• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৯ আগস্ট, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

কূটনীতিতে শেখ হাসিনার সেরা ৫ চমক

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্ব কূটনীতিতে এখন অন্যতম আলোচিত নাম শেখ হাসিনা। একদিকে যেমন বিচ্ছিন্নতাবাদী, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তিনি সারা বিশ্বের রোল মডেল। শান্তিপূর্ণ উপায়ে কিভাবে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদ নির্মূল করা যায় তার রোল মডেল হলেন শেখ হাসিনা। আবার অন্যদিকে তিনি একজন মানবতাবাদী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্ব কূটনীতিতে প্রশংসিত, আলোচিত। বিশেষ করে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে তিনি মানবতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনা এ সমস্ত কূটনীতিক তৎপরতা এবং কূটনীতিক বিচক্ষনতা বিশ্ব ডিপ্লোম্যাসিতে এক আলোচনার বিষয়। করোনার সংকটের সময় শেখ হাসিনা বিশ্ব কূটনীতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে হর্ষ বর্ধন শ্রীংলার ঢাকায় ছুটে আসা, শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করার পর শেখ হাসিনার কূটনীতিক চমক নতুন করে আলোচিত হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার পাঁচটি কূটনীতিক চমক সারা বিশ্বের জন্য মডেল এবং যে কোন পররাষ্ট্র বিষয়ের ছাত্রের জন্য এটি অবশ্যই গবেষণার বিষয়। যে কূটনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে শেখ হাসিনা সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছেন। তারমধ্যে রয়েছে;

চীন-ভারতের সাথে সমান্তরাল সম্পর্ক

সকলেই জানে যে চীন আর ভারতের সম্পর্কের কি হাল এবং সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের সীমান্তে এই নিয়ে উত্তেজনা এখনো চলছে। চীনের সঙ্গে যাদের ভালো সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবে ভারত তাদের শত্রু হয়। আবার ভারতের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে চীন রুষ্ট হয়। এ রকম একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যেও শেখ হাসিনা বিশ্বে একমাত্র দেশ যিনি চীন এবং ভারতের সঙ্গে সমান্তরাল গতিতে এবং প্রায় সমান উচ্চতায় সম্পর্ক রেখেছে। চীন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অংশীদার। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীন সবচেয়ে বড় পার্টনার। আবার অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ এবং দুই দেশের সম্পর্ক গত এক দশকে এক নূতন উচ্চতায় উঠেছে। এই দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা সেটি সাড়া বিশ্বের জন্য একটা চমক বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশী হস্তক্ষেপ বন্ধ

একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশে সব ব্যাপারে নাক গলাত বিদেশীরা। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের মুরুব্বী দেশগুলো বাংলাদেশে কিছু ঘটলে হাহাকার করে উঠত। রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশকে কি করতে হবে না করতে হবে সে ব্যাপারে পরামর্শ দিতো। আমরা ২০১৪ ‘র নির্বাচন পর্যন্ত এই রকম তৎপরতা দেখেছি। শেখ হাসিনার দক্ষ কূটনীতি ও বিচক্ষণতার কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশী হস্তক্ষেপ এখন বন্ধ হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন বা অন্যান্য বিষয়ে যে কথায় কথায় বিভিন্ন দুতাবাসের বিবৃতি দেওয়া বা মন্তব্য করা, নসিহত করার প্রবণতাগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মতো দেশের একজন প্রধানমন্ত্রীর এই ধরণের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত বিশ্বে উন্নয়নের জন্য সংগ্রামরত দেশগুলোর ক্ষেত্রে এক ধরণের অনুপ্রেরনা।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেও মুসলিম বিশ্বের আস্থা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহার ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তিনি করেছেন। স্বাভাবিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর একটি নেতিবাচক ধারণা ছিল। অনেকে মনে করেছিল এই কারণে সৌদি আরবসহ মধ্যেপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। শেখ হাসিনা একদিকে যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, অন্যদিকে এই দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করেছেন। অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মধ্যেপ্রাচ্যের দেশগুলোর এখন অনেক উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার আরেকটি কূটনীতিক চমক। কিভাবে তিনি পেরেছেন সেটি ব্যাখ্যা করবেন বিশ্লেষকরা। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কোন মাথাব্যথা নেই।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে একঘরে করা

১০ লাখ রোহিঙ্গা যখন আশ্রয় নিয়েছিলো বাংলাদেশে। তখন অনেকে বলেছিল যে, মিয়ানমারের পক্ষে অনেক দেশ আছে। বিশেষ করে রাশিয়া, চীন, ভারতের কথা বলা হচ্ছিলো। শেখ হাসিনা জেনেবুঝে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং এখনো দিচ্ছেন। তিনি এমন কূটনৈতিক নীতি গ্রহণ করেছেন যার কারণে সারা বিশ্বে মিয়ানমার এখন ধিকৃত হচ্ছে। মানবাধিকার প্রশ্নে রোহিঙ্গাকে একঘরে করা হয়েছে। এটাও শেখ হাসিনার কূটনীতির একটি বড় বিজয়।

জলবায়ু এবং অর্থনৈতিক কূটনীতি

শেখ হাসিনা কূটনীতির ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং দুটি বিষয়ে তাঁর অবস্থান তাকে বিশ্ব নেতায় পরিণত করেছে। একটি হল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে সে দেশগুলোকে একাট্টা করা। সেই দেশগুলোর কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে স্থাপন করা। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক কূটনীতির উপর গুরুত্ব দেওয়া। এই দুটির কারণে তিনি তৃতীয় বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। কূটনীতিবিদরা মনে করছেন, যুগোস্লাভিয়ার জোসিপ মার্শাল টিটো, ভারতের শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী যে পর্যায়ে কূটনীতি করতেন, সংগ্রামরত দেশগুলোকে উন্নয়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ করছিলেন এবং তাদের দাবি-দাওয়ার প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। তেমনিভাবে শেখ হাসিনা এখন উন্নয়নশীল দেশগুলোর কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছেন। তাঁর এই কূটনৈতিক চমক তাকে এখন সারা বিশ্বের অন্যতম সেরা কূটনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।