• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ৯ অক্টোবর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

মূল্য নির্ধারণের পরও লাগামহীন চালের বাজার

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন মিলগেটের (বৃহৎ আড়ত) মতো পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খবরটি বেশিরভাগ ব্যবসায়ী জানেন না। এ কারণে কোনও বাজারেই নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি হচ্ছে না। তাই এখনও চালের বাজার লাগামহীন। রাজধানীতে চালের পাইকারি ও খুচরা বাজার থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি কেজি উৎকৃষ্টমানের মিনিকেট চাল ৫১ টাকা ৫০ পয়সা করে ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৫৭৫ টাকা এবং মাঝারি মানের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৪৫ টাকা দরে ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার আব্দুল গণি সড়কে খাদ্য ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত চালকল মালিক, পাইকারি ও খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে কৃষি বিপণন অধিদফতর চালের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দেয়। সংস্থাটির মহাপরিচালক মোহম্মদ ইউসুফ  এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মিলগেটে প্রতি কেজিতে নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত ২ টাকা বাড়িয়ে পাইকারি এবং পাইকারি পর্যায় থেকে প্রতি কেজিতে আরও আড়াই টাকা বাড়িয়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে উৎকৃষ্টমানের মিনিকেট প্রতি কেজি ৫৩ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করবেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করতে পারবেন ৫৬ টাকা কেজি। একইভাবে পাইকারি বাজারে মাঝারি মানের মিনিকেট বিক্রি হবে কেজিতে ৪৭ টাকা এবং খুচরা বাজারে তা ভোক্তার কাছে বিক্রি করা যাবে প্রতি কেজি ৪৯ টাকা ৫০ পয়সায়।

এরপরও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে। কারণ মিলগেটে দাম নির্ধারণের খবর ব্যবসায়ীদের কানে গেলেও পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের বিক্রয়মূল্য ঠিক করে দেওয়ার খবর তাদের অধিকাংশই জানেন না। এ কারণে কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন বলেন, ‘মিলগেটে নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত ২ টাকা খরচ হয়ে থাকে আমাদের। এর সঙ্গে প্রতি কেজিতে ১ টাকা হোক আর ৫০ পয়সা হোক মুনাফা তো আমাদের করতে হবে। এটুকু লাভ না করলে খাবো কী? কাজেই পাইকারি পর্যায়ে চাল প্রতি কেজি ৫৪ টাকার কম দামে বিক্রি করলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। সরকার তথা খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়কে এটা বুঝতে হবে।’

খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা অনৈতিক কোনও মুনাফা করেন না। কোনাপাড়া বাজারের রহিম জেনারেল স্টোরের মালিক আবদুর রহিমের মন্তব্য, পাইকারি বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি হয় না। তিনি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে উল্লেখ করেন, ‘আমরা বাদামতলী পাইকারি বাজার থেকে যে দামে চাল কিনে আনি, তার সঙ্গে পরিবহন খরচ ও মুনাফাসহ প্রতি কেজিতে সর্বোচ্চ ৩ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করি। সরকার নির্ধারিত দামে পাইকারি বাজার থেকে চাল কিনতে পারলে আমাদের সেই অনুযায়ী বিক্রি করতে তো সমস্যা নেই।’

এ প্রসঙ্গ কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও বাজারে পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি না হলে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। তার মুখে শোনা গেলো, ‘এক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সঙ্গে পরামর্শ করে চালের বাজারে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হতে পারে।’

নির্ধারিত দামের বেশি মূল্যে চাল বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারির পরও বাজারে এর কোনও প্রতিফলন নেই। মোটা চালের অনুপস্থিতিতে সব ধরনের চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪-৬ টাকা। ৫৬ টাকা কেজি মিনিকেট বা নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা কেজি। পর্যাপ্ত উৎপাদন, যথেষ্ট মজুদ ও সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি না থাকার পরও চালের মূল্যবৃদ্ধিতে সরকার বিব্রত।