• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৭ অক্টোবর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

ধর্ষণের শাস্তি লিঙ্গ কর্তন, মৃত্যুদণ্ড নাকি ক্রসফায়ার?

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

সময়ের সঙ্গে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো নেক্কারজনক ঘটনা বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূ ধর্ষণ, নোয়াখালীর একলাসপুরে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা মানুষকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

শাহবাগসহ সারাদেশে চলছে ধর্ষণ বিরোধী বিক্ষোভ। অনেকে ধর্ষকের লিঙ্গ কর্তন, ক্রসফায়ার কিংবা মৃত্যুদণ্ড দেয়ার কথা বলেছেন।

অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী মনে করেন, লিঙ্গ তো আর একা ধর্ষণ করতে পারে না, ধর্ষণে প্রলুব্ধ করে মাথার ভেতর বাস করা অমানুষটা। মৃত্যুদণ্ড এদের জন্য যথেষ্ট নয়। প্রকাশ্যে এই অমানুষগুলোর লিঙ্গ শরীর থেকে কেটে আলাদা করে দেওয়া হোক। যাতে লিঙ্গের ওপর শয়তান মাথার কোনো অধিকার না থাকে। তাহলেই এই বর্বরতা থেমে যাবে।

বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক চুন্নুর পয়েন্ট অব অর্ডারে ১৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে শিশু ও নারী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শান্তি মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি এ ধরনের অমানবিক ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড নিরসনে প্রয়োজনে ধর্ষকদের ’এনকাউন্টার’ (ক্রসফায়ার) দেয়ার দাবি উঠে জাতীয় সংসদে। একমত পোষণ করেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদও। তারা বলেন, ধর্ষকদের প্রয়োজনে বন্দুকযুদ্ধে দিলে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের নিষ্ঠুর ও অমানবিক কর্মকাণ্ড ঘটাতে সাহস পাবে না। পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ২০১৯ সাল ধর্ষণের মহোৎসব ঘটেছে। তাই সময় এসেছে চিন্তা করার, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হোক।

ধর্ষকদের গ্রেফতার ও  ফাঁসির দাবিতে যখন সারাদেশ উত্তাল তখন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় সরকার যেমন বিব্রত, আমরাও তেমনি বিব্রত। এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে সমাজ থেকে এই ব্যাধি দূর করা হবে। 

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, আমি মনে করি ধর্ষকদের শাস্তি ফাঁসি হওয়া উচিত।

শুধু তাই নয় সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া নারী ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার দাবি করেছেন প্রবাসে বসবাসরত ৫০টি দেশের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। 

অশব্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে। কারন তিনি মনে করেন, আইন করা হয় মানুষের জন্যই। জনগণের পক্ষ থেকে যেহেতু ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার বিষয়ে দাবি উঠেছে, সেহেতু এটা সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে।

'অপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ চাই' আন্দোলনের প্রতিষ্টাতা-চেয়ারম্যান ও 'ক্রাইম প্রতিদিন' এর সম্পাদক এ জেড এম মাইনুল ইসলাম পলাশ মনে করেন শুধু ধর্ষণের শাস্তি লিঙ্গ কর্তন, মৃত্যুদণ্ড কিংবা ক্রসফায়ার হলেই যে ধর্ষণ মুক্ত বাংলাদেশ হবে তা কিন্তু নয়, পাশাপাশি প্রেম-ভালোবাসার নামে অবাদ মেলামেশা ও পরকিয়া বন্ধে আইন ও শাস্তি জরুরী। কারন তিনি মনে করেন বেশির ভাগ ধর্ষণই তথাকথিত প্রেম নামক শব্দ থেকে উৎপত্তি। প্রেম চলে প্রকাশ্যে। ধর্ষণ চুপিসারে, অতি গোপনে। 

তিনি আরও বলেন নারী-পুরুষ উভয়ের সম্মতিতে যে যৌনাচার ঘটে সেটার নাম প্রেম। আর নারীর অসম্মতিতে জোর-জবরদস্তিমূলক যে যৌনাচার ঘটে সেটা ধর্ষণ। দেশে বর্তমানে যত ধর্ষন হচ্ছে তার ৯৫% বিকৃত প্রেম ভালোবাসা‌র নামক শব্দ দিয়ে শুরু, আর বাকি ৫% ধর্ষণ জোর-জবরদস্তিমূলক, নেক্কারজনক। সুতারাং ধর্ষণ মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে প্রেম-ভালোবাসার নামে অবাদ মেলামেশা ও পরকিয়া বন্ধে আইন ও শাস্তি জরুরী।