• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১২ আগস্ট, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

করোনার দুর্যোগে মানব সেবায় ডা: মুসা কবির

এম.লিটন-উজ-জামান, কুষ্টিয়া

করোনার বিধ্বংসী আঘাতে আজ টালমাটাল পৃথিবী। আকাশে-বাতাসে কান্নার রোল। স্বামী হারিয়েছে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে, সন্তান বাবাকে, বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ। শোকের মাতম আজ সারা বিশ্বে। শুনেছে মানবতার আর্তনাদ। এই করোনা প্রাদুর্ভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে জেলার স্বাস্থ্যসেবার মান। বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা না থাকায় কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এমন দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে কুষ্টিয়া মেডিকেল হাসপাতালে মানবতার সেবায় নিয়মিত রোগির পাশে দাড়িয়েছে  ডাঃ এ এস এম মুসা কবির।

ডাক্তার শব্দটি শুনলেই মনে হয় সৃষ্টিকর্তার মহান এক দান। ডাক্তারী পেশা নিঃসন্দেহে একটি মহান সেবামূলক পেশা। কারন যারা এই পেশার সাথে জড়িত তারা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানব সেবা করে যাচ্ছেন। যেন জম্ম হয়েছে মানব সেবার জন্য। তারা অনায়সে একজন রোগীকে আপনজনের মত সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে পারেন, এখনো সমাজে এমন কিছু ডাক্তার রয়েছেন যারা সত্যিকার অর্থেই মানব সেবায় নিয়োজিত এবং মানুষের সেবা করে আনন্দ পান। তেমনই এক মানবদরদী ডাক্তার কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডাঃ আবু সালেহ মোঃ মুসা কবির।  

করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও জনগণকে সেবা দিতে তিনি যেভাবে নিরলস কাজ করছে তা প্রশংসনীয়। করোনা আতংকে বিভিন্ন হাসপাতালগুলো খালি হতে দেখা গেলেও রোগীকে কোথায়, কোন ডাক্তারকে দেখাবো সেটা নিয়েও চিন্তিত! হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ডাক্তারদেরকে সেভাবে পাচ্ছে না রোগীর স্বজনেরা। কেউ কেউ ঘরোয়া পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছে। কোন কিছুর উপেক্ষা না করে রোগীদের সঠিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে কুষ্টিয়ার এই কৃর্তি সন্তান ডাঃ মুসা কবির।

রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডাঃ মুসা কবির করোনার এই বৈশি^ক দূর্যোগময় সময়ে সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত রোগীদের পাশে থেকে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। রোগীর সাথে কোন প্রকার খারাপ আচরণ করেন না। যে যা বলে তাই তিনি হাসিমুখে গ্রহন করেন। রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসার পাশাপাশি হতদরিদ্র রোগীদেরকে বিনামূল্যে ঔষধ (কোম্পানী কর্তৃক প্রদত্ত স্যাম্পল) প্রদান করতেও দেখা যায় তাঁকে। পরীক্ষা নিরীক্ষার ক্ষেত্রে তিনি রোগীকে বলেন- এই পরীক্ষাটা করাতে পারলে ভাল হত, করাতে পারবেন?

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন করোনায় আক্রান্ত হলে তার সার্বিক সেবা সুনিশ্চিত করে তাকে সুস্থ করে তুলেছেন ডাঃ মুসা কবির। জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন সুস্থ হয়ে ডাঃ মুসা কবিররের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

এদিকে কুমারখালীর মহব্বত হোসেন বলেন, ডাঃ মুুসা কবির একজন সৎ, দ্বীনদার ও আদর্শ ডাক্তার। আমার পরিবারের সদস্যদের যে কোন ধরনের অসুস্থতায় তাঁর কাছ থেকে চিকিৎসা সহযোগিতা ও পরামর্শ পেয়ে থাকি। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।

শহরের ব্যবসায়ী আলামিন হোসেন বলেন, সকল ধরনের মানুষদের প্রতি তিনি অত্যন্ত সহানুভুতিশীল। ডাক্তার মুসা কবিরের  মত অমায়িক ও পরোপকারী ডাক্তার আমি কোথাও দেখিনি। তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসা করেন।

ডাঃ মুসা কবির বলেন, রোগীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করাই আমার প্রথম কাজ, আমি চাইলে নিজে ঘরে বন্দি থাকতে পারতাম, তবুও প্রতিনিয়ত বের হচ্ছি, রোগি দেখছি। রোগীরা সুস্থ থাকলেই আমি সুস্থ থাকি। করোনা মহামারিতে আজকের আক্রান্ত রোগীরাই আমাদের দেয়া সঠিক সেবাই আগামী দিনে সুস্থ্য হয়ে উঠবে, এজন্য  আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কোন রোগী যেন মনে কষ্ট না পাই সঠিক সেবা তাদের প্রতি নিশ্চিত করতে হবে এবং সেই সাথে করোনামুক্ত সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই। 

তিনি আরো বলেন, সেবায় মানুষের মূল ধর্ম। এ মন্ত্রটিকে বিশ্বাস করে আজ মানব সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মধ্যে। আমি তো একদিন এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো, কিছু কর্ম দিয়ে যদি মানুষের মধ্যে রেখে নিজেকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখতে পারি এটাই হবে বড় প্রাপ্তি তাই আপনাদের সবার সহযোগিতা সর্বদা প্রয়োজন। আপনারা কেউ বিনা কারনে ঘর থেকে বের হবেন না। ঘরে থাকুন এবং সচেতনতার সাথে থাকুন। আশা করি শীঘ্রই আমরা এই সংকট কাটিয়ে উঠবো। স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজনে আমাকে সার্বক্ষনিক ফোন করে পরামর্শ নিতে পারবেন অথবা বিশেষ প্রয়োজনে কর্মস্থলে এসে সেবা নিন।

শুধু রোগীদের সাথেই নয়, হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স সহ সমস্ত স্টাফদের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে তাঁর। তিনি সুন্দর ব্যবহার ও হাস্যোজ্জল চেহারার অধিকারী। ডাঃ এ এস এম মুসা কবির ১৯৮০ সালের কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের দাইরপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম এ্যাডঃ নিয়ামত উল্ল্যা । তিনি ২০০৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে থেকে সফলতার সাথে এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে কনসালটেন্ট মেডিসিন বিভাগে কর্মরত আছেন। তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার পেশায় তিনিও একজন ডাক্তার, কুষ্টিয়া পপুলার ডায়োগনিষ্টিক সেন্টারে,কনসালটেন্ট সনোলজিষ্ট পদে কর্মরত। তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক। এই ডাক্তার দম্পতি আজীবন মানব সেবায় নিয়োজিত থাকতে চান।