• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৫ জুলাই, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

চেয়ার-টেবিল ঝেড়ে-মুছে জীবন চলে শতবর্ষী মমতার

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও

 দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে শহরের কোট চত্বরে বিভিন্ন উকিল-মুহুরীর চেয়ার টেবিল টানা, পরিষ্কার করা, ঝাড় দিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন মমতা বেগম (১০০)। বর্তমানে বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। তার পরও প্রতিদিন সকাল ৮ টায় চলে আসেন কোট চত্বরে। বেশ কয়েকজন উকিল, মুহুরীর সেরেস্তায় চেয়ার-টেবিল গুছিয়ে দেন, ঝাড়ু দেন। এছাড়াও বিভিন্ন আদালত চত্বরে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন মমতা বেগম।শত বছর বয়সী মমতা বেগমের বাড়ি ঠাকুরগাঁও শহরের নিশ্চিন্তপুর ডারাপাড়ায়। ঐ গ্রামের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা মো. রমজান আলীর স্ত্রী তিনি। তার স্বামী যুদ্ধের সময় মারা যান। যুদ্ধের আগে মমতার বিয়ে হয় নীলফামারী জেলার ডিমলায়। বিয়ের পরপরই স্বামী সহ চলে আসেন ঠাকুরগাঁও জেলায় নিশ্চিন্তপুর ডারাপারায়। যুদ্ধের সময় তার স্বামী মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ মোহাম্মদ আলীর সাথে শহীদ হন। প্রথমে তার স্বামীর লাশ নিশ্চিন্তপুরে নিয়ে গেলেও পরবর্তীতে আবার শহীদ মোহাম্মদ আলীর কবরের পাশেই দাফন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর মৃত্যুর পর পরই তিনি শহরের কোট চত্বরে বিভিন্ন কাজকর্ম করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন।  শুক্রবার (২৪জুলাই) শহরের কোট চত্বরে দেখা হয় শত বছর বয়সী মমতা বেগমের সাথে। 

তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই আমি এই চত্বরে বিভিন্ন রকম কাজ করছি। আমার ৩ মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে কাপড়ের দোকানে কাজ করে। সে বিয়ে করে আলাদা থাকে। আমার মেঝো মেয়ে সহ আমরা নিশিন্তপুর ডারাপাড়ায় থাকি।বর্ষার কারণে বাড়িতে পানি উঠেছে। প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে ৮ টার মধ্যে কোট চত্বরে আসি। বেশ কয়েকজন উকিল-মুহুরীর সেরেস্তা ঝাড়ু দেই, পানি-চা আনে দেই, চেয়ার-টেবিল এনে দেই। বিভিন্ন আদালত চত্বরও ঝাড়ু দেই। থানায় ঝাড়ু দেই। তিনি আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার স্বামী মারা গেলেও তিনি কোন প্রকার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান না। কারণ তার কাছে স্বামীর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কোন কাগজপত্র নেই। 

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত রোজার ঈদেও শাড়ি, কাপড় পাইনি, এবারও পাইনি। কারণ কয়েকজনের বাড়ি গেলে হয়তো কাপড়-চোপড় পাওয়া যায়, কিন্তু করোনার কারণে এবার কারও বাড়ি যাইনি, তাই পাইনি।তিনি বলেন, বিধবা ভাতার কার্ড পেলে আমার খুব ভাল হতো। আমি সমাজের বিত্তবানদের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমাকে কোন একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিলে আমার বাকী জীবন একটু ভাল ভাবে কাটাতে পারতাম।