• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৮ জুন, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

প্রয়াত নাসিমকে নিয়ে ‘কটূক্তি’, রাবি শিক্ষক কারাগারে

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

সদ্য প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘কটূক্তি করে স্ট্যাটাস’ দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ পারভেজ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর সাগরপাড়ার বাসিন্দা আইনজীবী তাপস কুমার সাহ বাদী হয়ে কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাকে রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, কাজী জাহিদুর রহমান গত ১, ২ ও ৫ জুন নিজের ফেসবুক ওয়ালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে কল্পনাপ্রসূত, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করেন। বাজে ভাষায় কটূক্তি করেন তিনি। সেখানে একটি পোস্টে মোহাম্মদ নাসিমের ছবি ও নাম উল্লেখ করা হয়। বাকি পোস্টগুলোতে মোহাম্মদ নাসিমকে ইঙ্গিত করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, মোহাম্মদ নাসিম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর পুত্র। তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এমন মিথ্যা তথ্য ফেসবুকে শেয়ার করায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ।

কাজী জাহিদুর রহমান রাবির শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবেও পরিচিত তিনি। জাহিদুর রাবির শিক্ষক হলেও নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকের পদে ছিলেন। তবে নাসিমকে কটূক্তির পর মঙ্গলবার তাকে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়।

জানা গেছে, গত ১ জুন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে কখনো মোহাম্মদ নাসিমের ছবি সম্বলিত নিউজের স্ক্রিনশট শেয়ার করে, আবার কখনো ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বিতর্কিত মন্তব্য করে একাধিক পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করেন কাজী জাহিদুর রহমান।

ওই পোস্টগুলো আগে সেভাবে সামনে না আসলেও মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ার পর এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক একই ধরনের অপরাধে গ্রেপ্তারের পর এটা নিয়ে সমালোচনায় মুখর হন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শিক্ষক কাজী জাহিদুরের শাস্তির দাবিও তুলছেন তারা। পরে তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

কাজী জাহিদুর রহমানের ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে দেখা যায়, গত ১ জুন তিনি একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘লুটপাট করে এ দেশের স্বাস্থ্যখাতের ১২টা বাজিয়ে গেছেন যিনি, তিনি আজ করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আরও কিছুদিন আগে (বর্তমান সরকার অনেকটা গুছিয়ে এনেছে) একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে যেতে হলে তিনি বুঝতে পারতেন, দেশের কতটা ক্ষতি তিনি করে গেছেন। স্বাস্থ্যখাত ধ্বংস করে চুরি করা হাজার হাজার কোটি টাকা থেকে করোনাকে কিছুটা ঘুষ দিয়ে দেখতে পারেন। যে করোনা কথা শোনে কিনা!’

আরেক পোস্টে মোহাম্মদ নাসিমকে ইঙ্গিত করে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে কাজী জাহিদুর রহমান লিখেছেন, ‘তার আমলে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে যে সকল নকল এবং অকেজো যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে, তাকে এখন সেসব জিনিস দিয়েই চিকিৎস সেবা দেওয়া হোক। যাদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে, সেই সিন্ডিকেট সদস্যদেরকে তার নার্স হিসেবে নিয়োগ করা হোক। তার আমলে মেডিকেল ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে যেসব অযোগ্যরা চিকিৎসক হয়েছে, তাদের দিয়ে উনার চিকিৎসা করানো হোক। এসব চোর সুযোগ পেলে পুরো দেশটাকেই গিলে ফেলতে চায়।’