• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৭ আগস্ট, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

পুরুষই শুধু ধর্ষণ-যৌন হেনস্তা করে, নারীরা করে না?

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ভারতে ১৮ শতাংশ পুরুষ ধর্ষিত হয়, নারীরা তাঁদের যৌন হেনস্তাও করে। কিন্তু পুরুষ সে কথা বাইরে বলতে পারে না। দেশের আইন প্রায় পুরোটাই মেয়েদের পক্ষে। পুরুষ তাই নিরুপায়। এ সমাজ আর সেভাবে আজ পুরুষতান্ত্রিক নয়, বরং মেয়েদের হাতেই চলে যাচ্ছে অনেক ক্ষমতা। আর এই ক্ষমতাই পচন ধরাচ্ছে, ভুগছেন পুরুষরা। তাই দেশের আইনে প্রকৃত লিঙ্গসাম্য চাই। পুরুষ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। এমনটাই মনে করেন নারী হয়েও পুরুষাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে বাংলার প্রথম সারির মুখ নন্দিনী ভট্টাচার্য। তাদের লড়াই-সংগ্রামের কথা নিয়ে দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার মুখোমুখি অকপট নন্দিনী।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ একটা মিথ। আমাদের ভুল ধারণা যে আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করি। একসময় এটা ছিল, খুব বেশিভাবেই ছিল। মেয়েরা তখন অত্যন্ত নির্যাতিত হতেন, এখনো হন না, এ কথা আমি বলছি না। তবে এখন আর খুব বেশি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নেই। এই ধারণাটা বহুদিন ধরে চলে আসছে। আমাদের বোধ হয় এবার এটা বদলানোর সময় এসেছে। দেখবেন, অনেক বাড়িতে ঠাকুমা অথবা মা কিংবা স্ত্রীর বাড়ির নানা নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি ঢুকে পড়েছে। আমি কিন্তু অর্থনৈতিক জায়গা থেকে বলছি না। বরং বলছি, সামাজিক অবস্থানগত দিক থেকে। লক্ষ্ করবেন, ছেলে-মেয়ে কোন স্কুলে বা টিউশনে পড়বে, মা না শাশুড়ি কাকে বেশি দামি শাড়ি দেওয়া হবে- এসব সিদ্ধান্ত মোটামুটি এখন পরিবারের নারীরাই নিয়ে থাকেন। আর পুরুষরা ঠিক করেন ফারাক্কাকে কত কিউসেক পানি দেওয়া হবে বা আণবিক বোমা ফাটানোর রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল- এগুলো। এর থেকেই বোঝা যায়, পরিবার এবং বৃহত্তর পরিবার- অর্থাৎ সমাজের দরকারি সিদ্ধান্তগুলো নারীরাই নিয়ে থাকেন।

কেন এ কথা বলছেন? এটাও তো বলা যায় যে কে কোন সিদ্ধান্ত নেবে সেই সিদ্ধান্তটিই পুরুষতান্ত্রিকতা ঠিক করে দিয়েছে।

দেখুন, দেশ-রাষ্ট্র-দুনিয়া এসব বড় বড় ব্যাপার। আপনার দৈনন্দিন বেঁচে থাকার জীবনে ছেলে-মেয়ে কোন স্কুল-কলেজে পড়বে বা কোন পেশা বেছে নেবে অথবা বাড়ির জন্য কোন গাড়িটি কেনা হবে, এগুলোই মূলত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেসব মূলত পরিবারের নারী সদস্যরাই আজকাল ঠিক করে থাকেন। অর্থাৎ পুরুষরা বহু ক্ষেত্রেই আর সংসারের ‘ডিসিশন মেকার’ নয়। মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও কিন্তু অনেকটা বেড়েছে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।

অবশ্যই। এই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তো নারী ক্ষমতায়নের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সুফল। এতে সমস্যাটা কোথায়?

ঠিক সে অর্থে সমস্যা নয়। বলতে চাইছি, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ আজ আর সেভাবে নেই, অনেকটা ফিকে হয়েছে।

কিন্তু, আপনি যে ছবিটা দিতে চাইছেন তা তো শহর-মফস্বলের। মূল যে গ্রামীণ ভারত, সেখানকার ছবিটা তো ভিন্ন।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি। আমার বাড়িতে যে মেয়েটি কাজ করে, তার মাস গেলে ৮-১০ হাজার টাকা রোজগার। তার স্বামী রঙের মিস্ত্রি; কিন্তু এখন কোনো কাজ নেই সেই ভদ্রলোকের। আমার বাড়িতে কাজ করাকালীন মেয়েটি যে ভঙ্গিতে স্বামীকে বাড়ির রান্নাবান্না করতে বা অন্যান্য বিষয়ে নির্দেশ দেয়, তাতে আমার মনে হয় না যে তিনি আর পুরুষতান্ত্রিকতার মধ্যে রয়েছেন। দেশে দেশে কালে কালে যখন যার হাতে ক্ষমতা থাকে তারাই মাথায় বসে। মেয়েদের হাতে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতা যাচ্ছে। মনে রাখবেন, পাওয়ার কোরাপটস।

আংশিকভাবে কিছু ক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিকতা ফিকে হচ্ছে বলে মনে করছেন বলেই কি আপনাদের মনে হয় পুরুষাধিকার রক্ষা জরুরি?

না না, একেবারেই তা নয়। ভারত একটি প্রো ফেমিনিস্ট কান্ট্রি। আমাদের দেশে মেয়েদের জন্য ৪৯টি আইন আছে। অথচ পুরুষ মানুষের জন্য কোনো আইন নেই। তবে কয়েকটা প্রিকশন আছে। কিন্তু, পুরুষরা তা জানেনই না। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুরুষরা ভয়ে কাটা হয়ে যান। আমাদের কাজ দেশের আইনে প্রকৃত লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই। নিরপরাধ পুরুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্য করা। কিছুদিন আগেই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, এক পুরুষ তাঁর স্ত্রীর হাতে বেধড়ক মার খাচ্ছেন। সেই পুরুষটি যদি থানায় যেতেন, তবুও তিনি অভিযোগ জানাতে পারতেন না। কারণ, আমাদের দেশের আইনটি হলো- ‘প্রোটেকশন অব উইমেন ফ্রম ডোমেস্টিক ভায়লেন্স’। আমরা চাই, গার্হস্থ্য হিংসার এই আইন, লিঙ্গ নিরপেক্ষ হোক।

যে দেশে ঘণ্টার হিসাবে পুরুষের হাতে ধর্ষণ-শ্লীলতাহানি-যৌন হেনস্তা ঘটে, সেখানে দাঁড়িয়ে পুরুষাধিকার নিয়ে কথা বলাটা কি ন্যায্য?

কী বলতে চান, পুরুষই শুধু ধর্ষণ-যৌন হেনস্তা করে? এ দেশে ১৮ শতাংশ পুরুষও নারীদের হাতে যৌন হেনস্তা- ধর্ষণের শিকার। কিছুদিন আগে পার্লামেন্টকে অনুরোধ করা হয়েছিল, যাতে ধর্ষণের আইনটাকে লিঙ্গনিরপেক্ষ করা হয়। কিন্তু আমাদের মহান সংসদ তা অস্বীকার করেছে।

ধর্ষিত বা যৌন লাঞ্ছিত পুরুষ আপনাদের কাছে আসে? এ ক্ষেত্রে ব্যাপারগুলো কেমন হয়?

আমাদের কাছে এমন পুরুষরা আসেন। বহু ক্ষেত্রেই সেগুলো পুরুষদের বিরুদ্ধে ভুয়ো ধর্ষণ মামলা। আসলে ঘটনা অন্য রকম হয়।

মানে? এসব পুরুষকে সাধারণত কে ধর্ষণ করে থাকে?

পরিবারের মধ্যেই কখনো হয়। এ ধরনের ঘটনার একটা বড় অংশের শিকার হয় বয়ঃসন্ধির ছেলেরা। তারা যখন বাড়িতে এসে মা-বাবাকে বলে, তারা বলেন, এসব বলতে নেই। উনি তোমাকে ভালোবাসেন। মেয়েরা এমন অভিযোগ করলে এখন তা-ও বাবা-মায়েরা গুরুত্ব দিয়ে সে কথা শুনে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু আজও ছেলেরা এসব বললে কেউ গুরুত্ব দেয় না লোকলজ্জার ভয়ে।

সেসব পুরুষরা কেন সরব হন না? আপনাদের কেস স্টাডি কী বলছে এ ক্ষেত্রে?

কৈশোরে ভয় পায়। আর বড় হয়েও ভয়-লজ্জা পায়। কারণ, বড় হয়ে যাওয়ার পর সে যে পুরুষ, তার মুখে এসব কথা মানায় না, এ বোধটা জন্মে যায়।