• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৩ অক্টোবর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

দায়সারার আইনের পরিবর্তন দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ হবে না

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

 সারাদেশে ধর্ষণ এবং নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে চলমান ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ আন্দোলনের পক্ষ থেকে আজ ১৩ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় শাহবাগে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রিসভায় “ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যদণ্ড” এমন দায়সারা আইন পাশের প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন প্রিন্স, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় নেতা রহমান মফিজ, আরিফ নূর প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে ঠিক সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় দাঁড়িয়ে জনগণের সামনে “ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যদণ্ড” এমন দায়সারা সিদ্ধান্ত নিয়ে এসে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করছে। ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এটা কোনো সমাধান না, বরং অনেক ক্ষেত্রে এই আইন ভুক্তভোগীর জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এই আইন কার্যকর হলে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য ধর্ষক ধর্ষণের আলামত মুছে ফেলতে চাইবে৷ এ কারণে সে ভুক্তভোগীকে মেরেও ফেলতে পারে। শাস্তির মাত্রা বাড়ানোর চাইতে অপরাধ প্রমাণ করার জন্য যেসব বাধা আছে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সেগুলো দূর করা।
ভুক্তভোগী যেন ন্যায়বিচার পান, সে পথটিই সুগম করা। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা এবং অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর শাস্তি কার্যকর করা। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙা না হলে শাস্তির মাত্রা যাই হোক না কেন ভুক্তভোগী বিচার পাবেন কিনা সেটা অনিশ্চিতই থেকে যায়।
 
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আমাদের দেশে একশোটা ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে মাত্র তিনটা ঘটনার বিচার হয়। অধিকাংশ ঘটনা বিচার প্রক্রিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারেনা৷ এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং আইনি ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় যে অসংখ্য অসঙ্গতি ও জটিলতা আছে তা দূর করার পথে না হেঁটে সরকার যে মূলা ঝুলানোর রাজনীতির আশ্রয় নিচ্ছে, সেটা কোনোভাবেই ধর্ষণের সংস্কৃতি দমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে না৷ 
সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ এবং সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতাকর্মীরা দেশের সব জায়গায় যে অপরিসীম ক্ষমতার চর্চা করে, তার সামনে দাঁড়িয়ে একজন ভুক্তভোগীর পক্ষে বিচার চাওয়া কঠিন। এই সাহস যদি কোনো ভুক্তভোগী করেও ফেলে, তারপর শুরু হয় পুলিশ বাহিনীর অসহযোগিতা ও খারাপ আচরণ। এই সবকিছু পার করে যদি কোনো ভুক্তভোগী আদালত পর্যন্ত পৌঁছায়ও সেখানে তার নিজের চারিত্রিক পবিত্রতা প্রমাণ করতে হয়৷ গ্রামীণ সালিশে যেভাবে ভুক্তভোগীকে দোররা মারা হয়, সেই একই কায়দায় আমাদের দেশের আদালতেও ভুক্তভোগীকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এই ধরনের কাঠামোতে একজন ভিক্টিমকে একবার না, বারবার নীপিড়িত হতে হয়৷ আইন ও বিচারিক প্রক্রিয়ার এই সমস্ত অসঙ্গতি পরিবর্তন না করে শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ডের বুলি আওড়ায়ে এই আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না৷ 

এইবারের আন্দোলন শুধু একটা, দুইটা কিংবা তিনটা ঘটনার বিচার আদায়ের জন্য নয়, এইবারের আন্দোলন দেশ থেকে ধর্ষণের সংস্কৃতিকে সমূলে উৎপাটনের আন্দোলন। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমান দৃশ্য আমাদের সবার সামনেই পরিষ্কার। আমরা দেখছি, যখন ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন চলছে, তখনও ধর্ষণের ঘটনা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে এবং একইসঙ্গে আমরা দেখলাম সিলেটে ১০ হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় বাংলাদেশের একজন নাগরিককে পুলিশ ফাঁড়িতে পিটিয়ে হত্যা করা হলো।

বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কথা ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কিন্তু আমাদের এই মন্ত্রণালয় এবং এর মন্ত্রী উভয়েই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা চাই, জনগণের সম্মুখে সরকার এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করবে এবং ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে অপসারণ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অনিক রায় বলেন, ৯ দফার আন্দোলন তা আমরা চালিয়ে যাব এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আগামী ১৬ ও ১৭ অক্টোবর ঢাকা শাহবাগ থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে পূর্ব ঘোষিত লংমার্চ আমরা অনুষ্ঠিত করব। আমরা শাহবাগ, গুলিস্তান, চাষাড়া, সোনারগাঁও, চান্দিনা, কুমিল্লা, ফেনী, দাগনভুঞা, চৌমুহনী, একলাসপুর হয়ে মাইজদীতে আমাদের শেষ সমাবেশ অনুষ্ঠিত করব। আমরা সারা বাংলাদেশের মানুষকে ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা একত্রে নিশ্চয়ই যেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশে জেঁকে বসেছে তা দূর করতে পারব।