ক্ষোভ ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক পাষাণ্ড স্বামীর বিরুদ্ধে। নিহত গৃহবধূর নাম জান্নাতুল ফেরদৌস।
তিনি চাঁদপুরের মতলব উপজেলার মাসুনডা গ্রামের রুস্তম আলীর মেয়ে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে জান্নাতুল ছিল সবার ছোট। জান্নাতুল রাজধানীর উত্তরায় একটি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডেন্টাল প্যারামেডিক্যাল পাস করেছেন। জারিফ বিন নামে তাদের দেড় বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে রাজধানীর সবুজবাগের নন্দীপাড়ার একটি ফ্ল্যাট থেকে গৃহবধূ জান্নাতুলের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পরপরই ওই বাসার ছাদ থেকে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় মনির নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে এসে জান্নাতুলের বাবা রুস্তম আলী অভিযোগ করে বলেন, আটক মনিরকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আমার মেয়েকে হত্যা জন্য ভাড়া করেন তার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মনির বাসায় ঢুকে তার মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করেছেন।
তিনি বলেন, সাত বছর আগে প্রেমের সম্পর্কে সোহেলকে তার মেয়ে বিয়ে করেন। সোহেল একটি ট্যুরিজম কোম্পানিতে চাকরি করেন। তারা সবুজবাগের দক্ষিণগাঁওয়ের ৬৬ নম্বর বাসার চার তলায় নিজ ফ্ল্যাটে থাকতেন। গত আড়াই মাস আগে সোহেল ও জান্নাতুল নিজেদের ফ্ল্যাটে উঠে। প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে করার পর থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী আলাদাই থাকতেন। পারিবারিক বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াও হতো। এর আগে ওই এলাকায় অন্য একটি বাসায় তারা ভাড়া থাকতেন। সেখানে তাদের পাশের একটি ফ্ল্যাটে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন সোহেলের ভাবি তারিকা খানম। জান্নাতুলকে তেমন পছন্দ করতেন না তারিকা। ভাবীর কথা শুনে মাঝেমধ্যেই জান্নাতুলের সঙ্গে ঝগড়া করতেন সোহেল। তবে কি কারণে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো তা বলতো না।
জান্নাতুলের বাবা রুস্তম আলী বলেন, সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে আমরা ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পাই। এর কিছুক্ষণ পরে চার তলা ছাদ থেকে মনিরকে আটক করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে মনির আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন, সোহেল ও তার ভাবী তারিকা তাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করেছেন জান্নাতুলকে খুন করতে।
রুস্তম আলীর অভিযোগ, তার মেয়েকে স্বামী সোহেল ও তার ভাবী পরিকল্পিতভাবে খুন করেছেন।
তিনি বলেন, এছাড়া জান্নাতুলের গলায় সোনার চেইন ছিল, ঘরে টাকা-পয়সা ছিল। খুনি কিছুই নেননি। সব কিছুই ঠিক আছে। যদি কেউ চুরি করতে আসতো তিনি লুটপাট করতেন।
এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচারের দাবি জানান জান্নাতুলের বাবা রুস্তম আলী। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আদালতে মেয়ের হত্যা বিচারে চেয়ে মামলা করবো।
সবুজবাগ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম জানান, মনিরকে আটকের পর থেকে তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছে, চুরি করতে তিনি ওই ফ্ল্যাটে ঢুকেন। চারতলার পকেট গেট দিয়ে ওই গৃহবধূর বাসায় প্রবেশ করেন তিনি। এ সময় গৃহবধূ জান্নাতুল তাকে চিনে ফেলায় মনির তার পিঠে ছুরি দিয়ে সাতটি আঘাত করেন। পরে গৃহবধূর বাসায় থাকা চাপাতি দিয়ে জান্নাতুলের গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, গতকয়েকদিন আগে মনির ৮০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কিনেছিলেন। মনির ওই ভবনে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে গত ছয় মাস যাবত কাজ করছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি মাহবুব আলম বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে গৃহবধূর স্বামী ও তার ভাবী জড়িত কি না এমন অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।