• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৪ অক্টোবর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

একাধিক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক শিক্ষা কর্মকর্তার

ক্রাইম প্রতিদিন ডেস্ক

 বগুড়ায় শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক, যৌতুক দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন করা, প্রাইমারি স্কুলের প্রশ্নপত্র ফাঁস, জুয়ার আসরে বসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন সাবেক স্ত্রী শিউলি সুলতানা। এসব অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এ মামলাটি দায়ের হয়েছে।

শিউলি সুলতানা বলেন, ‘আমি নিজে সাক্ষী, আমার সামনে সে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিক্রি করেছে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের সাথে প্রতারণা করে অবৈধ সম্পর্ক করা তার পেশা। কিছুদিন আগে একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকাকে এভাবে বিয়েও করেছিল এই শিক্ষা কর্মকর্তা। তার মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখলে অসংখ্য অপরাধের আলামত মিলবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার কাহালু উপজেলার আয়রা গ্রামের বাসিন্দা এই মোফাজ্জল হোসন। বর্তমানে তিনি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। সম্প্র্রতি তার বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলা করেছেন তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী শিউলী সুলতানা। বগুড়ার কাহালু আমলি আদালত, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-০২ এ মামলাটি করা হয়েছে।

২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ও ৪ ধারায় দায়ের করা ওই মামলা সূত্রে জানা যায়, শিউলী সুলতানার সঙ্গে ১৯৯৮ সালে মোফাজ্জল হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় শিউলীর পরিবার থেকে ছয় ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং এক লাখ টাকা উপঢৌকন হিসেবে দেওয়া হয়। তাদের বিবাহিত জীবন ভালোই চলছিল। এর মধ্যে তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তানও জন্ম নেয়। কিছুদিন পর থেকে নতুন করে যৌতুক চেয়ে স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন মোফাজ্জল। বিয়ষটি শিউলী তার বাবাকে জানান। বাবা অনেকবার মোফাজ্জলকে বোঝালেও কাজ হয়নি। এর মধ্যে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে স্ত্রী শিউলীকে দেখিয়ে তিনি বলতেন, ‘যৌতুকের টাকা না দিলে আমি বিয়ে করব। অনেক সুন্দরীরা আমার জন্য বসে আছে।’

এভাবে শিউলীকে মানসিক নির্যাতন চালাতেন। চলে শারীরিক নির্যাতনও। এক পর্যায়ে ২০০৭ সালের শেষের দিকে মোফাজ্জল রিক্তা নামের একজন প্রাইমারি শিক্ষিকাকে বিয়েও করেন স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই। কিছুদিন পর মোফাজ্জল দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছেও যৌতুক দাবি করতে থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে এক পর্যায়ে সম্পর্কের অবনতি হলে মোফাজ্জল রিক্তাকেও তালাক দেন। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করার পর শিউলী নারী শিশু আইনে তখনও একটি মামলা করেছিলেন। দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর সেই মামলা নিষ্পত্তি হয়।

সম্প্র্রতি আবারও পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক চেয়ে শিউলীর ওপর নির্যাতন শুরু করেন মোফাজ্জল। এক পর্যায়ে শিউলীকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তিনি। শিউলী বাবার বাড়িতে চলে যান। শিউলীর বাবা বিষয়টি মিমাংসার জন্য মোফাজ্জল, তার বড় ভাই এবং পাড়ার লোকজন নিয়ে বসলে সেখানেও তিনি টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে শিউলীর বাবা কিছুদিন সময় চেয়ে টাকা দিতে রাজিও হন। কিন্তু মোফাজ্জলের কথা বৈঠকেই পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। সেই টাকা দিতে না পারায় মাসখানেক আগে শিউলীতে তালাক দেন মোফাজ্জল। তিনি এখন তৃতীয় বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান শিউলী সুলতানা। সঙ্গত কারণেই বাধ্য হয়ে শিউলী মোফাজ্জলের বিচার চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।

এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘এসব সাজানো নাটক। আমি আমার শ্বশুরের জমি ক্রয় করার জন্য টাকা দিয়েছি। কিন্তু তিনি আর পরে জমি লিখে দেননি। সেই টাকা ফেরত চাইলে তারা নানা ধরনের মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে।’ তিনি প্রশ্ন ফাঁস এবং নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িত নন বলেও দাবি করেন।