• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৬ জুলাই, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

বন্যায় ৩১ জেলার ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত!

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এক মাস ধরে চলা বন্যায় বাড়ছে পানিবাহিত নানা রোগের প্রকোপ। দুর্গত এলাকায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহসহ নানা রোগে গত এক মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৬৮৪ জন; তাদের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই ৪ হাজার ৬২১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুন থেকে রোববার পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকায় ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে নানাভাবে। এর মধ্যে পানিতে ডুবে ৯৬ জন, ডায়রিয়ায় একজন, সাপের কামড়ে ১৩ জন ও বজ্রপাতে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

লালমনিরহাটে ১১জন, কুড়িগ্রামে ২০জন, গাইবান্ধায় ১০জন, নীলফামারী দুজন, রংপুরে তিনজন, সুনামগঞ্জে দুজন, সিরাজগঞ্জে ১০জন, জামালপুরে ২৭ জন, টাঙ্গাইলে ১৬জন, মানিকগঞ্জে ১০ জন, নেত্রকোণায় ৫ জন, নওগাঁয় দুজন এবং শরীয়তপুরে একজন মারা গেছেন চলমান বন্যার মধ্যে।

বন্যা দুর্গত এলাকায় ৪ হাজার ৬২১ জন ডায়রিয়ায়, এক হাজার ৭২৬ জন চর্মরোগে এবং ২৭৪ জন চোখের প্রদাহে আক্রান্ত হয়েছেন। এর বাইরে বাকিরা নানা রোগে আক্রান্ত কিংবা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।

নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার জানান, কেবল গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দুর্গত এলাকায় এক হাজার ২১৮ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার এবং ৮ জনের মৃত্যুর খবর তাদের কাছে এসেছে।

তিনি জানান, দুর্গত এলাকাগুলোতে তাদের মেডিকেল টিম কাজ করছে। বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও অন্যান্য ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে।

এক মাসের মধ্যে তিন দফায় দেশের ৩১টি জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে; ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল মিলিয়ে অন্তত ১৮ জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল টানা তিন সপ্তাহ ধরে বানের জলে ভাসছে।  

চলমান বন্যায় দেশের অন্তত ৩১ শতাংশ নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। রোববার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে, তাতে আগামী কয়েক দিনে প্লাবিত এলাকা আরও বাড়বে।

দেশের নদ-নদীগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০১টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৪৪টি পয়েন্ট রোববারও পানি বাড়ছে; কমছে ৫৪টি পয়েন্টে। ১৮টি নদীর ২৮টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল এখন হ্রাস পাচ্ছে, যা সোমবারও অব্যাহত থাকতে পারে। আর যমুনা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে।

এছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে, যা সোমবারও অব্যাহত থাকতে পারে। তবে গঙ্গা, পদ্মা নদীর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেতে পারে।

ঢাকা জেলার আশেপাশে নদীগুলোর পানিও বাড়ছে। এই প্রবণতা সোমবারও অব্যাহত থাকবে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর এবং নওগাঁ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

অন্যদিকে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ি, শরীয়তপুর, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ এবং টাঙ্গাইল জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।