• ❐ www.crimeprotidin.com ❐ ৮ম বর্ষ ❐ ঢাকা ❐ ১৫ অক্টোবর, ২০২০ ❐ dailycrimeprotidin@gmail.com ❐

নারীদের জান্নাতে যাওয়া সহজ

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

ইসলাম নারীদের সম্মানের মুকুট পরিয়েছে। একসময় তাদের গণ্য করা হতো ভোগের বস্তু হিসেবে। পবিত্র কোরআন এসে তাদের সেই ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা ভেঙে দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, মনঃকষ্টে তাদের চেহারা কালো হয়ে যায়। তাদের যে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তার কারণে তারা নিজ সম্প্রদায়ের লোক থেকে মুখ লুকিয়ে রাখে। তারা ভাবে এই সন্তান রাখবে, নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে। সাবধান! তাদের  সিদ্ধান্ত কতই না নিকৃষ্ট।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে, আর সে তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছে, তাদের নিজের জন্য অসম্মানের কারণ মনে করেনি, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১২)

যে কন্যাসন্তানকে মানুষ বিপদের কারণ মনে করত, সেই কন্যাসন্তানকে ইসলাম এসে জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম বানিয়ে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ইসলাম নারীদের জন্য জান্নাতে যাওয়া সহজ করে দিয়েছে। নিম্নে এমন কিছু কাজ তুলে ধরা হলো যেগুলোর মাধ্যমে নারীরা খুব সহজে জান্নাতে যেতে পারবে।

তাকওয়া : শুধু নারীই নয়, একজন মানুষকে তার জীবন ইসলামের রঙে রাঙিয়ে তুলতে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। যার মধ্যে তাকওয়া নেই সে যেকোনো সময় পথভ্রষ্ট হয়ে যেতে পারে। রাসুল (সা.) স্বীয় স্ত্রীকে বলেন, ‘হে আয়েশা, তোমার জন্য আবশ্যক হলো খোদাভীতি অর্জন করা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৯৭৮)

পাপ পরিহার করা : নারীরা যেহেতু ঘরে থাকে, পর্দার আড়ালে থাকে, সারাক্ষণ সংসার নিয়েই ব্যস্ত থাকে, তাদের পাপ হওয়ার সুযোগ কম। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলোকে অনেক হালকা মনে করা হয়, অথচ এগুলো হালকা নয়। নারীদের বেশির ভাগ জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে এই বিষয়গুলো। যেমন অনেকের মধ্যে অন্যের বিষয় নিয়ে চর্চা, মিথ্যা বলার অভ্যাস দেখা যায়। রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে তাঁর উম্মতদের সতর্ক করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, বিশাল একটি হাদিসের একাংশে উল্লেখ আছে, ...সাবধান! তোমরা মিথ্যাচার থেকে দূরে থাকো। কেননা মিথ্যাচার দ্বারা না সফলতা অর্জন করা যায়, না অর্থহীন অপলাপ থেকে বাঁচা যায়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৬)

অনেক নারীর মধ্যে পরশ্রীকাতরতা ও হিংসার প্রবণতা দেখা যায়। একজন নারী সহজে জান্নাতে যেতে হলে তা পরিহার করতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। ধারণা বড় মিথ্যা ব্যাপার। তোমরা দোষ তালাশ কোরো না, গোয়েন্দাগিরি কোরো না, পরস্পর হিংসা পোষণ কোরো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ কোরো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হয়ো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৪৫)

বর্তমান যুগে নারীদের মধ্যে এ ধরনের অভ্যাস প্রকোপ আকার ধারণ করে বিভিন্ন টিভি সিরিয়ালের কারণে, তাই একজন নারীর জন্য এগুলো পরিহার করা আবশ্যক। এ ছাড়া নারীরা আমল নষ্টকারী গুনাহগুলো ত্যাগ করার মাধ্যমেও সহজে জান্নাতে যেতে পারে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে আয়েশা, আমল বিনষ্টকারী বিষয় (ছোট গুনাহ) থেকে বেঁচে থাকো। কেননা আল্লাহ তা প্রত্যাশা করেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৩৮৪)

সহজ কিছু আমল : এ ছাড়া রাসুল (সা.) নারীদের জন্য এমন কিছু আমল বাতলে দিয়েছেন, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে তারা খুব সহজে জান্নাতে যেতে পারবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানে রোজা রাখে, আব্রু রক্ষা করে, স্বামীর নির্দেশ মান্য করে, তবে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪১৬৩)

স্বামীকে ভালোবাসা : মহান আল্লাহ সেই নারীদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না, যারা স্বামীকে ভালোবাসে না। স্বামীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না। স্বামী ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করার পরও তাদের মনে স্বামীর প্রতি বিদ্বেষ থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সেই নারীর প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না, যে স্বামীর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না। অথচ সে তার প্রতি মুখাপেক্ষী।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৯০৮৭)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদা) রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন নারী উত্তম? তিনি বললেন, যার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে সে স্বামীকে সন্তুষ্ট করে। সে আদেশ করলে তার আনুগত্য করে, এবং (স্ত্রী) নিজের ব্যাপারে ও তার ধন-সম্পদের ব্যাপারে যা অপছন্দ করে এমন কাজ করে তার বিরোধিতা করে না। (নাসায়ি, হাদিস : ৩২৩১)

তাই বলা যায়, নারীদের জন্য জান্নাতে যাওয়া সহজ।