট (সরুজাত) ধানের বাজার এখন অনেক বেশি। যে ধান গত বছর এই সময়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ ছিল এখন তা হাজারে ঠেকেছে। পাশাপাশি সরু ধান গত বছর এই সময়ে ৮০০ টাকা মণ বিক্রি হলেও এখন ১ হাজার ১০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। ধানের বাজার আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় আইলচারা ধানের হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় ধানের দাম প্রতিমণে মান ভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। শুকনা ধান গড়ে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ধানের দাম বাড়াতে খুশি কৃষকরা।

পৌর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী স্বপন কুমার সংবাদমাধ্যমকে জানান, ঈদের আগের তুলনায় এখন বাজার চড়া। করোনার কারণে বাইরে থেকে চাল আনা সহজ হবে না এমনটা আঁচ করা গিয়েছিল আগেই। তিনি জানান, যে মিনিকেট চাল ঈদের আগে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা ছিল তা এখন ৫০ টাকা, আঠাশের চাল ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৬ টাকা, কাজললতাও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। এমন কি যে মোটা চাল ৩০ টাকা ছিল তার দামও বেড়ে ৪০ টাকায় উঠেছে।

পৌর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, করোনার কারণে বাইরে থেকে চাল আনা সহজ হবে না এমনটা আঁচ করতে পেরে সুযোগ সন্ধানীরা এবার প্রচুর ধান ও চাল কিনে মজুত করেছে। যাতে সময় বুঝে তা বাজারে ছেড়ে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়।

খাজানগর মোকামে মিলারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার চালের বাজার বাড়ার প্রবণতা অনেক বেশি। যার আঁচ ইতোমধ্যে বাজারে পড়েছে। বাজার শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটাই দেখার বিষয়।

মিলাররা জানান, গত বছর জুনে এই মোকামে সরু চালের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা, যে আঠাশ ও কাললতা চালের কেজি ছিল ৩২ থেকে ৩৩ টাকা তা এখন ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মোটা পারিজা জাতের চালের দাম ছিল ২০ থেকে ২২ টাকার মধ্যে তা এখন ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা মিলগেটে বিক্রি হচ্ছে। খোলা বাজারে ধান ও চালের বাজার বেশি হওয়ায় এ বছর সংগ্রহ অভিযান থমকে গেছে। সরকারি গোডাউনে কৃষক ও মিলাররা ধান ও চাল দিতে পারছে না। মোটা চালের দাম সরকার ৩৬ টাকা নির্ধারণ করলেও তা এখন বাইরে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪ টাকা লোকসানে কোনো মিলার গুদামে চাল দিতে চাইবে না। পাশাপাশি বাইরে বেশি দাম পাওয়ায় নানা ঝামেলার কারণে কৃষকরা গোডাউনে ধান দিতে চাচ্ছে না। জেলায় এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ধান সংগ্রহ হয়নি। ৩৪ হাজার টনের মধ্যে মাত্র ১ হাজার টন চাল সংগ্রহ হয়েছে।

চাল মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশিদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, সিন্ডিকেট করে কোনো মিলার চাইলেও দাম বাড়াতে পারে না। এখন প্রতিযোগিতার সময়। ধানের বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে চালের বাজার বাড়ছে। দেশে আম্ফান ও ঝড়ে ১৫ ভাগ ধান নষ্ট হলেও বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে দেশীয় বাজারে ধান ও চালের সংকট হবে না। তবে দামের হেরফের হবে। ধানের ভাল দাম পাচ্ছে কৃষকরা। দাম আরো বাড়তে পারে। ধানের দাম বাড়লে চালের বাজার আরো বাড়বে। এছাড়া তিনি বলেন, করোনার একটা প্রভাব বাজারে পড়ছে। অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযান এ বছর দামের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সংগ্রহ ঠিকভাবে না হলে সরকারের খাদ্য মজুদ কমে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকার চাইলে বাইরে থেকে চাল আনতে পারে। তাতেও বাজার স্বাভাবিক থাকবে।