• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

হিল্লা বিয়ে হারাম! (পর্ব-২)

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

ফতোয়া : (২)
শায়খ মুহাম্মদ ইব্‌ন সালেহ আল-উসাইমিন এর ফতোয়া :

প্রশ্ন : আপনাদের দৃষ্টিতে শরীয়াতে হিল্লা বিয়ের বিধান কী ?
উত্তর : প্রথমে জানা প্রয়োজন যে, হিল্লা বিয়ে কি। কোন ব্যক্তির এমন নারীকে বিয়ে করার ইচ্ছা করা, যাকে তার স্বামী তিন তালাক দিয়েছে, অর্থাৎ তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে অতঃপর ফিরিয়ে নিয়েছে, আবার তালাক দিয়ে অতঃপর ফিরিয়ে নিয়েছে, পুনরায় তৃতীয়বার তাকে তালাক দিয়েছে। স্বামীর তিন তালাক প্রাপ্তা এ নারী পুনরায় তার স্বামীর জন্য বৈধ হবে না, যতক্ষণ না তাকে দ্বিতীয় স্বামী আগ্রহসহ বিয়ে করে তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়, অতঃপর সে ঐ স্বামী থেকে পৃথক হয় তার মৃত্যুর কারণে, অথবা তালাকের কারণে, অথবা বিয়ে ভেঙে দেয়ার কারণে, তাহলে সে প্রথম স্বামীর জন্য বৈধ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
-(الطَّلاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ )-(البقرة: من الآية229) إلى قول الله تعالى : -(فَإِنْ طَلَّقَهَا)-(البقرة: من الآية230) أي الثالثة -(َإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَنْ يَتَرَاجَعَا إِنْ ظَنَّا أَنْ يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ )-(البقرة: من الآية230)
কোন ব্যক্তি যদি এ ধরনের নারীকে বিয়ে করে, অর্থাৎ যাকে তার স্বামী তিন তালাক দিয়েছে, এ নিয়তে যে, যখন নারীটি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে, অর্থাৎ যখন সে তার সাথে সহবাস করবে, সে তাকে তালাক দিয়ে দেবে, অতঃপর নারীটি ইদ্দত পালন করে তার পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে যাবে। এ বিয়ে সংঘটিত হয় না, এ বিয়ে অবৈধ ও অভিশপ্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিয়েতে হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কেই অভিসম্পাত করেছেন। তিনি হিল্লাকারীকে ভাড়া করা পাঠা আখ্যা দিয়েছেন। কারণ সে ভাড়া করা পাঠার ন্যায়, যেমন বকরির মালিক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পাঠা ভাড়া করে অতঃপর তার মালিককে ফেরৎ দেয়। এ ব্যক্তি পাঠার ন্যায়, তার কাছে তালাক প্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করা, অতঃপর তাকে পৃথক করে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ হিল্লা বিয়ে দু’ভাবে হয় :
এক. কাউকে বলা হল, আমাদের মেয়েকে তোমার কাছে বিয়ে দিচ্ছি এ শর্তে যে, তার সাথে সহবাস হলে তাকে তুমি তালাক দিয়ে দেবে।
দুই. কোন শর্ত ছাড়া শুধু অন্তরে নিয়ত গোপন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল। এ নিয়ত স্বামীর মধ্যে আবার কখনো স্ত্রী ও তার অভিভাবকের মধ্যেও থাকতে পারে। যদি স্বামীর মধ্যে এ নিয়ত থাকে, মূলত পৃথক করার অধিকার সেই সংরক্ষণ করে, তাহলে এ আকদের মাধ্যমে তার জন্য স্ত্রী হালাল হবে না, কারণ এ বিয়ের মধ্যে বিয়ের মূল উদ্দেশ্যই তার ছিল না, অর্থাৎ মহব্বত, ভালবাসা এবং নিজেকে পবিত্র রাখা ও সন্তান লাভের আশা ইত্যাদিসহ আজীবন স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার করার বিয়ের যে মূল উদ্দেশ্য, তাই তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল না, অতএব এ বিয়ে বিশুদ্ধ হবে না। আর নারী বা তার অভিভাবকের হিল্লার নিয়তের ব্যাপারে আলেমদের মত বিরোধ রয়েছে, এখন পর্যন্ত আমার কাছে বিশুদ্ধ মন্তব্য কোনটি স্পষ্ট নয়। মুদ্দাকথা : হিল্লা বিয়ে হারাম, এ বিয়ের ফলে নারী তার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না, কারণ এ বিয়েই শুদ্ধ নয়”। শায়খ উসাইমীন -রাহিমাহুল্লাহ – ‘ফতোয়া নুরুন আলাদ্দারব’, পৃষ্ঠা : (৫৭)

ফতোয়া : (৩)
হিল্লা বিয়ে হারাম ও বাতিল

প্রশ্ন : আমার এক বন্ধু তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে, আমি কি তাকে বিয়ে করে অতঃপর তালাক দিতে পারি, যেন সে তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যায় ?
উত্তর :হিল্লা বিয়ে 
আল-হামদুলিল্লাহ
যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, তখন সে তার জন্য হালাল হয় না, যতক্ষণ না দ্বিতীয় স্বামী তাকে বিয়ে করে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
(فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ) البقرة/230 .
“অতএব যদি সে তাকে (তৃতীয়) তালাক দেয় তাহলে ‎‎সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ ‎পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে”। সূরা বাকারা : (২৩০)
এ বিয়ে বৈধ ও বিশুদ্ধ হওয়া শর্ত, অর্থাৎ যে বিয়ে দ্বারা স্ত্রী তার পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হয়, সে বিয়ে বিশুদ্ধ হওয়া জরুরী। অতএব নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিয়ে করা (যেমন মুতআ) অথবা প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে বিয়ে করা অতঃপর তালাক দেয়া উভয় সকল আলেমের মতে হারাম ও বাতিল। এ বিয়ের মাধ্যমে নারী প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না। ‘আল-মুগনি’ : (১০/৪৯-৫৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হিল্লা বিয়ে হারাম। ইমাম আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেন :
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : (لَعَنَ اللَّهُ الْمُحَلِّلَ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ) . وصححه الألباني في سنن أبو داوود .
নবী সাল্লাল্রাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়ের উপর আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন”। আবু দাউদ : হাদিস নং : (২০৭৬), আল-বানি রহ. সুনানে আবু দাউদে হাদিসটি সহিহ বলেছেন। ইব্‌ন মাজা উকবা ইব্‌ন আমের রা. থেকে বর্ণনা করেন :
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : (أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِالتَّيْسِ الْمُسْتَعَارِ ؟ قَالُوا : بَلَى ، يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ : هُوَ الْمُحَلِّلُ ، لَعَنَ اللَّهُ الْمُحَلِّلَ ، وَالْمُحَلَّلَ لَهُ) وحسنه الألباني في صحيح سنن بن ماجة .
নবী সাল্লাল্রাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আমি কি তোমাদেরকে ভাড়া করা পাঠা সম্পর্কে বলব ? তারা বলল : অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন : সে হচ্ছে হিল্লাকারী, হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়ের উপর আল্লাহ লানত করেছেন”। সহিহ সুনানে ইব্‌ন মাজাতে আল-বানি হাদিসটি হাসান বলেছেন। ইব্‌ন মাজাহ : হাদিস নং : (১৯৩৬)
মুহাদ্দিস আব্দুর রাজ্জাক রহ. বর্ণনা করেন, ওমর ইব্নুল খাত্তাব রাদিআল্লাহ আনহু মানুষদের সম্মোধন করে বলেছেন :
(والله لا أوتى بمحلٍّ ومحلَّل له إلا رجمتهما) .
“আল্লাহর শপথ, আমার নিকট যদি হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয়েছে পেশ করা হয়, আমি তাদের উভয়কে অবশ্যই প্রস্তরাঘাত করব”। আব্দুর রাজ্জাক : হাদিস নং : (৫/২৬৫)
আকদের সময় নিয়ত প্রকাশ করা ও শর্ত দেয়া যে, যখনই সে প্রথম স্বামীর জন্য তাকে হালাল করবে, তখনই সে তাকে তালাক দিবে, অথবা কোন শর্ত ব্যতীত শুধু মনে হিল্লার নিয়ত করা উভয় সমান, কোন পার্থক্য নেই, বিয়ে শুদ্ধ হবে না, এর দ্বারা নারী প্রথম স্বামীর জন্য হালালও হবে না।
ইমাম হাকেম নাফে থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি ইব্‌ন ওমর রাদিআল্লাহু আনহুমাকে বলে :
امرأة تزوجتها أحلها لزوجها ، لم يأمرني ولم يعلم . قال : لا ، إلا نكاح رغبة ، إن أعجبتك أمسكها ، وإن كرهتها فارقها . قال : وإن كنا نعده على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم سفاحاً . وقال : لا يزالان زانيين ، وإن مكثا عشرين سنة .
আমি এক নারীকে তার স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে বিয়ে করেছি, আমাকে সে নির্দেশ দেয়নি এবং আমার নিয়ত সম্পর্কে সে জানেও না। তিনি বললেন : না, আগ্রহের বিয়ে ব্যতীত হালাল হবে না, যদি তোমার পছন্দ হয় তাকে রেখে দেবে, আর যদি তোমার অপছন্দ হয় তাকে পৃথক করে দেবে। তিনি বললেন : আমরা এটাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যেনা বিবেচনা করতাম। তিনি বলেন : তারা যেনা করতেই থাকবে, যদিও তারা এ অবস্থায় বিশ বছর অতিক্রান্ত করে।
ইমাম আহমদ ইব্‌ন হাম্বলকে জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল :
وسئل الإمام أحمد عن الرجل يتزوج المرأة ، وفي نفسه أن يحلها لزوجها الأول ، ولم تعلم المرأة بذلك . فقال : هو محلل ، إذا أراد بذلك الإحلال فهو ملعون .
ইমাম আহমদ ইব্‌ন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে কোন নারীকে বিয়ে করে, কিন্তু তার অন্তরের নিয়ত হচ্ছে স্ত্রীকে তার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করা, অথচ নারী তার এ নিয়ত সম্পর্কে জানে না। তিনি বললেন : সে হিল্লাকারী, যদি সে এর দ্বারা হালাল করার ইচ্ছা করে, তাহলে সে অভিশপ্ত।
অতএব তোমার জন্য বৈধ নয়, প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে এ নারীকে বিয়ে করা। এমন করা কবিরা গুনা, এর দ্বারা বিয়ে শুদ্ধ হবে না, বরং যেনা হবে। আল্লাহর নিকট এর থেকে আমরা পানাহ চাই।
শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ, সূত্র : موقع الإسلام سؤال وجواب

সম্পাদনায়: এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ, সম্পাদক: ক্রাইম প্রতিদিন, প্রতিষ্টাতা ও চেয়ারম্যান: অপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ চাই