• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

হিল্লা বিয়ের নিষেধাজ্ঞার হাদিস (পর্ব-৩)

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

ফতোয়া : (৪)
হিল্লা বিয়ের নিষেধাজ্ঞার হাদিস ও রিফাআর স্ত্রীর হাদিসের বৈপরিত্ব দূরীকরণ এবং সামঞ্জস্য বিধান।

প্রশ্ন : ইমাম আবু দাউদ তার সুনান গ্রন্থে বর্ণনা করেন :
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال ” لعن الله المحلل والمحلَل له”.
নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন”।
প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে নারীকে যে ব্যক্তি বিয়ে করে, সে হিল্লাকারী। আর যার জন্য হিল্লা করা হয়, সে হচ্ছে প্রথম স্বামী। উকবা ইব্‌ন আমের রাদিআল্লাহু আনহু সূত্রে ইব্‌ন মাজাহ বর্ণনা করেন :
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ” ألا أخبركم بالتيس المستعار؟ قالوا: بلى يا رسول الله. قال: هو المحلل. لعن الله المحلل والمحلل له.”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি কি তোমাদের ভাড়া করা পাঠা সম্পর্কে সংবাদ দেব না ? তারা বলল : অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন : সে হচ্ছে হিল্লাকারী। হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন।
এ দুই হাদিস থেকে আমরা বুঝি শরিআতের দৃষ্টিতে হিল্লা হারাম, কিন্তু এর বিপরীতে সুনান আবু দাউদে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত রয়েছে :
أن النبي صلى الله عليه وسلم سُئل عن رجل طلق زوجته ثلاثاً فتزوجت رجلاً اخر طلقها قبل أن يواقعها، فهل يجوز أن تعود لزوجها الأول.. فقالت عائشة رضي الله عنها: فأجاب النبي صلى الله عليه وسلم: لا تحل له حتى يذوق عسيلتها وتذوق عسيلته أي الزوج الثاني..
নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে, অতঃপর অপর ব্যক্তি তাকে বিয়ে করে সহবাস ব্যতীতই তালাক দেয়, তার জন্য কি প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়া বৈধ ? আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দেন : সে হালাল হবে না, যে পর্যন্ত না সে (দ্বিতীয় স্বামী) তার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে এবং সে (স্ত্রী) তার (দ্বিতীয় স্বামীর) সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে।
এ হাদিস থেকে আমরা বুঝি হিল্লা বৈধ, তবে দ্বিতীয় স্বামীর তার সাথে সহবাস করা জরুরী। এর দ্বারা উভয় দলিলের বৈপরীত্ব কি স্পষ্ট হয় না ? প্রথম দুই হাদিস দ্বারা বুঝি হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয় অভিশপ্ত, আর দ্বিতীয় হাদিসে দেখি যে, এতে কোন সমস্যা নেই। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কি ?

উত্তর :
আল-হামদুলিল্লাহ
এসব হাদিসের মধ্যে কোন বৈপরীত্ব নেই, কারণ ব্যক্তি যখন তিন তালাক প্রাপ্তা নারীকে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে বিয়ে করে, তখন এ বিয়ে হারাম, এ বিবাহকারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।
আর রেফাআর স্ত্রীর হাদিস, সেখানে উল্লেখ নেই যে, আব্দুর রহমান ইব্‌ন জুবায়ের তাকে হালাল করার নিয়তে বিয়ে করেছেন, অধিকন্তু হাদিসের বর্ণনা প্রমাণ করে যে, তিনি তাকে আগ্রহ ভরে এবং স্থায়ীভাবে রাখার উদ্দেশ্যেই বিয়ে করেছেন, আর তার তলব করাতেই তিনি তাকে তালাক দিয়ে দেননি, বরং সে তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলে দিয়েছেন যে, দ্বিতীয় স্বামীর তার সাথে সহবাস না করা পর্যন্ত, তার জন্য এটা বৈধ হবে না, সে উল্লেখ করেছিল দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে সহবাস করেনি।
রেফাআর স্ত্রীর হাদিসের কিছু শব্দ :
ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন :
رواه البخاري (2639) ومسلم (1433) عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا : (جَاءَتْ امْرَأَةُ رِفاعَةَ الْقُرَظِيِّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ : كُنْتُ عِنْدَ رِفَاعَةَ فَطَلَّقَنِي فَأَبَتَّ طَلَاقِي فَتَزَوَّجْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الزَّبِيرِ . فَقَالَ : ( أَتُرِيدِينَ أَنْ تَرْجِعِي إِلَى رِفَاعَةَ ؟ لَا ، حَتَّى تَذُوقِي عُسَيْلَتَهُ ، وَيَذُوقَ عُسَيْلَتَكِ ) .
আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন : “বনু কুরাইজা বংশের রিফাআর স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলে : আমি রিফাআর নিকট ছিলাম, সে আমাকে তিন তালাক দেয়, অতঃপর আমি আব্দুর রহমান ইব্‌ন জুবায়েরকে বিয়ে করি। অতঃপর তিনি বলেন : তুমি কি রিফাআর কাছে ফিরে যেতে চাও ? না, যেতে পারবে না, যতক্ষণ না তুমি তার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ কর এবং সে তোমার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে”। বুখারি : (২৬৩৯), মুসলিম : (১৪৩৩)
ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন :
وروى مسلم (1433) عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها قَالَتْ : طَلَّقَ رَجُلٌ امْرَأَتَهُ ثَلَاثًا فَتَزَوَّجَهَا رَجُلٌ ثُمَّ طَلَّقَهَا قَبْلَ أَنْ يَدْخُلَ بِهَا ، فَأَرَادَ زَوْجُهَا الْأَوَّلُ أَنْ يَتَزَوَّجَهَا ، فَسُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ : ( لَا حَتَّى يَذُوقَ الْآخِرُ مِنْ عُسَيْلَتِهَا مَا ذَاقَ الْأَوَّلُ ) .
আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন : “এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, ফলে অপর ব্যক্তি তাকে বিয়ে করে সহবাসের পূর্বেই তালাক দেয়, অতঃপর প্রথম স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে চায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন : না, যতক্ষণ না দ্বিতীয় ব্যক্তি তার স্বাদ গ্রহণ করে, যেমন প্রথম ব্যক্তি গ্রহণ করেছে”। মুসলিম : (১৪৩৩)
এসব হাদিসে উল্লেখ নেই যে, আব্দুর রহমান তাকে হিল্লার নিয়তে বিয়ে করেছেন, বরং মহিলা নিজেই তার প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্তি করেছে। মহিলার এ নিয়তের কারণে বিয়ে হিল্লা হবে না, যেহেতু তার হাতে তালাকের অধিকার নেই।
শায়খুল ইসলাম ইব্‌ন তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন :
“নারী যখন প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য তা বৈধ রেখেছেন, যখন দ্বিতীয় স্বামী তার সাথে সহবাস করে। তিনি স্পষ্ট বলেননি মহিলার মধ্যে এ নিয়ত পরে সৃষ্টি হয়েছে, না আগে থেকেই ছিল, এ দ্বারা বুঝা যায় উভয় অবস্থায় নারী প্রথম স্বামীর জন্য হালাল। কারণ নারীর অন্তরে যদি স্বামীর মহব্বত থাকে, আর এমতাবস্থায় কোন কারণে সে তালাকের শিকার হয়, তাহলে অধিকাংশ সময় সে স্বামীকে ভুলতে পারে না, স্বামীর অনেক স্মৃতিই তাকে আন্দোলিত করে। আর নারীরা সাধারণত তালাককে খুব ঘৃণা করে এবং অন্যদের সাথে সংসার করার চাইতে পূর্বের স্বামীর নিকট ফিরে যেতেই পছন্দ করে”। “আল-ফতোয়া আল-কুবরা” : (৬/৩০১)
ইব্‌ন আব্দুল বারর রাহিমাহুল্লাহ বলেন : “রিফাআর স্ত্রীকে সম্মোধন করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : (أتريدين أن ترجعي إلى رفاعة) “তুমি কি রিফাআর নিকট ফিরে যেতে চাও ?” এর দ্বারা বুঝা যায়, স্ত্রীর মধ্যে প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কারণে বিবাহকারীর সমস্যা হবে না, এটা হিল্লার অর্থও বহন করে না, যে হিল্লাকারী অভিশপ্ত”। “আত-তামহিদ” : (১৩/২২৭)
ইব্নুল কাইয়ূম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : “স্ত্রীর নিয়ত বা তার অভিভাবকের নিয়ত বিয়ের মধ্যে প্রভাব ফেলবে না, বরং দ্বিতীয় স্বামীর নিয়তই এখানে কার্যকর। দ্বিতীয় স্বামী যদি হিল্লার নিয়ত করে, তাহলে সে লানতের উপযুক্ত হবে, অতঃপর প্রথম স্বামী লানতের উপযুক্ত হবে, যদি এ বাতিল বিয়ের মাধ্যমে তালাক প্রাপ্তা নারীকে ফিরিয়ে নেয়। অতএব দ্বিতীয় স্বামী ও প্রথম স্বামী যদি নারী অথবা তার অভিভাবকের অন্তরে বিদ্যমান হিল্লার নিয়ত সম্পর্কে না জানে, তাহলে বিয়েতে কোন সমস্যা হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রিফাআর স্ত্রী থেকে জেনেছেন, সে তার নিকট ফিরে যেতে চায়, এ নিয়তের কারণে যেতে পারবে না তিনি বলেননি, বরং সহবাস না হওয়াকে তিনি না যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন : “যতক্ষণ না তুমি তার সহবাস করার স্বাদ গ্রহণ কর এবং সে তোমার সহবাস করার স্বাদ গ্রহণ করে”। “ইলামুল মুআক্কিয়িন” : (৪/৪৫-৪৬) আল্লাহ ভাল জানেন।
শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ, সূত্র : موقع الإسلام سؤال وجواب

সম্পাদনায়: এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ, সম্পাদক: ক্রাইম প্রতিদিন, প্রতিষ্টাতা ও চেয়ারম্যান: অপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ চাই