• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৯ জানুয়ারী, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

কুমিল্লায় বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে চলছে টাকা বিতরণের মহড়া

তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

আগামী ১৮ জানুয়ারি কুমিল্লার তিতাস উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে । 

কাউন্সিলকে ঘিরে তিতাস উপজেলা বিএনপিতে উৎসবের আমেজ বিরাজমান। অন্যদিকে এক সাধারণ সম্পাদক  প্রার্থী সেলিম ভূইয়া তার ফেসবুকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের বিরুদ্ধে প্রচুর নগদ টাকা বিতরণের অভিযোগ করেছেন। 

 কাউন্সিলে মোয়াজ্জেম হোসেন সেলিম, মেহেদী হাসান, সেলিম ভূইয়া এবং সালাহউদ্দিন সরকার, ওসমান গণি ভূইয়া প্যানেল অংশ নিচ্ছে। 

সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম-সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক। মোট ৬টি পদে প্রার্থীগণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই নির্বাচনে ভোটার (কাউন্সিলর)। 

তিতাস উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিএনপির কমিটিতে ভোটারের সংখ্যা ২৭ জন। একজন কাউন্সিলর ৬টি পদে পছন্দের প্রতীকে ভোট দিবেন। 

প্রার্থীরা হলেন সভাপতি পদে সালাউদ্দিন সরকার প্রতীক (আনারস), মোয়াজ্জেম হোসেন সেলিম প্রতীক (ছাতা), সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে হাজী আলী হোসেন মোল্লা প্রতীক (প্রজাতি), মাহবুব আলম সরকার প্রতীক (ফুটবল), সম্পাদক পদে ওসমান গনি ভূইয়া প্রতীক (চশমা), মেহেদী হাসান সেলিম ভূইয়া প্রতীক (মোরগ),  মোবারক হোসেন মোল্লা প্রতীক (গেলাপ ফুল), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে মোয়াজ্জেম হোসেন মুন্সি প্রতীক (মই), আবু নাসের ভূইয়া প্রতীক (হাতী), সাংগঠনি সম্পাদক, জহিরুল ইসলাম প্রতীক (সিলিং ফ্যান), তোফায়েল আহম্মেদ প্রতীক (গরুর গাড়ী), সাংগঠনিক সম্পাদক, কাজী কবির হোসেন সেন্টু প্রতীক (হাড়িকেন) ও সাধারণ সম্পাদক, মুকবুল হোসেন প্রতীক (মাছ)। 

তিতাস বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীগণ অভিযোগ করেন, তিতাস উপজেলা বিএনপির এই উৎসব আমেজ দলের প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তৃণমূলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন উৎসাহ-উৎসব নেই। আছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। 

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আগামী ১৮ জানুয়ারির কাউন্সিলে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মীগণ জয়ী হবে, নাকি অর্থ-কড়ির বিনিময়ে জনবিচ্ছিন্ন, অযোগ্যরা জয়ী হবে ? 

২৭ জন ভোটারকে কাছে টানতে ইতোমধ্যে প্রার্থীগণ মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিছু প্রার্থীর সাফ কথা, যে কোন মূল্যে বিএনপিতে কাঙ্খিত পদ বাগিয়ে আনতে হবে। এই পদ প্রাপ্তির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে, এলাকায় প্রাধান্য বিস্তার করার সক্ষমতা অর্জন ও মান-সম্মান বৃদ্ধির সুযোগ হস্তগত করা। বিশেষ করে আগামীতে বিএনপি ক্ষমতাসীন হলে তো পোয়া-বারো হবে। 

তৃণমূলের কর্মীগণ জানায়, নির্বাচনে ত্যাগী, কর্মীবান্ধব নেতা নির্বাচিত না হলে তিতাস বিএনপি মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। আর এমনটা হলে তা বিএনপি, জনগণ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনের জন্য মোটেও সুখকর হবে না। বরং চরম বিরক্তির কারণ হবে। বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতসীন হবার পর জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে দাউদকান্দির উত্তর অংশের ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন নতুন উপজেলা  তিতাস। 

১/১১ এর জরুরি আইনের সরকার নির্বাচনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বেকায়দায় ফেলতে নবগঠিত তিতাস উপজেলাকে হোমনার সাথে যুক্ত করে কুমিল্লা-২ আসন তৈরী করেন। বিএনপি নেতা এমকে আনোয়ার মৃত্যুবরণের পর গত নির্বাচনে ড. মোশাররফ কুমিল্লা-১ এবং কুমিল্লা-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ফলে ড. মোশাররফ এখন ২টি আসনের ৪টি উপজেলার রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেখাশোনা করছেন। 

আগামী ১৮ জানুয়ারির কাউন্সিলকে সামনে রেখে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হচ্ছে, কাউন্সিলের কি দরকার! বাটি চালান দিলে সব-জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের  স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে যাবে। 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কোন নেতার কী ভূমিকা ছিল? ভূমিকা কী বিতর্কিত, রহস্যঘেরা?  নির্বাচনের দিন তিনি কী ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন?  ওই নেতা ভোটকেন্দ্রের কত দূরে অবস্থান করছিলেন? তিনি কী মোবাইল ফোন বন্ধ করে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিল? সরকারি দলের সাথে সমঝোতা করে টাকার বাণ্ডিল পেয়ে আত্মগোপন করেছিলো কারা? সরকারি দলের হাক-ডাক শুনে ভোটকেন্দ্র ছেড়ে পলায়ন করে ঢাকায় চলে গেছে, এরা কারা? 

এইসব আমলনামা দেখে কমিটি গঠন করলে সংগঠন শক্তিশালী হবে, তৃণমূলের নেতাকর্মীগণ খুশি হবে,  যোগ্যরা নেতৃত্বে আসলে সবদিকের লাভ। বিএনপি ও আগামীর প্রার্থী ডা. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের লাভ। সর্বোপরি জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী আপামর জনগণের লাভ। 

তিতাস বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, কর্মীবান্ধব পরীক্ষিত নেতাদের দিয়ে তিতাস উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। সরকারি দলের সাথে সখ্যতা করে যারা বিগত দিনে বিএনপির রাজনীতি করেছেন, জনগণ এইসব টাকার কাঙালিদের দুই চোখে দেখতে পারে না। জনগণ ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রাণের দাবি পরিচ্ছন্ন ও কর্মীবান্ধব ব্যক্তিদের দিয়ে তিতাস উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করুন।