• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২২ জুন, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

করোনা বদলে দিয়েছে পেশা

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

মো. বিল্লাল হোসেন। পেশায় গাড়ি চালক। রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকায় এক ব্যক্তির প্রাইভেটকার চালাতেন। করোনাভাইরাস আসার পর গাড়ি চালানো বন্ধ। এরপর থেকে ওই প্রাইভেটকারের মালিক বেতন দেয়া বন্ধ করে দেন। অনেক অনুরোধ করে তিনি গত মার্চ মাসের বেতন উদ্ধার করলেও আর কোনো বেতন পাননি। নিরুপায় হয়ে বিল্লাল চলে যান গ্রামের বাড়ি। ঈদের আগে বোনাসের জন্য মালিকের কাছে ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো সাড়া পাননি। ঈদের পর তিনি গ্রাম থেকে এসে ফের কর্মস্থলে ফিরেন।

কিন্তু এখন কাজ করতে হবে না বলে জানিয়ে দেন মালিক। স্কুলে পাঠদান শুরু হলে আবার চাকরি দেয়া হবে বলে গাড়ির মালিক আশ্বাস দেন। এ সময় আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ে তার! পরে কয়েকজন বন্ধুর পরামর্শে তিনি রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় লেবু বিক্রি শুরু করেন। মো. বিল্লাল হোসেনের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলায়। চাকরির সুবাধে তিনি রাজধানীর কাওরান বাজার রেলগেট এলাকায় একটি মেসে বসবাস করেন। তিনি জানান, গত দুই বছর থেকে রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকায় এক বিমানবালার প্রাইভেটকার চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই বিমানমালার সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। কিন্তু করোনার জন্য গত মার্চ মাসে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তার বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়। করোনা শেষ হলে কাজে যোগদানের কথা বলা হয় তাকে।

তিনি জানান, সারা রোজা মাস অনেক কষ্ট করে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে অতিবাহিত করেছেন। অনাহারে-অর্ধাহারে ঈদ পালন করেছেন। পরবর্তীতে ঋণ করে কিছু টাকা নিয়ে ফের ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে লেবু বিক্রি শুরু করেন। প্রতিদিন কাওরান বাজার থেকে লেবু ক্রয় করে ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে বিক্রি করেন। লেবু বিক্রি করে স্ত্রী-সন্তানের জন্য কিছু টাকা গ্রামে পাঠিয়েছেন। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ওই বিমানবালার কাছে মোট ৫০ হাজার টাকা পাই। সেগুলো দিলে ঋণ মুক্ত হবো। না হয় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকা অনেক কঠিন হবে।

কুমিল্লার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন। তিনি রাজধানীর পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকায় স্ত্রী-দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করেন এবং সেই এলাকায় পিঠা বিক্রি করতেন। কিন্তু করোনাভাইরাস আসার পর থেকে তার পিঠা বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকদিন বেকার থেকে তিনি সবজি বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে তিনি পশ্চিম তেজতুরী বাজার হালিম কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ভ্যানগাড়িতে সবজি বিক্রি করেন।

তিনি বলেন, গত মার্চ মাসে করোনাভাইরাসের জন্য সব বন্ধ হয়ে যাওয়াতে পিঠা বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় এক মাস বেকার ছিলাম। তখন বাসা ভাড়া দিতে পারিনি। এমনকি ঠিকমত তিনবেলা খাবারও জোটেনি। পরে মহল্লায় সবজি বিক্রি করা শুরু করি। বর্তমানে সবজি বিক্রি করে সংসার চলছে।

শুধু বিল্লাল হোসেন ও হেলাল মিয়া নয়, তাদের মত অনেকেই করোনায় চাকরি হারিয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সামস জানান, তিনি ওই এলাকায় আবাসিক ছাত্র হোস্টেলের ব্যবসা করতেন। কিন্তু করোনা আসার পর সব ছাত্র গ্রামে চলে গেছে। তাই গত দুই মাস হোস্টেলের ভাড়া দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে হোস্টেল ছেড়ে দিয়েছেন। হোস্টেল ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যান তিনি। কিন্তু গ্রামে গিয়ে তিনি কোনো কাজ না পেয়ে ফের ঢাকায় এসেছেন। বর্তমানে বেকার। তবে আগামী মাস থেকে একটি গাড়ির মেরামতের দোকানে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।

একই এলাকার এক বাড়ির ম্যানেজার তুহিন ইসলাম। তিনি জানান, তাদের বাসায় এক ভাড়াটিয়া ফার্মগেট এলাকায় নতুন কুঁড়ি নামের একটি কোচিং সেন্টার ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস আসার পর থেকে ওই কোচিং বন্ধ রয়েছে। তাই গত মাসে তারা বাসা ছেড়ে দিয়েছে। নতুন কুঁড়ি কোচিং সেন্টারের মালিকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, শুনছি তারা কোচিং ব্যবসায় ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে গেছে। গ্রামে গিয়ে তারা অন্য ব্যবসা করবে। আর করোনা শেষ হলে আবার ঢাকায় আসবে।