• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৯ আগস্ট, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

শ্রিংলার সফর নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম যা বলছে

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

‘বাংলাদেশে বিমান বন্দর তৈরিতে সহযোগিতার কথা আগেই ঘোষিত হয়েছিল। এবার তিস্তার ওপর সেচ প্রকল্পেও ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য করছে চীন। এরপর আর চুপ করে বসে থাকতে পারেনি দিল্লি।’ ১৮ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার ঢাকা সফর নিয়ে এটি ছিলো ভারতীয় দৈনিক আজকালের একটি প্রতিবেদনের সূচনা অংশ। ‘তিস্তা প্রকল্পে চীনের সাহায্য, তড়িঘড়ি ঢাকায় ভারতের বিদেশ সচিব’ শিরোনামে ওই আজকালের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘মার্চের শেষে এদেশে করোনা ঠেকাতে লকডাউন হয়। তারপর এই প্রথম বিদেশ সফরে যাচ্ছেন শ্রিংলা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এদিন কথা বলবেন তিনি। শেখ হাসিনাও লকডাউনের পর থেকে এই প্রথম কোনও বিদেশি অতিথির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর আগে ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস তিন মাস ধরে হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও সুযোগ পাননি। এদিনের বৈঠকে বিদায়ী হাই কমিশনার রিভাও উপস্থিত থাকবেন। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন যুগ্ম সচিব স্মিতা পন্থ। বর্তমানে স্মিতাই বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বিষয়টি দেখছেন। ঢাকায় পরবর্তী হাইকমিশনার নিযুক্ত হচ্ছেন বিক্রম ডোরাইস্বামী। এদিনের বৈঠকে তিনিও থাকবেন।  বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রী এ কে আবদুল মমিনের সঙ্গেও কথা বলবেন শ্রিংলা।’

‘এদিনের বৈঠক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন দুই দেশের কূটনীতিকরা। এই তিস্তার জল নিয়ে দুই দেশের টানাপোড়েন বহুদিন ধরেই চলছে। তিস্তার উৎপত্তি সিকিমে। পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের যমুনায় মিশেছে। আর একটি শাখা আসামের ব্রহ্মপুত্রে মিশেছে। ডিসেম্বর থেকে মার্চের মরসুমে নদীতে জল কমে আসে। সে সময় এই নদীর ৫০ শতাংশ জল দাবি করেছে বাংলাদেশ। 
২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিস্তার জল নিয়ে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদি। কিন্তু এখনও তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। তার অন্যতম কারণ মমতা ব্যানার্জি। তিনি নিজের রাজ্যের মানুষের স্বার্থে আঘাত করে জল দিতে রাজি নন। তাঁর কারণেই ২০১১ সালেও দুই দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সই হয়নি। এবার এই বিষয়টি নিয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যেমর খবর, সেকারণেই তিস্তার ওপর সেচ প্রকল্প নির্মাণে চীনের হাত ধরেছে ঢাকা। বাংলাদেশ–ভারত যুগ্ম নদী কমিশনের একমাত্র সদস্য মাহমুদুর রহমান জানিয়েছেন, ‘তিস্তা চুক্তি এখনও বিশ বাঁও জলে।’ এভাবে আর বসে থাকতে চাইছে না ঢাকা। 
তাছাড়া মোদি সরকার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশের পর দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা তিক্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। কিন্তু যেভাবে কিছু বিজেপি নেতা বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের কুকথা বলেছেন, তাতে চটেছে ঢাকা। তাই দিল্লির থেকে মুখ ফিরিয়ে বেজিংয়ের দিকে ঝুঁকেছে হাসিনা সরকার। এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে ভারত। বাংলাদেশও নেপালের পথ যাতে না ধরে, তাই তড়িঘড়ি ঢাকায় আজ বৈঠকে বসছে দুই দেশ ।’ 


‘হাসিনার সঙ্গে হঠাৎ বৈঠকে বিদেশসচিব’ শিরোনামে  ভারতের জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার লিখেছে, প্রায় হঠাৎই দু’দিনের ঝটিকা সফরে বাংলাদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন ভারতের বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাশ জানান, দু’দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দিল্লির ‘বিশেষ বার্তা’ নিয়ে এসেছেন বিদেশসচিব।

ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ‘গণভবনে’ হাসিনার সঙ্গে শ্রিংলার বৈঠক শুরু হয় ১৮ আগস্ট  সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। চলে প্রায় এক ঘণ্টা। পরে সাংবাদিকদের রিভা বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রয়েছে বিশেষ ও নিবিড় সম্পর্ক। এই কারণে মহামারির মধ্যে আন-অফিশিয়াল সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন বিদেশসচিব।” তিনি আরও জানান, শ্রিংলার সফরকে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সাধুবাদ জানিয়েছেন। করোনা-পরবর্তী সময়ে দু’দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা জোরদার করা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

১৮ আগস্ট সকালে ঢাকা পৌঁছান শ্রিংলা। দু’দেশের তরফেই তাঁর এই সফর নিয়ে বেশি প্রচার দেখা যায়নি। তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, শ্রিংলা ভারতীয় হাই কমিশনার হিসেবে দীর্ঘদিন ঢাকায় ছিলেন। করোনার আবহে একাধিক দ্বিপাক্ষিক সফর বাতিল হওয়া সত্ত্বেও তিনি ঢাকায় গিয়েছেন। কাজেই এই সফরের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদীর জমানায় বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ভারতের। গত বছরে নাগরিকত্ব আইন বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকে কেন্দ্র করে বিজেপি নেতাদের মন্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছিল। এখন লাদাখে চিন-ভারত স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। আর পুরনো সুসম্পর্কের জেরে বাংলাদেশের উপরে ক্রমাগত প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে চিন। ভারত-বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তি আটকে রয়েছে। কিন্তু শুষ্ক মরসুমে তিস্তার জলস্তর ধরে রাখার প্রকল্পে বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে চিন। করোনার সম্ভাব্য টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা বাংলাদেশে চালানোর ছাড়পত্রও চিন পেয়েছে। এ দিকে, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সম্প্রতি হাসিনাকে ফোন করে করোনা ও বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, ঢাকার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় ইসলামাবাদ। 

রামমন্দিরের শিলান্যাস ঘিরেও ঘরোয়াভাবে কট্টরপন্থীদের সামনে হাসিনার সরকার অস্বস্তিতে পড়ছে বলে অনেকের মত। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী মোমেন সম্প্রতি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, তা ঐতিহাসিক। এটাকে (মন্দির নির্মাণ) সেই সম্পর্কে আঘাত হানতে দেব না। তা-ও ভারতের কাছে অনুরোধ, এমন কিছু ঘটতে দেওয়া যাবে না, যা দু’দেশের সুন্দর ও গভীর সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারে।’’ সম্প্রতি বাংলাদেশকে ১০টি রেল ইঞ্জিন দিয়েছে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ইঞ্জিনগুলি পুরনো। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছিলেন, ‘‘এমন ক্ষতিকর কাহিনিগুলো একই জায়গা থেকে উঠে আসছে।’’ 
এই আবহেই শ্রিংলার সফর। বাংলাদেশের বিদেশসচিব জানান, করোনা পরিস্থিতি ও অক্সফোর্ডের টিকা পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও শ্রিংলার সঙ্গে তিনি কথা বলবেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি ২৪ ঘণ্টা লিখেছে, তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে নয়া দিল্লি ও ঢাকার দড়ি টানাটানি নতুন কিছু নয়। আর তারই মাঝে সেই তিস্তা প্রকল্পেই সম্প্রতি ঢাকাকে বিপুল পরিমাণ সাহায্যের ঘোষণা করেছে বেজিং। এমন আবহেই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলি ঝালিয়ে নিতে ও সামগ্রিক পরিস্থিতির আঁচ পেতেই এই ঝটিতি সফর বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

এদিকে ১৯৯৮ সালে তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশে গজলডোবা বাঁধ তৈরি হয়। গজলডোবা বাঁধের (ব্যারাজ) মাধ্যমে তিস্তা নদীর নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে। এই তিস্তার জল চুক্তি নিয়ে যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত। 
 ঢাকা ডিসেম্বর থেকে মার্চে তিস্তার অন্তত ৫০ শতাংশ জল প্রবাহ দাবি করেছে। গত ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরের সময়ে শেখ হাসিনাকে এ বিষয়ে আলোচনার আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। 
এর আগে ২০১১ সালে তিস্তা জলবন্টন চুক্তির শর্তের বিরোধিতায় সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে সে সময়ে চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। সূত্রের খবর, তিস্তা নিয়ে আলাদাভাবে এবার চিনের সঙ্গে এগোতে চাইছে বাংলাদেশ। 

‘তিস্তা প্রজেক্টে সাহায্য করবে চিন, শ্রিংলাকে চটজলদি বাংলাদেশ পাঠাল মোদী সরকার।’ শিরোনামে 
কলকাতা ২৪ লিখেছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে চাঙ্গা করতে মূলত এই সফর বলেই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। তবে ভারত-বাংলাদেশ সফর এইমুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে সখ্যতা বাড়াচ্ছে চিন। তবে ২০১৯ সাল থেকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। 
তিস্তা-রিভার-প্রজেক্টে কাজ করতে বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ডলার দেবে বলে ঘোষণা করেছে চিন। সেই প্রেক্ষাপটেই মূলত এমন সফর করছে ভারত। তিস্তার জলবণ্টন বিতর্ক নয়াদিল্লি-ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ইস্যু। সিকিমে উৎসস্থল তিস্তা নদীর, সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে শেষ পর্যন্ত তা অসমের ব্রহ্মপুত্র এবং বাংলাদেশের যমুনা নদীতে মিশেছে।
বাংলাদেশের তরফে নদীর জলের ৫০ শতাংশ ভাগ চাওয়া হয়েছে ডিসেম্বর-মার্চ পিরিয়ডে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় তিনি জানিয়েছিলেন দ্রুতই তিস্তা সমস্যার সমাধান হবে। তবে সে সময় থেকে খুব একটা উন্নতি কিছু হয়নি।
ভারত এবং বাংলাদেশ ২০১১ সালে তিস্তা জলবন্টন চুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছেই গিয়েছিল। কিন্তু শেষমুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাহায্য করেনি।
মোদী সরকারের দ্রুততার অভাবে বাংলাদেশ তিস্তা প্রজেক্ট নিয়ে চিনের সঙ্গে চুক্তিতে যাচ্ছে বলেই শোনা গিয়েছে। এছাড়াও ভারত নাগরিকত্ব আইন পাস করানোর পর থেকেই সম্পর্কে বেশ টান ধরেছে। এছাড়াও অতিমারি পরিস্থিতিতে সীমান্তে বিধিনিষেধ নিয়েও টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রের খবর, বাংলাদেশের তরফে বিধিনিষেধ কমানো হলেও ভারতের তরফে তেমন কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
এছাড়াও হাসিনার মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মোমেন রাম মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করা নিয়েও ঘুরিয়ে নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, এমন কোনও পদক্ষেপ করা উচিত নয় যা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক খারাপ করে।

‘তিস্তায় চীনা বিনিয়োগ ও দ্বিপক্ষীয় চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে শ্রিংলার ঢাকা সফর’ শিরোনামে দ্য হিন্দু লিখেছে, একদিকে বাংলাদেশে মেগা প্রকল্পে চীনের বিশাল বিনিয়োগ, অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ- এসব ইস্যুকে সামনে রেখে  ঢাকা সফর করছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।  দ্য হিন্দুতে তিস্তা নির্ভর সেচ বা কৃষি প্রকল্পে চীনের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার সহায়তা পেতে যাচ্ছে ঢাকা এ খবর দেয়া হয়েছে। শিরোনামের মধ্যেই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে- তিস্তা প্রকল্প চীনের বিনিয়োগকে টার্গেট করে বাংলাদেশে আসছেন শ্রিংলা। কল্লোল ভট্টাচার্য লিখেছেন, তিস্তায় সেচ প্রকল্পে চীনের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের সহায়তা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে পানিবন্টন বিষয়ক সমঝোতার কেন্দ্রে রয়েছে এই তিস্তা। এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রীষ্ম মৌসুমে তিস্তায় পানির লেভেল আশানুরূপ পর্যায়ে রাখতে সহায়ক হবে।

রিপোর্টে আরো বলা হয়, ভারতের সঙ্গে পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে ব্যর্থতার পর চীনের সঙ্গে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে অনলাইন ইউরেশিয়া ভিউ’কে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের সূত্রগুলো। ইউরেশিয়াভিউ’তে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা রংপুরে ‘তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিস্টোরেশন প্রকল্প’ বাস্তবায়নে ৮৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে রাজনৈতিক লড়াইয়ে তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি আটকে আছে। এক্ষেত্রে চীনের এই ঋণ হবে সম্পর্কের ‘ল্যান্ডমার্ক’, কারণ, এতে ভারত-বাংলাদেশ তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির পরিণতিকে সিল করে দেবে।
ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত একটি বিশাল প্রজেক্টে চীনের অর্থায়ন মেনে নেয়া হয়েছে। এতে অর্থ সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে চীন। বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেছেন, আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা এই প্রকল্প শুরু করতে পারবো।
দ্য হিন্দু আরো লিখেছে, ডিসেম্বর ও মে মাসে তিস্তা নদীতে পানির স্তর বেশি রাখার জন্য বৃহত্তর একটি শেয়ার দাবি করছে বাংলাদেশ। এ সময়ে পানির স্তর শুকিয়ে যায়। ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষিকাজ কঠিন হয়ে পড়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বার বার উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও এই তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ভারত সরকার তার প্রতিশ্রুত এই ‘ল্যান্ডমার্ক চুক্তি’কে সামনে এগিয়ে নিতে পারেনি।

‘বাংলাদেশকে চীনের আরও ‘তীব্র’ সমর্থন, মোদী কর্তৃক শ্রিংলাকে ঢাকা প্রেরণ’ শিরোনামে দ্য প্রিন্ট লিখেছে, খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই সাক্ষাৎ এর লক্ষ্য হলো দুই দেশের সম্পর্ক 'পুনরায় ঠিকঠাক' করে নেয়া যখন খবর আসছে, ঢাকা চীনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলছে।
প্রিন্ট এর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শ্রিংলার ঝটিকা সফরের খবর এমন সময়ে এলো যখন ঘোষণা হয়েছে বাংলাদেশ খুব দ্রুত তিস্তা নদী প্রকল্পে চীন থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার পেতে যাচ্ছে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় নরেন্দ্র মোদি তিস্তা ইস্যুর আশু সমাধান হবে বলে শেখ হাসিনাকে কথা দিলেও এখন পর্যন্ত বিষয়টির তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। ২০১১ সালে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি প্রায় হয়েই গিয়েছিলো। যদিও শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সহযোগিতা না করায় তা ভেস্তে যায়।

স্থানীয় গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মোদি সরকার ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ এখন চীনের সাথে এ নিয়ে চুক্তি করতে যাচ্ছে। 
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়েও দুদেশের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ভারতের সীমান্তে প্রতিবন্ধকতা তৈরির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশ নিজ সীমান্তে সকল প্রতিবন্ধকতা তুলে নিলেও ভারত তা বন্ধ করে রেখেছে।