• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৯ জানুয়ারী, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের গোড়ায় গলদ

যুগান্তর রিপোর্ট

পুরান ঢাকা রক্ষায় শ্যামপুরে অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম নির্মাণে গোড়ায় গলদ ধরা পড়েছে। মাটি খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া গেছে ২০-২৫ ফুট গভীর গর্ত, যা ময়লা-আবর্জনা দিয়ে ভরা। কেন সয়েল টেস্ট ও ডিজিটাল সার্ভেতে ডাম্পিং গর্ত ধরা পড়ল না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্রকল্পটির মেয়াদ ৩ মাস বাড়ানো হচ্ছে। ২৯ ডিসেম্বর প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘শ্যামপুরের কদমতলীতে প্রকল্প এলাকায় এ ত্র“টি ধরা পড়েছে। তবে প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা গর্ত থেকে ময়লা আবর্জনা তোলার কাজ শুরু করেছি। এরপর বালু দিয়ে ভরাট করা হবে। ১৮-২০ বছর ধরে স্থানটি বেহাল অবস্থায় থাকায় জঙ্গল তৈরি হয়েছিল। যারা সয়েল টেস্ট বা সার্ভে করেছে তারা আশপাশ থেকে মাটি নিয়ে টেস্ট করায় গর্তটি ধরা পড়েনি। তবে আমরা সংশ্লিষ্ট কনসালট্যান্ট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। যে জটিলতা আছে সেটি দ্রুত কেটে যাবে।’ যারা সয়েল টেস্ট ও সার্ভের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।

শিল্প সচিবের সভাপতিতে অনুষ্ঠিত স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, গত বছরের ২১ নভেম্বর ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ওয়ার্কস লিমিটেডের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর হয়েছে। ১ ডিসেম্বর কোম্পানিটিকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়। সে প্রেক্ষিতে ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি তাদের মোবিলাইজেশন, ফেন্সিং ও ক্লিনিং কার্যক্রম শুরু করে। এ কাজের শুরুতে কনস্ট্রাকশন সাইডে একটি ডাম্পিং গর্ত দেখতে পাওয়া যায়। যার আনুমানিক গড় গভীরতা ২০-২৫ ফুট। আগে গর্তটি ময়লা ফেলে ভরাট করা হয়েছিল। ইতিপূর্বে এ স্থানে ট্র্যাক স্ট্যান্ড ছিল। এ পর্যায়ে সয়েল টেস্ট ও ডিজিটাল সার্ভেতে বিষয়টি কেন ধরা পড়ল না সভায় তা জানতে চাওয়া হয়। এ সময় বাস্তবায়নকারী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, যারা সয়েলটেস্ট করেছেন তারা পুনরায় বিনামূল্যে সয়েল টেস্ট করতে সম্মত আছে। সভায় বলা হয়, সয়েল টেস্ট সঠিকভাবে না করা হয়ে থাকলে এবং নির্মাণ কাজের প্রথম পর্যায়ই ত্র“টিপূর্ণ হলে পরে বিল্ডিং এবং ওভারহেড ট্যাংক ধসে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে। তাছাড়া মাটি বসানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সভায় বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (বিসিক) নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া সভায় পুকুর বা জলাশয় ঠিক রেখে প্রকল্পের কাজ করার কথা বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ঢাকার কদমতলীর শ্যামপুরে ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ’ নামের প্রকল্পটি গত বছরের এপ্রিলে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে রাসায়নিক দ্রব্যাদি নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করা, পুরনো ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণভাবে সংরক্ষিত রাসায়নিক পদার্থগুলো দ্রুত স্থানান্তর নিরাপদ সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের নিরাপদ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)। চলতি বছর জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।

সূত্র জানায়, পুরান ঢাকা একটি ঐতিহ্যবাহী ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। অনেক দিন ধরেই এ এলাকার অনেক বাড়ি রাসায়নিক পদার্থের কারখানা ও গুদাম হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক পদার্থের গুদাম থাকা অত্যন্ত বিপজ্জনক। পুরনো ঢাকার বাসিন্দারা একাধিকবার এ কারণে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১০ সালে নিমতলীর অগ্নিকাণ্ড এবং বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড অন্যতম। পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে ইতিমধ্যেই সরকার বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) মাধ্যমে বৈধ কেমিক্যাল কারখানা এবং কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের জন্য স্থায়ী কারখানা ও গুদাম নির্মাণের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ হওয়ায় দ্রুততম সময়ে বিদ্যমান বৈধ ব্যবসায়ীদের বিপজ্জনক কেমিক্যাল কারখানা সাময়িকভাবে কেমিক্যাল সংরক্ষণের জন্য বিসিআইসির আওতায় ঢাকার শ্যামপুরে উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে গুদাম নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ৫৪টি গুদাম নির্মাণ করা হবে। এছাড়া গুদাম সংশ্লিষ্টদের জন্য দুটি অফিস ভবন নির্মাণ, বিসিআইসির জন্য একটি অফিস ভবন ও মসজিদ তৈরি, ১ লাখ গ্যালন ধারণ ক্ষমতার একটি আন্ডার গ্রাউন্ড পানির ট্যাংক নির্মাণ, দুটি ইটিপি স্থাপন, ৯টি ফায়ার হাইড্রান্টসহ স্বয়ংক্রিয় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা স্থাপন, ৩০টি সিসি ক্যামেরা ও অনলাইন মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন, এক লাখ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ওভারহেড পানির ট্যাংক, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন-ট্রান্সফরমার-জেনারেটর, রাস্তা, ড্রেন ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হবে।