করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত মার্চ থেকে দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম অনেকটা স্থগিতই ছিল। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের তেজ তেমন না কমলেও রাজনৈতিক স্থবিরতা কাটতে শুরু করেছে। মৃত্যুজনিত কারণে শূন্য হওয়া পাঁচ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠে এখন দেখা দিয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য। আওয়ামী লীগ তিনটি ও বিএনপি একটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। বাকি আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শেষ করেছে আওয়ামী লীগ। ঘোষণার জন্য তফসিলের অপেক্ষা। অন্যদিকে গতকাল শনিবার বিকালে চার আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের চাঙাভাব ফিরে আসছে। দলীয় কার্যালয়গুলো নেতাকর্মীদের ভিড়ে বেশ সরব এখন।
চারটি আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দলীয় ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া শেষ হয়েছে। ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় ব্যাপক শোডাউন দিয়েছেন প্রার্থীরা। এতে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল সরগরম। করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকায় নেতাকর্মীরা এতদিন কার্যালয়বিমুখ থাকলেও অনেকদিন পর নির্বাচন উপলক্ষে কার্যালয়মুখী হয়েছেন তারা। গত সপ্তাহে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনয়ন ফরম বিক্রি, জমা ও প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষ করেছে। এ নিয়ে গত কিছুদিন থেকে উৎসবমুখর দলটির কার্যালয়। মহামারীর মধ্যেও নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত।
শুক্রবার সকালে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সরব হয়ে ওঠে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, নওগাঁ-৬ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সকাল থেকে কর্মী-সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ঢাকা-১৮ আসনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুবদলের উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, ঢাকা-৫ আসনে মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবীসহ চার আসনে ২৯ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরম জমা দিয়েছেন। ধানের শীষ, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি নিয়ে কর্মী-সমর্থকরা মিছিল নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোডাউন করেন।
ঢাকা-৫ ও ১৮ আসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা বেশি। রাজধানীতে এ দুই নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা অনানুষ্ঠানিক ঘরোয়া গণসংযোগ শুরু করেছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নির্বাচনী আবহ তৈরি করেছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ঘরোয়া বৈঠকও করছেন তারা। ফলে রাজনীতিতে গতিও ফিরতে শুরু করেছে।
ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনে ভোটগ্রহণ ১৭ অক্টোবর। ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তফসিল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এ ছাড়া পাবনা-৪ আসনে ভোট হবে ২৬ সেপ্টেম্বর। এ আসনে নুরুজ্জামান বিশ্বাসকে আওয়ামী লীগ এবং দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবকে বিএনপি প্রার্থী করেছে। ইতোমধ্যে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠেও নেমেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। পাবনা-৪ আসনের নির্বাচন মনিটরিংয়ের জন্য জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে সদস্য সচিব করে ‘কেন্দ্রীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কমিটি’ করেছে বিএনপি। এ কমিটি গত রবিবার থেকে কাজ শুরু করেছে।
অন্যদিকে, ৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন যান পাবনা-৪ আসনে। সেখানে দুদিন দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করেন। দলীয় প্রার্থী নুরুজ্জামানকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। গতকাল ৪ দিনের সফরে আবারও পাবনা-৪ ও নওগাঁ-৬ আসনে যান কামাল হোসেন।
তিনি জানান, প্রথম দুদিন পাবনার দলীয় সব মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং ইউনিয়ন থেকে শুরু করে থানা ও জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে মিটিং করবেন। এর পর যাবেন নওগাঁয়। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবেন। এ দিকে ঢাকা-৫ আসনের প্রার্থী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে ইতোমধ্যে বৈঠক শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সিরাজগঞ্জ-১ ও ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত হলে সেসব আসনেও যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। অর্থাৎ এই মাস থেকে পুরোদমে নির্বাচনী প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক ব্যস্ততায় কাটাবেন আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, উপনির্বাচনে দেশের প্রচলিত আইন মেনে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করাও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ। করোনার ভয়াবহ পর্যায়ে দলের কাজ ভার্চুয়ালি হয়েছে, এখন করোনার প্রভাব কিছুটা কমায় স্বাভাবিকভাবে হবে। করোনার প্রভাব যত কমতে থাকবে পুরনো প্রক্রিয়ায় আমাদের কার্যক্রম তত বাড়তে থাকবে। করোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের কার্যক্রম চলবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে দুঃশাসন চলছে ভয়ংকর নাৎসীবাহিনীর শাসনের মধ্যে গণতন্ত্র প্রসারণের জন্য যেখানে আমরা যতটুকু সুযোগ পাব সেটা ব্যবহার করব। আমরা এর আগেও দেখেছি, নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন ও ভোট এগুলোকে জাদুঘরে পাঠানোর জন্য সরকার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। আমরা ১২ বছর নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করছি গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য। ৫০ থেকে ২৫০-৩০০ মামলা নিয়ে তৃণমূল থেকে সিনিয়র নেতা পর্যন্ত এ সংগ্রামে অংশ নিচ্ছে। আমরা এসব উপনির্বাচনকে সংগ্রামের অংশ হিসেবে নিয়েছি।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণের ওপর অত্যাচার করে হয়তো সাময়িক লাভবান হতে পারে। অবশেষ জনগণের শক্তিই চূড়ান্ত বিজয়ী হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা এগোচ্ছি, ইনশাআল্লাহ এসব উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন।